‘হাঙ্গেরি সুন্দর দেশ, নাতিদের এখানে পড়তে পাঠাবো’

এটি ছিলো বাংলাদেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাঙ্গেরির কোনও প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক। কূটনীতির ভাষায় যে বলা হয়, বৈঠক অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে, দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হয়েছে, সেগুলো এই বৈঠক নিয়েও বলা হয়েছে।

তবে, হাসিনা-ওবরান বৈঠক ছিলো তারও চেয়ে ভিন্ন কিছু। মাত্র তিন দিনের বুদাপেস্ট সফরে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীকে দেখা গেছে একে অপরের দেশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন, একে অপরের নেতৃত্বের জয়গান গাইছেন।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে হাঙ্গেরি কতটা দূরের দেশ সে প্রশ্ন আর নয়, আমরা এখন হৃদ্যতায় অনেক কাছাকাছি দুটি দেশ।

আর ভিক্টর ওবার বলেছেন, বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনা আজ বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো দেশটির এই অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে। হাঙ্গেরি তার সকল দক্ষতা, অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

ভিক্টর ওবরানকে বাংলাদেশে নিমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি শিগগিরই আপনাকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে চাই।

একটি বক্তৃতায় তার এই নিমন্ত্রণের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা জানান, তার নিমন্ত্রণে ভিক্টর ওবরান বলেছেন, বাংলাদেশ অনেক দূরে। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, হতে পারে মাইলের গণনায় অনেক দূরের কিন্তু আমরা এখন হৃদ্যতার দিক থেকে অত্যন্ত কাছের। ওবরানকে বলেছি, আমাদের দেশে আসুন, আপনার ভালো লাগবে।

অন্তত দুটি অনুষ্ঠানে হাসিনা-ওবরান সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে দুটি থেকে তারা নিজেরাই তুলে প্রকাশ করেছেন দুই দেশের সম্পর্ক কতটা উচ্চতায় পৌঁছেছে।

ভিক্টর ওবরান শুরু থেকেই ছিলেন শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উভয় কর্মসূচিতেই তিনি বলেছেন, আমাদের মাঝে আজ খুবই ব্যতিক্রমী এক অতিথি এসেছেন, বিশ্বে আমরা খুব কমই পাই এমন সহসী নারী নেতৃত্ব, আমি মনে করি তিনিই বিশ্বের আজ সবচেয়ে সাহসী নারী। এই নারী ও তার পরিবার তাদের দেশের জন্য সব কিছু করেছেন।

আর এই প্রশংসায় বিনয়াবনতা শেখ হাসিনা বলেন, আপনি উদার, তাই প্রশংসায় যে উদারতা দেখিয়েছেন আমি তাতে ধন্য।

নেতৃদ্বয়ের এই পরস্পর পরস্পেরর প্রতি শ্রদ্ধা মুগ্ধ করেছে দর্শককে।

বাংলাদেশের প্রশংসাও করছিলেন ওবরান। তিনি বলেন, বিশ্বে আজ অনেক কিছুই পরিবর্তিত। সারা বিশ্বেরই কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে। হাঙ্গেরিতেই পাল্টে গেছে অনেক কিছু।

আর বিশ্বের নেতারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছে আরেকটি দেশের পরিবর্তন সেটি বাংলাদেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে অব্যাহত উন্নয়ন ঘটছে।

৭ শতাংশ যার প্রবৃদ্ধির হার। বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনা আজ বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো দেশটির এই অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে।

হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাঙ্গেরির কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, শিক্ষাসহ যেসব খাতে আমাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, প্রযুক্তি রয়েছে সেসব খাতে বাংলাদেশকে আমরা সহায়তা করতে পারি।

এই সফর কালে হাঙ্গেরি সরকার বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও কৃষি শিক্ষায় প্রতি বছর বাংলাদেশের ১০০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে বলে জানায়।

যা বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও দেশ গড়ে তোলার জন্য একটি অনন্য সহযোগিতা বলেই ব্যাখ্যা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এই দেশে পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে এটি একটি অনেক বড় পাওয়া। ইংরেজি মাধ্যমেই তাদের পড়ার সুযোগ থাকবে।

তিনি এসময় আরো বলেন, দেশটি অনেক সুন্দর। আমি আমার নাতিদেরও এখানেই পড়তে পাঠাবো।

হাঙ্গেরিকে ব্যবসা করার নতুন ক্ষেত্র বলেও চিহ্নিত করে দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য বলেন, আর আমেরিকা-আমেরিকা না করে এবার এসব দেশে ব্যবসা করুন। বিশেষ করে যে দেশটি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে ছিলো, রাজনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে গেছে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটি হবে ভিন্নরকম।

এই দেশ ইউরোপের প্রথম কয়টি দেশের একটি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। হাসিনা বলেন, আমাদের এমন আরও অনেক বন্ধু রয়েছে যাদের এখনও আমরা ব্যবসায়িক সম্পর্কের দিক থেকে আবিস্কারই করতে পারিনি।



মন্তব্য চালু নেই