হলমার্ক গ্রুপের হাতিয়ে নেয়া এক হাজার কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত

এক রকম অনিশ্চিতই হয়ে পড়েছে সোনালী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া হলমার্ক গ্রুপের এক হাজার কোটি টাকা আদায়। দুই বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া এই ঋণের টাকা আদায়ে আইনগত বাধা থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে কোনো বন্ধক না থাকায় কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত রয়েছে সোনালী ব্যাংক।

দৈনিক যুগান্তরের তথ্য মতে, দেশের বৃহত্তম ঋণ কেলেংকারির ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর হলমার্ক গ্রুপের এমডি, চেয়ারম্যান, সহায়ক প্রতিষ্ঠান মালিকসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করে দুদক। এতে হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। এসব মামলায় ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন আইনের ৪০৯/১০৯/৪২০/ ৪৬৫/৪৬৬/৪৬৭/৪৬৮/৪৬৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা যুক্ত করা হয়। কিন্তু অর্থ আদায়ের কোনো ধারা দুদক আইনে না থাকায় আনোয়ারা স্পিনিংয়ের কাছ থেকে ৪৭৪ কোটি টাকা ও ম্যাক্স স্পিনিংয়ের কাছ থেকে ৫২৫ কোটি টাকা আদায়ের বিষয়টি বাদ পড়ে। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংক চলতি মাসে হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে যে ১৩টি মামলা করেছে তাতে নাম নেই আনোয়ারা ও ম্যাক্স স্পিনিংয়ের।

দুদকের তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, হলমার্কের বেনামি প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন হলমার্ক গ্রুপের এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) তানভীর মাহমুদের ভগ্নিপতি। হলমার্ক গ্রুপে জাহাঙ্গীরের পোর্টফলিও হচ্ছে কর্মচারী। তিনি আশুগঞ্জ জিয়া সার কারখানার চাকরি করতেন। সাভার হেমায়েতপুরে লালন সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে হলমার্কের গাড়ির ফুয়েল কেনার স্লিপ দেয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাঙ্গীরের। জাহাঙ্গীর (৫৩) ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ থানার আড়াইসিধা গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের পুত্র। বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয়েছে নন্দখালি, তেঁতুলজোড়া, ফুলবাড়িয়া ও সাভার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর। তানভীর মাহমুদ তাকে আনোয়ারা স্পিনিং মিলের কর্ণধার বানিয়ে ব্যাংক থেকে তুলে নেন শত শত কোটি টাকা। অথচ তাকে বেতন দিতেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। অস্তিত্বহীন আনোয়ারা স্পিনিং মিলের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে হলমার্ক গ্রুপেরই কম্পাউন্ডের ভেতর।

দুদক তদন্ত থেকে আরও জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপ মেশিনারিজ, কাপড় ও সুতা কেনার জন্য সোনালী ব্যাংক শেরাটন শাখায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি করে বিপরীতে মালামাল গ্রহণ করে। সোনালী ব্যাংক পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট) ঋণ দলিল সৃজন করে নেগোশিয়েটিং ব্যাংকের কাছে ওই মালামালের মূল্য পরিশোধ করে। অথচ আসামিরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩টি মামলা করে ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতে। অর্থঋণ আদালত-২০০৩ সালের আইনে দায়ের করা মামলাগুলোতে নাম নেই আনোয়ারা স্পিনিং মিল এবং ম্যাক্স স্পিনিং মিলের। উল্লিখিত ১৩ মামলায় সোনালী ব্যাংকের দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি থেকে ১৮ কোটি টাকা। অথচ আনোয়ারা স্পিনিং মিলের কাছে সোনালী ব্যাংক শেরাটন হোটেল শাখার পাওনা ৪৭৪ কোটি টাকা। ম্যাক্স স্পিনিং মিল থেকে পাওনা ৫২৫ কোটি টাকা।



মন্তব্য চালু নেই