স্বর্ণালংকারের জন্যই দুই শিশু হত্যা

অনেক জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী ভবানীপুর ফতেপুর এলাকার দুই শিশু সুমাইয়া খাতুন মেঘলা (৭) ও মেহজাবিন আক্তার মালিহার (৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ওই দুই শিশুর গলা ও কানের স্বর্ণালংকারের জন্যই তাদের হত্যা করা হয়।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল অধিকারীর আদালতে ওই হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রতিবেশী ও প্রধান অভিযুক্ত লাকি খাতুন (২২) ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানায় জেলা পুলিশ সুপার টি.এম মোজাহিদুল ইসলাম।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, অভিযুক্ত লাকি আক্তার ছিল ঋণগ্রস্থ। কিছুদিন ধরে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদাররা তাকে বার বার চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু টাকার কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে ওই দুই শিশুর গলার স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল আত্মসাতের জন্য তাদের নিজের ঘরে আটকে রাখেন।

পরে ওই দুই শিশুকে ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন ও দুল নিয়ে বিক্রি করে পাওনাদারদের কিছু কিছু করে দেনা পরিশোধ করেন। অপহরনের প্রথম দিন গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই দুই শিশুকে নিজ বিছানায় নিয়ে একসঙ্গে ঘুমালেও পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি ভয় দেখিয়ে সারাদিন ঘরের ফ্রিজের পেছনে ও রাতে বক্স খাটের নিচে শিশু দুইটিকে শুইয়ে রাখেন। যেহেতু বক্স খাটের উপর তোষক ও কাপড় ছিল, সেজন্য অক্সিজেন বন্ধ হয়ে শিশু দুটি মারা যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, এ ঘটনায় লাকি খাতুনের শ্বশুর ভ্যান চালক ইয়াসিন আলী (৬০) ও শ্বাশুরী তানজিলা খাতুনের (৫০) আপাতত কোন সংশ্লিষ্টতা না পেলেও তারা রয়েছেন পুলিশি হেফাজতে।

তবে লাকীর দেয়া তথ্যানুসারে স্মৃতি জুয়েলার্স থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণালঙ্কার গলিত অবস্থায় উদ্ধারের পর বুধবার রাতে ওই দোকানের কারিগর পলাশকে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে বুধবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহত দুই শিশুর ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মেহজাবিন আক্তার মালিহার মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এবং বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর সকাল ১০টায় সুমাইয়া খাতুন মেঘলার মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করার পর দুপুর ২টায় নামোশংকরবাটী ডিহিপাড়া গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
তবে ময়না তদন্তকারী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে শিশুদের মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তারকালে ও বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কোর্ট চত্ত্বরে লাকীকে নিয়ে পুলিশ হাজির হলে সেখানেও উপস্থিত নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিক্ষোভ করে তাকে ধিক্কার সহকারে ঘৃণা প্রকাশ করে তার মৃত্যুদন্ড দাবি করেন।

অন্যদিকে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া পাশের এলাকার ঘোষপাড়ার গীতা রানি ঘোষের বাবা শম্ভু ঘোষের বাড়ি ভাংচুর করে ও আগুন দেয় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তবে ঘটনা যাই হোক না কেন এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জেলাবাসীও শিশু নিহতের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছেন।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু প্রবাসী মিলন রানার মেয়ে স্থানীয় ছোটমনি বিদ্যানিকেতনের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন মেঘলা (৭) ও একই বিদ্যালয়ের নার্সারী পড়ুয়া ঢাকায় কর্মরত প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রি আব্দুল মালেকের মেয়ে মেহজাবিন আক্তার মালিহা (৬) নিখোঁজ হয়। ঘটনার ২ দিন পর মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রতিবেশী ইয়াসিন আলীর বাড়িতে তার প্রবাসী ছেলের বৌ লাকী খাতুনের শোবার ঘরের খাটের নীচ থেকে পৃথক দুটি বস্তার মধ্য থেকে নিখোঁজ ওই দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই