হজ-পরবর্তী সময়ে হাজিদের করণীয়

সম্পদশালী, সচ্ছল ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। সারা বিশ্ব থেকে পবিত্র নগরী মক্কায় অর্থ ব্যয় করে হাজির হওয়ার মাধ্যমেই হজ পালন করতে হয়। পবিত্র নগরী মক্কায় আসা এবং এখানের আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন ভ্রমণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মধ্যেই শুধুমাত্র হজের উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায় না বরং হজ পরবর্তী সময়েও রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ জীবন-যাপন ও আমলি জিন্দেগি। সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো-

আল্লাহ তাআলা একনিষ্ঠ একত্ববাদের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য অন্যতম সহায়ক হলো হজ। সুতরাং হজ পরবর্তী জীবন হবে তাওহিদ নির্ভর। হজ পরবর্তী এমন কোনো কাজই করা যাবে যেখানে তাঁর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ন্যূনতম সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে শিরককারীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গেও নেই।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩)

হজের পর গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনই হলো হজ কবুল হওয়ার লক্ষণ। হজের পর হজ পালনকারীদের উচিত আল্লাহর বিধি-বিধান পালনের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা। মনীষীগণ বলেছেন, হজ পরবর্তী জীবনে হজ পালনকারী তাঁর ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। পাপের কাজ থেকে দূরে থাকে।

হজ পরবর্তী সময়ে সমাজে ভালো কাজের অংশগ্রহণ বাড়ানো। অন্যায় প্রতিহত করতে বিশ্বনবির পন্থায় অবিরাম চেষ্টা সাধনা চালিয়ে যাওয়া। নিজে যেমন অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবে তেমনি অন্যকেও অন্যায় থেকে হিফাজত করতে সচেষ্ট থাকা।

হজের পর বিশেষ আমল
হজ পালনকারীর জন্য পবিত্র ভূমি থেকে দেশে ফিরেই বাড়ির নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। হাদিসে এসেছে, হজরত কাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি)

নিজ ঘরে প্রবেশ করে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাআত নামাজ পড়বে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনও দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)

সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ পালনের পর শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া বৈধ। হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন।’ (বুখারি) তবে অহংকার ও রিয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

হজ পরবর্তী সময়ে হাজি সাহেবদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, সৌজন্য সাক্ষাৎ, মুসাফাহ, কোলাকুলি করা এবং তাঁদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব। তবে ফুলের মালা বিনিময়; তাদের সম্মানে স্লোগান ইত্যাদি ঠিক নয়। এ সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

হাজিগণ সঙ্গে নিয়ে আসা জমজমের পানি লোকদের পান করানো মুস্তাহাব। অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।’ (তিরমিজি)

আন্তরিকতা ও মনের আগ্রহ ছাড়া লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যতিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে হাদিয়া-তোহফা দেয়া সুন্নাত। কিন্তু মনের আগ্রহ ছাড়া লোক দেখানো হাদিয়া বা উপহার প্রদান বৈধ নয়। যা অনেকে চক্ষু লজ্জার জন্য করে থাকেন।

পরিশেষে…
হজসহ ইসলামের সব ধরনের ইবাদাত ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে তাঁর হুকুম পালন করা জরুরি। নামাজ পড়ে বিধায় নামাজি; হজে করেছেন বিধায় হাজি ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকাও জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো ইবাদাত বন্দেগি থেকে হিফাজত করুন। হজ পরবর্তী জীবন-জিন্দেগি ও ইবাদাত-বন্দেগি আল্লাহর পথে ও মতে পরিচলনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই