‘হাতের লেখা খারাপ যাদের, কৌশলগুলো অস্ত্র তাদের’

“মা তুমি সাইন্স পড়লে না কেন?” এতটুকু শুনতেই বুঝেছিলাম আমার বাংলার শিক্ষক সায়েম স্যার আমাকে ডাক্তার হবার কথা বলছেন। না, মেধার জন্য না- হাতেরলেখার জন্য। এইচ.এস.সি পরীক্ষার টেস্টের খাতায় আমার ‘৫’ লেখা দেখে মা বলেছিল, “ওয়ালে বিজ্ঞাপন লেখা লোকগুলোও এর চেয়ে সুন্দর লেখে” । বান্ধবী রাইসা আমাকে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে থাকতেও খাতার পেছনে নিয়মিত হাতেরলেখা প্র্যাকটিস করাত। স্কুল পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। তাও খুব একটা উন্নতি হয় নি। ১৫ বছর ধরে লিখে আসা এই ফর্মে পরিবর্তন আনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অবশ্য পরিবর্তন করবই বা কেন? আমার হাতেরলেখাই আমার ট্রেডমার্ক!

তবে আশার কথা হল, ‘এই’ হাতেরলেখা নিয়েও মোটামোটি ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। নিচের ১০টি নিয়ম অনুসরণ করেই হবে এই মিরাকল (আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে)! মূল লেখায় যাবার আগে বলে রাখা ভালো যে, কোন অলৌকিক শক্তির বলে এটা হয়নি; হয়েছে অত্যন্ত সহজ কিছু কৌশল অবলম্বন করে। গুরুত্ব অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে কৌশলগুলো তুলে ধরছি। আশা করি আসন্ন বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা(আমার মত যারা) একটু হলেও উপকৃত হবে। ২-৩ মাসে হাতেরলেখা ‘পরিবর্তন’ সম্ভব না, তবে এই কৌশলগুলো অবলম্বন করে কিছুটা রক্ষা পাওয়া কিন্তু সম্ভব!

(১)জায়গা রাখুনঃ

জায়গা রাখুন- পাশের আসনে বন্ধুর জন্য নয়, ‘শব্দ থেকে শব্দ’ এবং ‘লাইন থেকে লাইনের’ মাঝে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ। হাতেরলেখা যতই খারাপ হোক, শিক্ষক যেন আপনার লেখা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন।

(২) আকর্ষণীয় মার্জিনঃ

আপনার খাতার পুরো নকশাই বদলে দিতে পারে একটি সুন্দর মার্জিন। এজন্য ব্যবহার করতে পারেন নীল রঙের সাইন-পেন। অথবা, পেন্সিল/ নীল কালি দিয়েই মার্জিন টানুন তবে পাশাপাশি দুটো দুটো করে দাগ দিন।

(৩) নীলের স্পর্শঃ

একটু কষ্ট করে হলেও, অবশ্যই আপনার লেখাতে দুই রঙের কালি ব্যবহার করে লিখুন। শিক্ষকরা অনেক অনেক খাতা মূল্যায়ন করেন। তাই পুরো লেখা পড়ে দেখার ধৈর্য তাঁদের থাকে না। এখানেই সুযোগ পেয়ে যায় সুশ্রী হাতেরলখার অধিকারী মানুষগুলো। আপনার লেখাটিও যেন এর মধ্যে সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়, তাই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ/বাক্যগুলো নীল কালি দিয়ে লিখুন যেন শিক্ষক অন্তত এটুকু বুঝেন যে আপনি ‘কিছু তো একটা’ লিখেছেন!

(৪) দাগ দিনঃ

একবার কালো কলম, একবার নীল কলম, এরপর আবার কালো কলম – এভাবে লিখতে অসুবিধা বোধ করলে একটানে কালো কালিতে লিখে যান। লেখা শেষ করে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ/বাক্যগুলোর নিচে নীল কালি দিয়ে দাগ টেনে দিন।

(৫) (‘’) এর ব্যবহারঃ

হয়ত খেয়াল করেছেন যে কয়েকটি শব্দ আমি (‘’) এই চিহ্নটির মাঝে লিখেছি। হাতেরলেখা খারাপ হওয়ার সুবাদে শিক্ষক বিরক্তি নিয়ে আপনার খাতা দেখবেন। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ লেখা গুলো হয়ত তাঁদের চোখে পড়বে না। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন পুরো লেখা না পড়লেও, প্রধান পয়েন্টগুলো তাঁদের চোখে পড়ে।

(৬) পয়েন্ট করে লিখুনঃ

পয়েন্ট ব্যবহার করে লিখুন। এতে করে আপনার লেখাটা যেমন গঠনমূলক হয়, তেমনই আপনার যুক্তিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ফুটে উঠে।

(৭) অনুচ্ছেদ করুনঃ

অর্থাৎ, ইংরেজিতে যেটাকে বলে ‘প্যারা’ করে লেখা। কিছু কিছু বিষয়, যেমনঃ বাংলা ১ম ও ২য় পত্রতে পয়েন্ট করে লেখা যায় না। সেই ক্ষেত্রে আপনি এক একটি অনুচ্ছেদ আকারে আপনার মতামতগুলো উপস্থাপন করতে পারেন।

(৮) উদাহরণ দিনঃ

আপনার লেখার মূল্য ততই ভারী হবে আপনি যতই তাতে উদাহরণ দিতে পারবেন। আপনি যে বিষয়টি ‘বুঝে’ লিখেছেন তা আপনার দেওয়া উদাহরণেই ফুটে উঠে।

(৯) কলম ধরার নিয়মঃ

কলমটি হালকা করে ধরে লিখুন।অনেককেই দেখা যায় অনেক শক্ত করে কলম ধরেন, অথবা অনেক জোর প্রয়োগ করে লিখে থাকেন। এটি হাতেরলেখা খারাপ হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। তাই কলমটিকে হালকা করে ধরতে শিখুন এবং অল্প জোর প্রয়োগ করুন।

(১০) একটানে ভুল সংশোধনঃ

কোন শব্দ বা বাক্য ভুল হলে সেটাকে হিবিজিবি করে না কেটে, শুধু একটি হালকা দাগ দিয়ে কেটে দিন। আবার বলছি, শুধু ‘একটি’ দাগ; একটি ‘হালকা’ দাগ। আপনার কাটাকাটির অংশটি যেন প্রাধান্য না পায় কোনভাবেই!

সবশেষে বলতে চাই, ভালোর কোন শেষ নেই। আর ভালো করার পূর্বশর্ত হল অনুশীলন। নিয়মিত অনুশীলন করে একটু উন্নতি আনা সম্ভব হবে নিশ্চয়! তাই এই টেকনিকগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন করবে বলেও আশা রাখছি। সবার জন্য শুভ কামনা!



মন্তব্য চালু নেই