হঠাৎ কেন ভারতে জুকারবার্গ?

সম্প্রতি ভারতে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ থেকে শুরু করে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা, আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস ভারত সফর করেছেন।

ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও দুই দিনের ভারত সফর করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতে অনুষ্ঠিত ইন্টারনেট অর্গানাইজেশনের প্রথম সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাকারবার্গ। ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে ইন্টারনেট অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন জাকারবার্গ। এতে ফেসবুকের সঙ্গে রয়েছে এরিকসন, মিডয়াটেক, নকিয়া, অপেরা, কোয়ালকম ও স্যামসাং।

ইন্টারনেট অর্গানাইজেশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে কম দামে ইন্টারনেট সুবিধার মোবাইল ফোন গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া।

সম্মেলনে জাকারবার্গ বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুরুষের তুলনায় ২৫ শতাংশেরও কম নারী অনলাইনে আছেন। ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতাবঞ্চিত অনেক মানুষ ইন্টারনেটের বাইরে আছেন। কারণ তাঁরা এটা তাঁদের কেন দরকার, সে বিষয়টি জানেন না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের ৬৯ শতাংশ মানুষ জানে না ইন্টারনেট তাদের কী কাজে লাগবে।’

এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ইন্টারনেট অর্গানাইজেশনকে ইন্টারনেটের একটি হেল্পলাইন বা ‘৯১১ ফর ইন্টারনেট’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা।

জাকারবার্গ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ৯১১ নম্বরে কল করে যেভাবে সাহায্য চাওয়া যায়, ইন্টারনেটের জগতেও এ রকম একটি ৯১১ থাকা দরকার। আমরা সবার জন্য সামাজিক বাধা ডিঙিয়ে বিনা মূল্যে বেসিক ইন্টারনেট সুবিধা দিতে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের এই মডেল ধরে কাজ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে ৩০ লাখ মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে পেরেছি।’

ভারত প্রসঙ্গে জাকারবার্গ বলেন, ‘ভারতও এ ক্ষেত্রে তাঁদের উঠে আসার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। সবুজ বিপ্লব যেভাবে লাখ লাখ মানুষের দারিদ্র্য দূর করেছে, তেমনি কম্পিউটার বিপ্লবের কল্যাণেই অনেকগুলো দেশের মধ্যে ভারত মঙ্গলে নভোযান পাঠাতে সক্ষমতা অর্জন করেছে।’

ভারতের প্রশংসা করলেও একই সঙ্গে এখনো দেশটিতে অনেক মানুষ ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত, সে বিষয়ওটিও তুলে ধরেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের হাতেই ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে আর এ ক্ষেত্রে চাবি হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট সংযোগ হচ্ছে মৌলিক অধিকার। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। কারণ সব মিলিয়ে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছেছে। ১২০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মাত্র ২৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে; যাদের মধ্যে মাত্র ১০ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী। এখনো ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।’

কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, তারও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন জাকারবার্গ। তবে ইন্টারনেট-সংযোগ বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি খুব সহজ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করবে—এটা ধারণা করা সহজ। কিন্তু অবকাঠামো কিংবা অর্থনৈতিক বাধার চেয়েও বড় বাধা হচ্ছে সামাজিক। নিজের ভাষায় স্থানীয় ও উপযোগী কনটেন্টের স্বল্পতাও মানুষকে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখছে।

বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা দিতে ইন্টারনেট অর্গানাইজেশনের অ্যাপ্লিকেশন ওয়েবে ঢুকতে সাহায্য করবে। যেসব এলাকায় টাওয়ার বা কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছানো দুষ্কর হবে, সেসব এলাকায় সৌরশক্তিচালিত ড্রোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সুবিধা দিতে কাজ করবে ফেসবুক।

ভারতে গতকাল বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট অর্গানাইজেশন সম্মেলনে জাকারবার্গ বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং পুরো সমাজে তা প্রবাহিত করে। সমাজে সবার জন্য সেই সুযোগ তৈরি করা উচিত।

বর্তমানে জাম্বিয়ায় এয়ারটেলের সঙ্গে মিলে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে কাজ করছে ফেসবুক। এ প্রসঙ্গে জাকারবার্গ বলেন, ‘দারুণ মজার কিছু গল্প রয়েছে। সন্তানসম্ভবা এক মা তাঁর অনাগত সন্তান নিয়ে কিংবা তাঁর যত্নআত্তি বিষয়ক অ্যাপ্লিকেশন খুঁজছেন অনলাইনে। বয়স্ক একজন মানুষ অনলাইনে বই পড়ছেন। একজন শিক্ষার্থী অনলাইনে তার পড়াশোনা করছেন। উইকিপিডিয়া তথ্য জেনে সময় ও অর্থ সাশ্রয় করছেন।’

ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াতে ও স্থানীয় ভাষায় কনটেন্ট তৈরির প্রবণতা বাড়াতে নতুন উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন জাকারবার্গ।



মন্তব্য চালু নেই