হাওয়ায় ওড়া ট্রেন

ট্রেনও আজকাল হাওয়ায় উড়ছে। বাংলাদেশে এ ধরনের ট্রেন নেই। তবে বিশ্বের অনেক দেশে ট্রেন এত দ্রুত গতিতে ছোটে, যা ক্ষেত্রবিশেষে বিমানকেও হার মানাচ্ছে। ঝম ঝম ছন্দ করে চলা ট্রেন এখন প্রযুক্তির আশীর্বাদে সাই করে চোখের সামনে দিয়ে যেন উড়ে যায়।

একটুখানি ভূমিকা দিয়েই হাওয়ায় ওড়া ট্রেন সম্পর্কে জানাব। যুক্তরাষ্ট্রে যখন তুমুল হট্টগোল, বিতর্ক চলছে দ্রুতগতির ট্রেন চালু করা উচিত কি না, তখন এশিয়া এবং ইউরোপে ব্যাপক বিক্রমে প্রায় পাঁচ দশক ধরে চালু রয়েছে দ্রুতগতির ট্রেন। মজার ব্যাপার হলো- এক্ষেত্রে ইউরোপের চেয়ে এশিয়া দারুণভাবে এগিয়ে।

জাপানের গণপরিবহনের ‘ব্লাড লাইন’ বলা হয়ে থাকে আধুনিক ম্যাগলেভ ট্রেনকে। ম্যাগনেটিক ও লেভিটেশন শব্দ দুটিকে সংক্ষেপে ম্যাগলেভ বলা হয়। ম্যাগনেটিক মানে ‘চুম্বকীয়’ এবং লেভিটেশন মানে ‘হাওয়ায় ওঠা’। ম্যাগনেটিক লেভিটেশন ট্রেন মানে চুম্বকীয় ব্যবস্থায় হাওয়ায় উড়ে চলা ট্রেন। লাইনের সঙ্গে চুম্বকীয় ব্যবস্থা থাকে, যার সাহায্যে লাইন স্পর্শ না করেই কিছুটা ওপর দিয়ে ছুটতে থাকে ম্যাগলেভ ট্রেন।

এই লেখায় আমরা দ্রতগতির পাঁচটি ট্রেন সম্পর্কে জানাব, যা নিঃসন্দেহে আপনাকে ভাবতে সাহায্য করবে, আমাদের দেশে এ ধরনের ট্রেন থাকলে কেমন হতো? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১। ৫৮০ কিলোমিটার গতির জাপানি ট্রেন

প্রতি ঘন্টায় ৩৬১ মাইল বা ৫৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এই ট্রেনটি! চৌম্বক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ঘর্ষণ বিহীনভাবে চলে, যার নাম ‘ম্যাগলেভ এমএলএক্স ১’। বর্তমানে টোকিও থেকে ওসাকাসহ দেশের সাতটি নেটওয়ার্কে এই ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। জাপানের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বলা হয় এটিকে।

২। ৫৭৫ কিলোমিটার গতির ফরাসি ট্রেন

ফ্রান্সের প্যারিস থেকে পূর্ব ফ্রান্স হয়ে দক্ষিণ জার্মানি পর্যন্ত বিস্তৃত চাকার উপর চলা এই ট্রেন সার্ভিসটি ইউরোপের সবচেয়ে দ্রুত গতির ট্রেন। এর নাম টিজিভি-পিওএস। গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫৭ মাইল বা ৫৭৫ কিলোমিটার। ২০০৭ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন। চুম্বকীয় ব্যবস্থায় ট্রেন চলা শুরু হওয়ার পর ট্রেনটি তার রেকর্ড হারায়। তবে এখনো চাকায় চলা সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের রেকর্ডটি ধরে রেখেছে এটি।

৩। ৫০০ কিলোমিটার গতির চীনা ট্রেন

৩১১ মাইল বা ৫০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চলা এই ট্রেনটির যাত্রাপথ মাত্র ১৮ কিলোমিটার। সাংহাই পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পুডং-এর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত। কোনো বিরতি ছাড়া মাত্র ৮ মিনিটে এটি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। এর নাম সাংহাই ম্যাগলেভ। চীনা হাই স্পিড রেল কর্তৃপক্ষ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লোক পরিবহন করে। ভ্যাকুয়াম টানেল পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০৪৫ সালের মধ্যে ১০০০ কিলোমিটার গতির ট্রেন নামানোর পরিকল্পনা করছে চীন, যার প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে ব্যয় হবে ২২ মিলিয়ন ডলার।

৪। ৪৮৫ কিলোমিটার গতির চীনা বিস্ময়

সর্বোচ্চ ৩০২ মাইল বা ৪৮৫ কিলোমিটার গতির এই ট্রেনটি চীনের নতুন প্রজন্মের রেল ইঞ্জিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এর নাম সিআরএইচ৩৮০এ। যদিও চাকাপ্রযুক্তির ট্রেনের বিরুদ্ধে রয়েছে সমালোচনাও। ২০১১ সালে ঝিজিয়াং প্রদেশে এই জাতের উচ্চগতির দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪০ জনের প্রাণহানি ঘটে। তারপরও এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ব্যবসাসফল বুলেট ট্রেন সার্ভিস। কমার্সিয়ালি চলার সময় এটি সাধারণত ঘণ্টায় ১৮৬ মাইল গতিতে চলে।

৫। ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার চলা জার্মান ট্রেন

ঘণ্টায় ২৩৫ মাইল বা ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া এই ট্রেন জার্মানিতে ব্যাপক জনপ্রিয়। ট্রেনটি খুব ইম্প্রেসিভ না হলেও এটিই ইউরোপে চলা একমাত্র ট্রেন যেটি ফ্রান্সে তৈরি নয়। এর নাম ইন্টারসিটি এক্সপেরিমেন্ট। জার্মানির মধ্যে চলাচলকারী ইন্টারসিটি এক্সপেরিমেন্ট ট্রেনটির জার্মান নাম ডাচেস ভন, যা ১৯৯১ সাল থেকে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে।

আমাদের দেশের রেলপথ এ ধরনের দ্রুতগতির ট্রেনের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে পরিকল্পিত বিনিয়োগ করলে এবং সরকারের ইচ্ছা থাকলে, তা বায়বীয় স্বপ্নও নয়। হয়তো সেই দিন একদিন আসবেই।



মন্তব্য চালু নেই