হরতাল-অবরোধে ভরসা কোচিং সেন্টার

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের।

এদিকে হরতাল-অবরোধে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও নাশকতার আশঙ্কায় সন্তানদের পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। ফলে ক্লাসের দিনগুলোতেও ফাঁকা থাকছে এ সব প্রতিষ্ঠান।

ক্লাসের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার-শনিবার ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও চলমান এসএসসি পরীক্ষা শুক্রবার-শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ দুই দিনও ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে একাডেমিক দিনপঞ্জি অনুসারে এপ্রিল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। ফলে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা ছুটছেন ম্যাবস, ই. হক, সাইফুরস, উদ্ভাসসহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর হয়ে পড়ছেন তারা।

শ্রেণীকক্ষের নিয়মিত ক্লাসে ব্যাঘাত ঘটায় কোচিং সেন্টার, গৃহশিক্ষকের মতো বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। রাজধানীর সেন্ট গ্রেগরীজ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনির হোসেনের বাবা আকবর হোসেন বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যে রেগুলারিটি হারাচ্ছে তা থেকে শিক্ষার্থীকে শিক্ষামুখী করতেই আমরা ব্যক্তিগত শিক্ষক দিয়ে পড়াই। আবার শুক্র-শনিবারের ক্লাসে ব্যাপক হোমওয়ার্ক থাকে। তাও তারা একা শেষ করতে পারে না।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা আশার মা ছাহেরা খাতুন বলেন, ‘স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না তাই কোচিং সেন্টারে মেয়েকে পড়াতে বাধ্য হয়েছি। কোচিং সেন্টার ছাড়া ক্লাসের বিকল্প পাচ্ছি না।’

ক্লাস-পরীক্ষা অনিয়মিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই কোচিংয়ে ঢুকছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষকরাও।

রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস প্রিয়া বলেন, ‘পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসছে। অনেক পড়া জমা হয়েছে। সিলেবাস শেষ করতে হলে কোচিং সেন্টারে যাওয়া ছাড়া উপায় কী? পড়ালেখা নিয়মিত না হলে পরীক্ষায় তো ভালো ফল করতে পারব না।’

রাজধানীর কদমতলীতে অবস্থিত এক কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে দুই মাস ধরে। এ সময় কোচিং সেন্টারগুলো চালু না থাকলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াই বন্ধ হয়ে যেত।’

রাজধানীর শামসুল হক খান স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চলমান অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ ক্লাস-পরীক্ষা স্থবির হয়ে পড়লেও শিক্ষাবর্ষ কিন্তু থেমে থাকবে না। ফলে কোনো অভিভাবকই তার সন্তানকে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারে না। নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করতে বাধ্য হয়েই তারা সন্তানদের কোচিংয়ে পাঠাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস বন্ধ, কিন্তু পরীক্ষা তো অনুষ্ঠিত হবে। তাই কোচিং নির্ভরতা বাড়ছে।দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই