স্মার্টফোনে ভ্যাট কমাতে চায় বিটিআরসি

দিন দিন স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। প্রতিবছর বেসিক মোবাইলের চেয়ে এর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব অনুযায়ী গত দুই বছরের তুলনামূলক চিত্রে স্মার্ট মোবাইল হ্যান্ডসেটের (ওএস নির্ভর অ্যাডভান্স কমিউটিং) আমদানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।

২০১৪ ও ২০১৫ সালের আমদানির হিসাবে দেখা যায়, বেসিক মোবাইল হ্যান্ডসেট (খুবই সামান্য বেসিক ফাংশন যেমন কল ও এসএমএস ইত্যাদি) আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে ফিচার হ্যান্ডসেট (স্মার্ট ফোনের মতো হলেও সীমিত ফাংশনের) আমদানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

এদিকে এ জনপ্রিয়তাকে ধরে রেখে সব মানুষের হাতে সুলভ মূ্ল্যে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিটিআরসি। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে হ্যান্ডসেটের ওপর আরোপিত কর কমানোর চেষ্টা করছে বিটিআরসি। সম্প্রতি এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তারানা হালিম।

তিনি বলেন, ‘সবার হাতে স্মার্ট মোবাইল হ্যান্ডসেট পৌঁছে দিতে এ খাতের বিদ্যমান কর কাঠামো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কর কমলে আরো সুলভ মূল্যে স্মার্টফোন কিনতে পারবে লোকজন। তাই আমাদের এমন উদ্যোগ।’

২০১৫ সালের স্মার্ট হ্যান্ডসেট আমদানি ৩৯ শতাংশ বাড়লেও এই সংখ্যা এ বছর আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা আশা করছে এ বছর স্মার্টফোন আমদানি প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়বে। এই সেক্টরের বিদ্যমান কর কাঠামোর জন্য স্মার্ট হ্যান্ডসেট তুলনামূলক বাজারে বেশি আসছে না বলে মনে করেন তিনি।

রেজওয়ানুল বলেন, ‘বাজারে আমদানি করা বেশির ভাগ হ্যান্ডসেট একটু বেশি মূল্যের। করের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে এর দাম বেশি থাকে, তাই অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের মূল দামের চেয়ে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ গুনতে হয়। বেশি সুবিধাসংবলিত স্মার্টফোনগুলো সাধারণের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

প্রতিটি সেট আমদানিতে তার মূল্যের ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ৫ শতাংশ শুল্কসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ সরকারকে দিতে হয় বলে জানান হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীরা। বিটিআরসির হিসাবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৮ কোটির মতো সিম সক্রিয় থাকে বলে ধারণা করে অপারেটররা। একই হিসাবে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার।

মোবাইল ফোন অপারেটররা জানিয়েছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৫ শতাংশের বেশি মোবাইল হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধিতে স্মার্ট হ্যান্ডসেটের প্রসার খুবই প্রয়োজন। মোবাইল হ্যান্ডসেট কর কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, এই করহার এমনভাবে নির্ধারিত করা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ স্মার্ট হ্যান্ডসেট ক্রয় করতে পারেন। মূলত সরকারের ক্ষণিকের লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি লাভের বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ বলেন, ‘শুধু মোবাইল হ্যান্ডসেট নয়, সুযোগ পেলে সবকিছু দেশে উৎপাদিত হবে না কেন? এই মোবাইল ফোন আনতে হলে ২০ শতাংশ কর দিতে হয় আর তৈরি করতে যন্ত্রপাতি নিয়ে এলে খরচ হয় ৩৭ শতাংশের বেশি। যারা মোবাইল ফোন আমদানি করে, তারা দ্রুত এ বিষয়ে আবেদন করতে পারে। যেখানে যা প্রয়োজন আমরা করব।’

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব মানিক বলেন, ‘একটি ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা দরকার। দুই বছর আগে ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ হ্যান্ডসেটে কর আরোপ করা হয় ফ্যাক্টরি হবে এই বলে, তবে তা হয়নি। হ্যান্ডসেট তৈরির জন্য কর কাঠামো কমালে আমরা এগিয়ে আসতে পারব। ৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হলে আগামী তিন বছরে আমদানিনির্ভর দেশ থেকে বের হয়ে আসব। গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো এখানে আসতে শুরু করবে। ট্যাক্স ফ্রেন্ডলি হলে দেশে সব ধরনের ব্র্যান্ড তৈরি হবে।’

স্মার্টফোনের যে ২০ শতাংশ ‘গ্রোথ’ রয়েছে, কর কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা হলে এ গ্রোথ আরো বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘বর্তমানে দেড় কোটি লোকের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। কথা বলা নয়, এই ডিভাইসে সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে। দেড় কোটি স্মার্টফোন হওয়াতে যে অগ্রগতি হয়েছে তা যদি সবার হাতে এই স্মার্টফোন তুলে দেওয়া যায় তাহলে ৭ থেকে ৮ কোটির একটি বিশাল মার্কেট হবে। এ জন্য একটি মাস্টার রোডম্যাপ দরকার, একটি নীতিমালা করা দরকার আগামী বছরগুলোতে আমরা কোন অবস্থানে থাকতে চাই।’

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উপকরণ হ্যান্ডসেট ও টেলিকম নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিস সেবা এ হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মোবাইল মার্কেট বড় হচ্ছে, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশের বেশি বর্তমানে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যত মানুষের হাতে স্মার্টফোন পৌঁছাবে, তত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করবে এবং অন্যান্য ডিজিটাল সার্ভিস ব্যবহার করার ফলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কর কমলে হ্যান্ডসেট আমদানি থেকে যে ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়, তার চেয়ে বেশি আয় হতে পারে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।



মন্তব্য চালু নেই