“স্বামীকে আর ভালোবাসতে পারি না; এদিকে প্রেমিকেরও স্ত্রী আছে…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“অনেকদিন ধরে আপনাদের লিখব ভাবছি। আমি আমার জীবনের এমন একটা পর্যায়ে আছি যে ব্যাপারটা কাউকে জানাতে পারছিনা,আমি চাই আমার পরিচয় গোপন থাকুক।

আমি একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি,এ বছর অামার অনার্স শেষ হবে। ছোটবেলা থেকে একটা ভাল ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন ছিল,বাবা মা আর দুই ভাই এর বড় আদরের বোন ছিলাম আমি। উচ্চ মাধ্যমিক এর পর মেডিকেল কোচিং-এ এসে প্রথম ভুল করি আমি,একটি হিন্দু ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। উল্লেখ্য, আমি কনজারভেটিভ পরিবারের,তাই প্রথমেই ভুল বুঝতে পারি। ফিরে আসার চেষ্টা করি,কিন্ত ওকে ভালোবাসতাম খুব। ও চাইত সম্পর্কটা শেষ হোক,কিন্ত ও আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতনা।

যাই হোক অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসি এই সম্পর্ক থেকে। ওকে ভোলার জন্য আমার এক আত্বীয়ের সাথে অনেক ফোনে কথা বলি। সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ এবং তখন বিদেশে থাকত। দেখতেও ভালো নয়,ওদের পবিবারও ততটা শিক্ষিত নয়। আমি তখন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। আবারো ভুল করি,জড়িয়ে যাই সম্পর্কে যার সাথে আমার কখনই মেলেনা। সম্পর্কের ছয় মাসের মধ্যে ও দেশে আসে এবং আমাকে বিয়ে করতে চায়,আমি তখন ভালোবাসায় অন্ধ। বাবা মাকে ভাইদের বহু কষ্টে রাজি করাই,কিন্ত তারা খুব কষ্ট পায়,বিয়ে হয় কিন্ত বাবা-মা আগে আমার লেখাপড়ার দায়িত্ব ওকে নিতে বলে। তারা আর বিয়ের পর চালাতে পারবে না জানিয়ে দেয়,এরপর দুমাস ভালোই যায়।

তারপর ওর বিদেশ যাওয়া আটকে যায়,আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। বাবা-মার কাছ থেকে টাকা আনা শুরু করি,ও তা মানতে পারেনা,আমাকে ড্রপ দিতে বলে। ওর বাবা-মাও চাইতনা কিন্ত বলতো না সরাসরি। কিন্ত আমি চালাই পড়াশোনা অনেক কষ্টে,ওর ব্যবহারও বদলাতে শুরু করে। ওকে বিয়ে করে আত্বীয় স্বজন বন্ধুদের কাছে আমি অনেক মূল্য হারিয়েছি, ভাইদের নিয়ে খোটা দিত। যাদের ভালোবাসা হারিয়েছি ওর জন্য,তাদের কাছে যাওয়া পছন্দ করতো না। আমার পুরনো প্রেমিককে নিয়ে খোটা দিত ঝগড়া হলেই খারাপ কথা বলত। খুব কষ্ট পেতাম। এভাবে একবছর পরে ও বিদেশ যায়, অামি আমার পড়ালেখার স্থানে চলে আসি। এক বছর টাকা পাঠাতে পারেনি,আমার শ্বশুর অল্প দিত আর বাবা-মা দিত। আমি নিজে দুটি টিউশনি করে চলি। ইতিমধ্যে ওর আচার ব্যবহার ভালো হয়না আর আমি সম্পূর্ন বিপরীত চরিত্রের। ও বন্ধুদের সাথে মেশা পছন্দ করেনা,বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে দেয়না,ফেসবুক নিয়েও অনেক ঝগড়া করে। পুরনো ছেলে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়না,কলেজের শিক্ষাসফরে যেতে দেয়না।

দিন দিন ঝগড়া বাড়তেই থাকে। কোন চাকরি করতে দিবেনা আমায়,আমার জীবনের ইচ্ছে বলতে কিছুই নেই। খুব অসহায় লাগে,কাউকে বলতে পারিনা। অামাকে এতটুকু সম্মান করেনা বরং খারাপ মেয়ে বলে। একাকিত্ব কাটাতে নতুন একটা আইডি খুলি,সেখানে একটা ছেলের সাথে আলাপ হয়। যে শিক্ষিত,আমার মনের মত,আমার সাথে সব মেলে,আমার মতই কবিতা লেখে,পথশিশুদের ভালোবাসে। আমি তার মধ্যে আমার হারিয়ে যাওয়া প্রতিচ্ছবি খুজে পাই। সে জানত আমি বিবাহিত,তবু সে আমাকে খুব ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। সে কখনোই আমার স্বামীকে নিয়ে কথা বলতো না,নিজের কথাও তেমন বলতো না। আমাকে কখনও আমার সংসার ভাংতে বলতো না,শুধু ভালোবাসত।

দেখা হতো নিয়মিত,আমি আমাকে তার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দেই,ওর পাশে বসে নিজেকে খুব সুখী মনে হত। খুব কষ্ট হত কেন সঠিক সময়ে দেখা হলো না। সে কী চাইত আমার কাছে বুঝতাম না,কখনোও ওর সাথে সংসার এর স্বপ্নও দেখাতো না,আমার সাথে কখনোও শারিরীক সম্পর্কও করতেও চায়নি। ও তখন বেকার ছিল,মাঝেমধ্যে অামার কাছ থেকে টাকা নিত। কিন্ত চারমাস পরই আমি জানতে পারি ও অনেক বছর সম্পর্ক করে একজনকে গোপনে বিয়ে করেছে আগেই। আমি খুব কষ্ট পাই,ও সব স্বীকার করে,আর বলে আমাকে হারানোর ভয়ে বলেনি, ও আমাকেই ভালবাসে। আমি ওকে ছাড়তে চাই কিন্তু পারিনা,ওকে আরও ভালোবাসি।

এদিকে আমার স্বামীর সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বাড়তেই থাকে,ওকে আমি সহ্য করতে পারিনা। আমাকে এখন টাকা পাঠায় অনেক,কিন্ত আমাদের অনেক দূরত্ব হয়ে গেছে। আমার স্বামী এই ব্যাপারটা জানেনা,জানলে অনেক সমস্যা হবে। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না,বাবা-মার বিরুদ্ধে যাকে বিয়ে করেছি,তাকে কী করে ছাড়ব? যদিও তার মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে পাইনা। অন্যদিকে আমার প্রেমিক এর স্ত্রী আছে,তার হাত কোন ভরসায় আঁকড়ে ধরব। আমার প্রেমিককে ছাড়তে চাইতাম,কিন্ত ওকে ছাড়া ভাবতে পারতামনা কিছু,পাগলের মত হয়ে যেতাম ওর সাথে কথা না বলতে পারলে।

যাই হোক এর মধ্যে ওর জব হয়,জয়েন করার আগের একমাস ও আমাকে খুব সময় দিয়েছে। জব হবার পরই ওর ফ্যামিলি ওকে বিয়ের চাপ দেয়। আমাকে যখন জানায় ততক্ষনে ওদিকে প্রায় ওর বিয়ে ঠিক গোপনে বিয়ে করা বউয়ের সাথে। আমি খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম,কিছু করার নেই। আমিও তো আমার স্বামীকে ছাড়তে পারবনা,তাই মেনে নিচ্ছিলাম। ও আমাকে অনেক বুঝিয়েছে,কিন্ত আমি পাগলের মত হয়ে গেছিলাম, খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়েছিল। ওর বিয়ে হলো,আমি আর জীবনে স্বাভাবিক হতে পারব না। ও বলে গেছে ও এখনো আমায় ভালোবাসে,ওর স্ত্রীর সাথে শুধু লোক দেখানো সম্পর্ক,কিন্ত ওর কথা বিশ্বাস করতে পারছিনা। একজন আমাকে জানিয়েছে ওর অনলাইনসহ অনেক মেয়েদের সাথে সম্পর্ক ছিল,এগুলো শুনে আরও কষ্ট পেয়েছি। আমি ওর সাথে যোগাযোগ করিনা, ও চাইলেই যোগাযোগ করতে পারে কিন্ত করেনা। অনেকদিন পর পর দুএকমিনিটের জন্য ফোন দেয়,আমি উপেক্ষা করতে পারিনা। ওকে ছাড়া আমিখুব কষ্টে আছি,জীবন অসহনীয় লাগছে।

এখন কী করব কুঝতে পারছিনা। আমার পড়াশোনা, শ্বশুর বাড়ির প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে,আমি আর পারছি না। আমার অভিনয় করতে ভালো লাগছে না। আমি কষ্ট ভুলতে পড়াশুনায় ডুবতে চাই।

এদিকে আমার গ্রাজুয়েশন প্রায় শেষ,আমি ফার্স্ট ক্লাস পাব নিশ্চিত। আমি বি সি এস কোচিং করতে চাই,কিন্ত আমার স্বামী কিছুতেই রাজি হচ্ছেনা। সে চায় আমি তার বাবা-মার কাছে এখন নিয়মিত থাকি। জীবন তো আমি নিজ হাতেই শেষ করেছি,আমার। স্বামীকে আর ভালোবাসতে পারবনা, ছাড়তেও পারছিনা। কারণ আমার শক্ত কোন অবস্থান নেই, তাছাড়া বাবার সম্মান নিয়েও ভাবি। ডিভোর্স নিলে নিজের সম্মান সমাজে আর পাব কিনা তাও ভাবি। বাবা-মা-ভাইদেরকেও বলতে পারছিনা,ওকে ছেড়ে তাদের ঘাড়ে চাপা আমার পক্ষ খুবই লজ্জা।

ছয়মাস পরে আমার স্বামি দেশে আসবেন,তাকে আমি মেনে নিতে পারব বলে মনে হয়না। আমি হয়তো পারি ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে শশুর বাড়ি গিয়ে সংসার করতে,কিন্ত তা হবে নিজের সাথে নিজের প্রতারনা করা। কাউকে ভিতরটা হয়তো বোঝাতে পারবনা,কিন্ত আমার জীবনটা কি এভাবে শেষ হয়ে যাবে?আমি আমার একটা স্বাভাবিক জীবন চাই,সমাজে নিজের একটা অবস্থান চাই। আমি বাঁচতে চাই। প্লিজ আমাকে একটু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন,আমি আর ভুল করতে চাইনা”

পরামর্শ:
আপনি নিজেও জানেন আপু, জীবনে কি বিশাল সব ভুল করে ফেলেছেন। এবং সত্যি কথা বলি, আপনার এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা খুবই জটিল; কারণ আপনি সকল রাস্তা নিজের হাতেই বন্ধ করে ফেলেছেন। আপনার জীবনের সমস্যার চাইতে বেশি সমস্যা আপনার মনে। আপনি এমন এক ছেলের প্রেমে অন্ধ হয়েছেন যে আপনাকে কখনো ভালোবাসেনি। হ্যাঁ আপু, এটাই সত্যি। ছেলেটি আপনাকে কখনোই ভালোবাসেনি।

ছেলেটির যখন চাকরি ছিল না, সে আপনাকে এবং আপনার মত অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। আপনাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের স্ত্রীকে চালিয়েছে। খোঁজ নিলে দেখবেন যে অন্য মেয়েদের কাছ থেকেও সে টাকা নিত। বলাই বাহুল্য যে অনেক বছর প্রেম করে যে মেয়েকে বিয়ে করেছে, ভালো সে তাঁকেই বাসে। তাঁকে চালাবার জন্যই আপনাদের সাথে প্রেমের অভিনয়। হ্যাঁ, সেটা অভিনয়ই ছিল কারণ সে কখনো কোন ওয়াদা করেনি। আর যেই চাকরি হয়েছে, স্ত্রীকে নিয়ে সরে গেছে আপনার জীবন থেকে। এই পুরো ব্যাপারটাই মিথ্যা। আর সেই মিথ্যা ছেলের কারণে স্বামীর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলছেন আপনি।

দেখুন, মানুষ মাত্রই দোষে গুণে ভরা। আপনি স্বামীকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন, এখন সেই ছেলের জন্য স্বামীকে আপনার সহ্য হয় না। আপনার স্বামীর সন্দেহ প্রবণতা আছে এবং হ্যাঁ বিষয়টি খারাপ। উনি যেহেতু অনেক দূরে থাকেন, সন্দেহ প্রবণতা অনেক বেশী কাজ করে। কিন্তু তাই বলে উনি যে একেবারেই খারাপ মানুষ বা আপনাকে ভালোবাসেন না, সেটাও কিন্তু নয়। তিনি ভালো বেশী বাসেন বলেই সন্দেহ একটু বেশী করেন, ভাবেন যে অন্যদের সাথে মিশলে আপনি হয়তো তাঁকে ছেড়ে দেবেন। তিনি তাঁর কষ্টের উপার্জন আপনাকে দিচ্ছেন, এটাও কিন্তু ভালোবাসাই আপু। নিজে যেহেতু বেশী শিক্ষিত নন, ভাবছেন যে আপনি বেশী শিক্ষিত হলে তিনি আপনাকে হারিয়ে ফেলবেন। ব্যাপারটি এই দিক থেকে দেখুন আপু। আপনার স্বামীর কাছে আপনার মূল্যটা বুঝতে পারবেন। এই দেশে অনেক মেয়ের স্বামী আছে যারা নৃশংস নির্যাতন করে, কোন খরচ দেয় না, মারধোর করে। আপনার স্বামী সেসব করছে না। যেহেতু ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন, তাই একটু কষ্ট করে ভালোবাসার দিকে তাকান।

এখনোই কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। স্বামী দেশে আসলে তাঁর সাথে কথা বলুন। দুজনে একসাথে থাকার জন্যই মানুষ বিয়ে করে। কাছাকাছি থাকলে অনেক সমস্যাই দূরে চলে যায়। তাঁর সাথে কথা বলে দেখুন যে আপনাকে তিনি সাথে নিয়ে যেতে পারেন কিনা। সেটা হলে খুবই ভালো হবে। দুজনে একসাথে থাকলে আপনি আর ছেলে বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন না। আর যদি সাথে নেয়া সম্ভব না হয়, তাঁকে বলন যে এখানে আপনার একলা লাগে। সেটা দূর করার জন্যই আপনি লেখাপড়া করতে চান। নতুবা বেকার বসে থাকা খুবই কষ্ট। বরং বেকার থাকলেই আপনার অন্যদিকে মন যাবে বেশী। বুঝিয়ে শুনিয়ে দেখুন স্বামীকে রাজি করানো যায় কিনা। তাঁকে আশ্বাস দিন যে তাঁকে আপনি ছেড়ে যাবেন না। বরং যা করতে চাইছেন আপনাদের ভবিষ্যতের জন্যই, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের জন্য। এতে হয়তো তিনি আশ্বস্ত হতে পারেন।

ডিভোর্স একেবারে শেষ ধাপ। একটু চেষ্টা করে দেখুন আপু কয়েক মাস। স্বামীকে আসতে দিন দেশে। নিজের মনকে পরিবর্তন করে একটু ভিন্নভাবে দেখুন। জীবনটা অনেক সহজ মনে হবে।



মন্তব্য চালু নেই