“স্বামী আমার ২০ বছরের বড়, জেনেই বিয়ে করেছি… “

“আপু, আমার বয়স ২২ বছর। বিবিএ ফাইনালে পড়ি। এখন ড্রপ দিয়েছি। আমি বিবাহিতা। বিয়ে হয়েছে এক বছর হয়নি। আমার স্বামী ব্যবসায়ী। আমার স্বামীর সাথে আমার বয়সের তফাৎ ২০ বছর, সেটা আমি জেনে বিয়ে করেছি। আমাদের বিয়ের আগেই পরিচয় কিন্তু রিলেশন না তেমন। চিনতাম আর পরে ও আমাকে প্রপোজ করে।

আমি প্রথমে রাজী হইনি পরে অনেক খোঁজ খবর নিই ওর ব্যাপারে। সবাই অনেক ভালোই বলে। তারপর পরিবার ইচ্ছাতেই আমাদের বিয়ে হয়। এমনিতে আমার স্বামী মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। অনেক কেয়ারিং। আপু, বলে রাখি আমি প্রেগন্যান্ট। আর জানুয়ারিতে আমার বেবি হবে।

এখন সমস্যা হল আমার শাশুর বাড়িতে ওদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। বড় পরিবার। আর ঐ পরিবারের সব আর্থিক সাহায্য দেয় আমার স্বামী। যার কারণে আমাকে অনেক সাফার করতে হয়। ওর বড় ভাই, বোন একসাথে থাকে কিন্তু কোন আর্থিক সাহায্য করেনা। কিন্তু তারা সুন্দর জীবনযাপন করছে যা আমি পারিনা। এমনকি এখানে আমাকে সব চেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়। প্রেগন্যান্ট হবার পর আমার অনেক সমসয়া হয়েছে। আমি ৪তলায় থাকি। সেখান থেকে পড়ে গেছিলাম। কিন্তু, সৌভাগ্যবশত আমার সন্তানের কোন ক্ষতি হয়নি তখন।

আমি অনেক বলেছি এই বাসা বদলাতে কিন্তু আমার স্বামী রাজী হয়নি। এটা নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। ঐ বাসায় আমরা ভাড়া থাকি তাও। আপু, পড়ে যাবার পর মানসিকভাবে খুব স্ট্রেস গিয়েছে আমার। রাতে ঘুমাতে পারিনা কিন্তু এখানে কেউ বোঝেনি। উলটো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ওরা ভাবে আমি একা থাকতে চাই। আমার কাছে সব চেয়ে খারাপ লেগেছে আমার স্বামী তো অন্তত বোঝার কথা ছিলো কারণ সন্তানটা তাঁরও। এমনকি আমি ওর পরিবারের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেও সে সাড়া দেয়না। চুপচাপ থাকে। আরেকটা ব্যাপার, আমি যদি ওর কাছে কিছু চাই সহজে দিতে চায়না। অনেক টালবাহানা করে। এমনকি সবসময় মাঝরাত করে বাড়ী ফিরে কিন্তু সে ড্রিংকস করেনা। বিয়ের অনেক আগে থেকেই নাকি ওর এই মাঝরাত করে বাড়িতে ফেরার অভ্যাস আছে। এ নিয়ে ওর সাথে অনেক ঝগড়া করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। পরিবারেও কেউ কিছু বলেনা আপু।

শশুরবাড়িতে যতটুকু দায়িত্ববোধ থাকা দরকার আমি যতটা পারি করি, তাও যেন আমাকে কেউ পছন্দ করেনা। আমার স্বামী একটুও শেয়ারিং না। আমাকে কোনকিছুই বলেনা। আমি মানুষের কাছে শুনি এমনিও সে চাপা স্বভাবের। আপু ওকে আমি কিছুই বুঝাতে পারিনা। ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বললে কোন রেসপন্স করেনা। বলে তোমার টেনশন নিতে হবেনা। কিন্তু এত বড় পরিবারের আর্থিক সাহায্য করতে গয়ে কিছুই থাকেনা। ও আমার কোন কথাই শোনেনা এই ব্যাপারে। সবাই বলে বড় ভাই নাকি ব্যাবসায়ে লস করেছে তাই ফ্যামিলিতে কন্ট্রিবিউট করতে পারেনা কিন্তু আমার তা মনে হয়না, আপু। আমার স্বামী আমার তেমন কোন কথায় গুরুত্ব দেয়না। ও ভাবে আমার বয়স কম। আমি কিছুই বুঝিনা। এসব নিয়ে আমি খুব সমস্যায় আছি আপু। কী করবো বুঝতে পারছিনা। সবকিছু মেনে নেবার চেষ্টা করি কিন্তু ওরা সবাই খুব চালাকি করে। তখন খুব খারাপ লাগে।

আমাকেও তো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে আপু। কারণ আমার স্বামীর বয়স অনেক বেশি আর এখন আমার সন্তান হবে। কিন্তু ওকে কিছুতেই বুঝাতে পারিনা। ওর ভাব এমন যে ও প্রয়োজনে আমাকে ছেড়ে দেবে তাও পরিবারের বিরুদ্ধে যাবেনা। আর প্রতিরাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে। আমি কী করতে পারি আপু? এতকিছু মানিয়ে নিতে পারছিনা। বড় বোন হিসেবে আমাকে একটু পরামর্শ দিন আপু। এমন আরো অনেক সমস্যা আছে যা আর লিখিনি। আমাকে বলে দিন আপু, আমি কী করতে পারি?”

পরামর্শ:

আপু, শুরুতেই বলে নিই যে বিয়ে কোন নিশ্চিত ব্যাপার নয়। বরং যেন অনেকটাই জুয়া খেলার মত। প্রেম থাকুক বা পূর্বের পছন্দ, বিয়ের পর হতে পারে যে কোন কিছুই। কারণ একটা মানুষকে চেনা আর তাঁর সাথেই জীবন কাটানো, দুটি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন ব্যাপার। আর এই “যে কোন কিছু”-কে মেনে নিয়েই আপনাকে জীবন কাটাতে হবে। সেটিই বিয়ে।

প্রথমত , ভুলটি আপনার নিজের। মাত্র ২২ বছর বয়স আপনার। আপনি কী বুঝে বা কী মনে করে ২০ বছরের বড় একজনকে বিয়ে করতে গেলেন? বিয়ে যখন করেই ফেলেছেন, এটা তো আপনাকে বুঝতেই হবে যে তাঁর সাথে মতের পার্থক্য আপনার হবেই। কারণ স্বামীর সাথে আপনার বিশাল একটি জেনারেশন গ্যাপ আছে। আপনি আধুনিক চিন্তাধারার মেয়ে আর তিনি অনেকটাই সেকেলে ধারণা লালন করেন। দ্বন্দ্ব হওয়া অনিবার্য! এই দ্বন্দ্ব আজীবন থাকবে। সংসার করতে চাইলে এটা মেনে নিতেই হবে। নিজে পছন্দ করে জেনেশুনে বিয়ে করেছেন, এখন সন্তানও নিয়ে ফেলেছেন। মেনে নেয়া ছাড়া তো আমি উপায় দেখি না আপু।

আরেকটা জিনিস আপু, আপনি নিজে কিন্তু কিছু ভুল ধারণা লালন করছেন। সেগুলোও আপনার কষ্টের কারণ অনেক ক্ষেত্রেই। নিজের পরিবারের দেখাশোনা করা বা পরিবারকে টেক কেয়ার করা মোটেও খারাপ কিছু নয়। এটা বরং খুবই ভালো একটা ব্যাপার। আর পরিবারকে দিয়ে কিছুই থাকে না, এটা আপনি জানছেন কীভাবে? নিজেই তো বললেন যে স্বামী কিছুই বলে না আপনাকে। তাই আস্থা রাখুন, নিজের পরিবারের যে জন্য যে মানুষ এত করে, সে নিজের সন্তানকে ভাসিয়ে দেবে না। আপনি স্বামীর সাথে পরিবারকে টাকা দেয়া নিয়ে ঝগড়া করবেন না একেবারেই। বরং তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সন্তানের নামে একটি সঞ্চয় করতে বলুন। এভাবে বোঝান যে বিপদের কথা কেউ বলতে পারে না। এখন সন্তানের নামে টাকা জমালে ভবিষ্যতে এই টাকা সন্তানের লেখাপড়া বা বিয়েতে কাজে লাগবে। সন্তানের একটা সম্পদ হবে। অন্যদিকে স্বামীর নামে একটি জীবন বীমা খুলে নিজেকে নমিনি হিসাবে রাখতে পারেন। এতে স্বামী আল্লাহ না করুক না থাকলেও আপনি বিপদে পড়বেন না। তাঁর পরিবারকে টাকা দিতে মানা করলে স্বামী আপনাকে হিংসুক ও লোভী ভাববে। তাই সেই কাজটি করবেন না।

দ্বিতীয়ত আপু, স্বামী ব্যবসায়ী। মানুষের সাথে মেলামেশা করা বা রাত করে বাসায় ফেরা তাঁদের কাজের অংশ, এটা মেনে নিতেই হবে। আর শ্বশুর বাড়ি কার জন্য গোলাপ ফুলের বিছানা হয়? কেউ আপনাকে পছন্দ করলো কি করলো না, তাতে কী আসে যায়। আপনি নিজের ফ্ল্যাটে আলাদা থাকেন, তাই নিজের মতই থাকুন। ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে স্বামীকে উদ্বুদ্ধ করুন বাচ্চার জন্য ফ্ল্যাট কিনতে। কিংবা বাচ্চা বড় হলে তাঁর স্কুলের কাছে বাসা নেবেন। এখন এটা নিয়ে লাফালাফি করার কিছু নেই।

দেখুন আপু, আমার মনে হচ্ছে আপনি খুবই অস্থির মতি। বিয়ে হয়েছে এক বছরও হয়নি, আপনি ইতিমধ্যেই নিজের মত উলটপালট বুঝে পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে করে ফেলেছেন। একটা মানুষকে চিনতে ও বুঝতে অনেক সময় লাগে। আপনারও লাগবে, স্বামীরও লাগবে। এই সময়টি পরস্পরকে দিন। আসলেই কিন্তু আপনার বয়স খুব কম, এখনো সংসার ও বাচ্চার দায়িত্ব নেয়ার বয়স হয়নি। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় নারীরা নানান রকম সমস্যায় ভোগে, যেগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে অহেতুক খিটখিটে লাগা, মেজাজ করে দুশ্চিন্তা করা। ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে আপু আপনি অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। দয়া করে এখন কিছুই এসব ভেবে নিজের জীবন নষ্ট করবেন না। বাচ্চার দিকে মন দিন, স্বামীকে ভালবাসুন। কোন ছেলেই নিজের পরিবারকে নিয়ে খারাপ কথা শুনতে চায় না, এসব বলে স্বামীকে দূরে ঠেলে দেবেন না। পুরুষের মায়া সংসারে তখনই তৈরি হয়, যখন সে স্ত্রীর কাছ থেকে নিখাদ ভালোবাসা পায়। আপাতত সেটাই দিন। ইনশাল্লাহ সব সমস্যা মিটে যাবে আপু। প্লিজ একটু ধৈর্য ধরবেন।



মন্তব্য চালু নেই