হত্যার চক্র ভাঙার আহ্বান ইউরোপীয় দূতদের

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যার ‘চক্র’ ভাঙার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে ইউরোপীয় মিশনগুলোর প্রধানরা বলেছেন, এসব নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছেন তারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার (২২ মে) তাদের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের ‘উদ্বেগের’ কথা তুলে ধরেছেন।

এতে বলা হয়, ইউরোপীয় কূটনীতিকরা সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মানবাধিকার কর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিদেশিদের ওপর একের পর এক বর্বর হামলার বিষয়ে আলোকপাত করেন। বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিও করেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মুক্ত, সহনশীল এবং স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে রয়েছে এসব ঘটনায় তা ক্ষুণ্ন হতে পারে।’

গণতান্ত্রিক আচরণ নিশ্চিত ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান ইউরোপীয় মিশনগুলোর প্রধানরা।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায় খুন হন। গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।

এর পর একের পর এক হামলায় খুন হয়েছেন আরও কয়েকজন লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। খুন হয়েছেন খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ধর্মগুরু, সমকামী অধিকারকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও ভিন্ন মতের ইসলামি ভাবধারার অনুসারীরাও।

খুনের পর দায় স্বীকার করে আইএস ও আল-কায়েদার নামে বার্তা এলেও সরকার বারবার তা নাকচ করে দিয়ে বলেছে, দেশের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলেও বারবার বিবৃতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

খুনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে এবং ‘ঝুঁকিতে’ থাকা সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ‘সহিংসতার এই চক্র’ ভাঙার আহ্বান জানান ইউরোপীয় দূতরা।

সরকারের কাছে ইউরোপীয় দূতদের দাবি, পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হলে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে। মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বৈঠকে রাষ্ট্রদূতরা সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী, তা জানতে চান মন্ত্রীর কাছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে অংশ নেয়া দূতদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

ইউরোপীয় দূতরা আরো বলেছেন, এসকল কর্মকাণ্ডে বিশ্বের দরবারে সহনশীল ও মুক্তচর্চার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এগুলো বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়েদুনের নেতৃত্বে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ইতালির রাষ্ট্রদূতগণ এবং অন্যন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই