হরতাল-অবরোধ সংবিধান পরিপন্থী, আইজিপির চ্যালেঞ্জ

‘হরতাল-অবরোধ অবৈধ’ এই চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)একেএম শহিদুল হক বলেছেন, “বড় বড় রাজনীতিবিদরা সংবিধানের মৌলিক অধিকার নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। সংবিধানের কোথাও অবরোধ-হরতালের কথা নেই। এটা সংবিধানবিরোধী। তাই কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল এটা করতে পারে না। কিন্তু বড় বড় পলিটিশিয়ানরা মিথ্যাচার করছে। আমার সঙ্গে চ্যালেঞ্জে আসেন। সংবিধানের কোথাও যদি হরতাল অবরোধের কথা থাকে তাহলে আমি স্যালেন্ডার করবো।”

শুক্রবার জুমার নামাজের আগে রংপুরের মিঠাপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ আইনশৃংখলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।

পুলিশ প্রধান বলেন, “অনেকেই বলেন আমার বক্তব্য রাজনৈতিক বক্তব্য হয়ে যায়। আমিও তো মতামত দিতে পারি। আমিও দেশের নাগরিক। আমিও ট্যাক্স দিই। আমিও মতামত দিতে পারি। এটা আমার অধিকার।”

আইজিপি বলেন, “হরতাল অবরোধকারীরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই যুদ্ধে মিঠাপুকুরের মহিলাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।”

তিনি মহিলাদের ‘উপদেশ’ দিয়ে বলেন, “এখানে বেগম রোকেয়া মেয়েদের আলোর পথে নিয়ে এসেছে। সেই এলাকায় মহিলারা যদি মৌলবাদীদের সঙ্গে থাকেন, তাদের দোসর হযে যান এর চেয়ে দুঃখের কিছু নেই। কারণ তারা দেশই চায়নি। তারা এখনো পাকিস্তান চায়। তারা ক্ষমাও চায়নি। কেন তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। আপনাদের অনুরোধ করি, আপনাদের বিবেককে জাগ্রত করুন। তাদের কাছ থেকে সরে আসুন।”

তিনি বলেন, “আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির লেকিং আছে। সে কারণে মুক্তযুদ্ধবিরোধীরা এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাহলে কেন আপনারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে আছেন। জনগণকেই তাদের মোকাবেলা করতে হবে।”

৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন দাবি করে আইজিপি বলেন, “খালেদা জিয়া আপনি দুইবারের প্রধানমন্ত্রী। আর আপনি বললেন আমি সমাবেশ করবো। পুলিশ যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পুলিশ তো আইন মেনেই নিষেধ্যাজ্ঞা দিয়েছে। আর আপনি কিভাবে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে চান।একটা দলের প্রধান সে যদি যখন বেআইনি কাজ করেন, তখন তার কাছে আর জনগণ কী চায়। কেন সমাবেশ করবেন। ৫ তারিখে সমাবেশ করবেন কেন। তাদের ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল খালেদার সমাবেশে ষড়যন্ত্র করা হতো। ৫ মে মতো তারা অবস্থানের ষড়যন্ত্র করেছিল। খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে তারা ওই জোর করে সমাবেশ করার কথা বলতেন না। সংবিধানে লেখা আছে জোর করে সমাবেশ করা যাবে না। পুলিশকে সংবিধানে ক্ষমতা দেয়া আছে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে অনুমতি দেয়া যাবে না।”

টক শো-ওয়ালারা বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে দাবি করে পুলিশ প্রধান বলেন, “মধ্যরাতের টক শো-ওয়ালারা বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছেন। তারা বলেন, ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি দিলে তো আর অবরোধ হতো না। আসলে একমাস আগে আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। বিএনপি অনেক পরে সমাবেশের আবেদন করেছে। আমরা তাদের বলেছিলাম অন্য ভেন্যু করেন অন্য দিনে করেন। কিন্তু তারা সেটা করলো না। একই দিনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ বড় দুটি দল সমাবেশ করলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতো। সংবিধান অনুযায়ী তাই আমরা অনুমতি দিইনি। সরকার দেশপ্রেমিক। সরকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা সমাবেশ করলো না। তারা তো সরকারি দল। যদি সমবেশ করতো তা হলে আমরা কী করতে পারতাম।”

টক শো- ওয়ালাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আরে ব্যাটা, সমাবেশের অনুমতি দিলে সেখানে যদি যুদ্ধ হতো তাহলে টক শো-ওয়ালারা, আপনারা কী করতেন। দায় তো আমার ওপর পড়তো। সরকারের ওপর পড়তো।”

আইজিপি বলেন, “এসব বিষয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হয়। এসব কথায় কান দেবেন না।’ এসব কথা এজন্য বলা যে, আপনাদেরকে অনেকেই ভুল বোঝাতে পারেন। তাদের কথায় কান দেবেন না।”

বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার কে প্রতিরোধ করেছে? জনগণকে আপনারাই ভোটকেন্দ্রে আসতে দেননি। সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল। আমরাও তৈরি ছিলাম নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু আপনারাই আসতে দেননি। মানুষ পুড়িযে মেরেছেন। ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন। স্কুল কলেজ মাদরাসা জ্বালিয়ে দিয়েছেন। প্রিজাইটিং অফিসারকে মেরে ফেলেছেন।”

সরকারের পক্ষে সাফাই গেলে আইজপি বলেন, “২০০৯ সাল থেকে সাত বছরে সাত হাজার নির্বাচন হয়েছে। একটা নির্বাচন নিয়ে কি কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পেরেছেন। নির্বাচনের অবাধ নিরপেক্ষতা নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকতো তা হলে আপানারা নির্বাচনে অংশ নিতেন। তখন অবাধ নিরপেক্ষ না হলে বর্জন করতেন। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ও তাদের মদদেই আপনারা নির্বাচনে আসেননি। আপনারা নির্বাচনে না এসে ভুল করেছেন। এর খেসারত আপনাদেরকেই দিতে হবে। এর দায় কেন জনগণ নেবে। আপানারা ক্ষমতায় গিয়ে কী করবেন তা জনগণ জানে।”

ছয় বছরে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, “২০০৮ এর পরে ছয় বছরে দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা বছর মানুষ শান্তিতে ছিল। কিন্তু আবারো অশুভ শক্তিটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। আপনারা ভালো লোক দিয়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করুন।”

তিনি বলেন, “শুধু পুলিশ নয়, জনগণকেই পুলিশের ভূমিকা পালন করতে হবে। এই সরকারের আমলেই ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হবে। মিঠাপুকুরে তদন্ত কেন্দ্র করা হবে। আমরা আপনাদের পাশে আছি। অসাংবিধানিক শক্তি, জনগণের বিপক্ষের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে আর আসতে পারবে না। তাদের শক্তহাতে মোকাবেলা করা হবে।”

রংপুরের ডিসি ফরিদ আহাম্মদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহম্মেদ, বিভাগীয় কমিশনার দিলোয়ার বখত, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির।

রংপুরের এসপি আব্দুর রাজ্জাকের পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া, সেক্রেটারি জাকির হোসেন সরকার, মিঠাপুকুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, জায়গীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তোজাম্মেল হোসেন, উপজেরা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শহিদার রহমান প্রমুখ।

এসময় পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তা, বিজিবির রংপুর সেক্টর কমান্ডার, র‌্যাব-১৩ প্রধানসহ পদস্থ পুলিশ বিজিবি ও র‌্যাব কর্মকর্তারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে আইজিপি ও র‌্যাব ডিজি হেলিকপ্টারে শঠিবাড়িতে আসেন। সেখানে তারা মিঠাপুকুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতদের পরিবারের কাছে ৫০ হাজার করে এবং আহতদের ১০ হাজার করে অনুদানের টাকা দেন। পরে তারা রংপুরে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।



মন্তব্য চালু নেই