‘হত্যাই’ রাষ্ট্রের বিধান হলে বিচার বিভাগের প্রয়োজন কী?

ঈদের প্রাক্কালেও ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যালীলা চলছে এমন অভিযোগ করে সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপির সিনিয়র ‍যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বন্দুক যুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাই যদি রাষ্ট্রের বিধানে পরিণত হয়, তাহলে বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনের প্রয়োজন কী?’

বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের অবতারণা করেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যার কোনো কমতি দেখা যাচ্ছে না। ঈদের দু’তিন দিন আগেও চলছে নির্বিচারে হত্যালীলা। অথচ সভ্য দুনিয়ার বিধানই হচ্ছে-যত বড়ই অপরাধী হোক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীদের বিস্তৃত জাল বেরিয়ে আসা সম্ভব। ক্রসফায়ার নিয়ে নানা সংগঠন থেকে প্রতিবাদের পরও ক্রসফায়ারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। একটি বেআইনি ভয়াবহ অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রের দ্বারা আরেকটি বেআইনি অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধের মাত্রা কখনোই কমে না, বরং অপরাধ বৃদ্ধি পেয়ে আরো কদর্য রূপ লাভ করে। আতঙ্কের অনুভূতি সমাজে বিস্তার লাভ করবে। ইতিহাস জ্ঞানের অভাব রাজনীতির অঙ্গ হওয়ার কারণে ক্রসফায়ারের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।’

বিএনপি সিনিয়র এ ‍যুগ্ম মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বন্দুক যুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাই যদি রাষ্ট্রের বিধানে পরিণত হয়, তাহলে বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসনের প্রয়োজন কী?’

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘এই মূহূর্তে দোষারোপ ও বিভাজনের পুরনো পথে হাঁটলে দেশের সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী ঘটনায় উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের নির্মূল করতে কোনো পর্দা ঝুলিয়ে রাখলে সঙ্কটের মর্মমূলে পৌঁছানো যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। শর্তের কথা বলে কালক্ষেপণ করে জাতীয় ঐক্যকে বাধাগ্রস্ত করলে অশুভ শক্তিরই বাড়-বাড়ন্ত হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষা দেয়া যে এ মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি, সেটি অনুভব এবং অভিজ্ঞতার সীমানার মধ্যে আনতে হবে। আর সেটি করতে ব্যর্থ হলে ক্ষমতাসীনরা জাতির কাছে দায়ী থাকবে। কারণ তারাই ক্ষমতায়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন-অর রশিদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম পটু, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই