হঠাৎ অরুচি জটিল রোগের সংকেত

গত কয়েকদিন থেকে কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। সকালে নাস্তা করতে গেলেও পেটটা কেমন জানি ভার ভার লাগে। অথচ রাতেও পেট ভরে আহামরি কিছুই খাওয়া হয়নি। তাহলে এমনটা লাগছে কেন?

আরো প্রশ্ন আসতে পারে হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়াটা জটিল কোনো রোগের লক্ষণ নয়তো!

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরকে সচল রাখতে জ্বালানির প্রয়োজন রয়েছে। আর এই জ্বালানির যোগান দেয় খাবার।

তাই তো অরুচি বা ক্ষুধামন্দা হলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে হজম ক্ষমতার কোনো গোলযোগ দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে হজম সম্পর্কিত শরীরের একাধিক অঙ্গ হয়তো ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। আর এটাকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নিম্নে হঠাৎ অরুচি ও ক্ষুধা মন্দার কয়েকটি কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

পেটে গ্যাস: তলপেটে ব্যথা সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যাচ্ছে। এমনটা দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই বেশি সময় পেট খালি রাখবেন না। প্রতিটি মিলের ৩-৪ ঘণ্টা পর কিছু না কিছু খাবেন।

লিভারের সমস্যা: হঠাৎ করে ক্ষুধা তো কমছেই সেই সঙ্গে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাও হচ্ছে। এমন সব লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো কোনো লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ লিভার ফাংশন ঠিক মতো না হলেই সাধারণত এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে এক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ফাঙ্গাল ইনফেকশন: ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেও ক্ষিদে কমে যেতে পারে। যেমন ধরুণ, মুখে সংক্রমণ হলে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না। ফলে অরুচি দেখা দেয়।

ভিটামিনের অভাব: শরীরে আয়রন এবং ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে এমন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই হঠাৎ ক্ষুধা কমে গেলে সময় নষ্ট না করে একটা ব্লাড টেস্ট করে নেবেন। এছাড়া ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে ক্লান্তি, কনস্টিপেশন, দাঁত থেকে রক্ত পরা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানসিক সমস্যা: মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়লে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে যেতে শুরু করে ক্ষুধাও। এক্ষেত্রে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।

অ্যানোরেক্সিয়া: অ্যানোরেক্সিয়া নামে একটি রোগের কারণেও ক্ষুধা কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে খিদে কমে যাওয়ার পাশপাশি মারাত্মকভাবে ওজন কমতে শুরু করে। আপনার ক্ষেত্রে এমনটা হলে চিকিৎসকের পরমার্শ নিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।

অবসাদ: এর কারণেও অরুচি হতে পারে। সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের কারণে অনেক সময়ই ক্ষুধা কমে যায়।

ওষুধ: কিছু ওষুধের কারণেও ক্ষুধা মন্দা হতে পারে যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক, মরফিন এবং কেমোথেরাপির ওষুধ চলতে থাকলে খাবার ইচ্ছা কমে যায়।

ক্যানসার: ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যায়। যেমন, স্টমাক ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার এবং ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত হলে এমনটা হয়ে থাকে।

অ্যালঝাইমার: এ রোগে আক্রান্ত হলেও খাবার খাওয়ার ধরনে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও মরে যায়।

এছাড়া হার্ট অ্যাটাকের কারণেও অনেক সময় ক্ষুধা কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। তাই আপনার বয়স যদি ৬৫ বছর হয় এবং ক্ষিদে কমে যেতে থাকে, তাহলে সাবধান হন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।



মন্তব্য চালু নেই