স্পার্টান যোদ্ধাদের বালক থেকে যোদ্ধা হতে মানতে হত যে অদ্ভূত বিষয়গুলো

গ্রীক বীর আলেক্সান্ডার পুরো পৃথিবীকে জয় করলেও পৃথিবীর একটি দেশকে ঘাঁটাবার মতন সাহস পাননি। পাশ দিয়ে দেখে ফিরে গিয়েছেন। যুদ্ধ করা তো দূরে থাক, যুদ্ধ করার চিন্তাও মাথায় আনেননি তিনি। আর এই দেশটি ছিল গ্রীসের অন্যতম শক্তিশালী নগরী স্পার্টা। বলা হয়, স্পার্টানরা নিজেদের শক্তিতে এত বেশি বিশ্বাসী ছিল যে, নিরাপত্তার খাতিরে শহরের পাশে কোন দেয়ালও তোলেনি তারা কখনো। কিন্তু এত যে শক্তির আধার মনে করা হত স্পার্টান পুরুষদের সেটা কি এমনিতেই? না! ছোট্ট বালককে বীর যোদ্ধা হতে স্পার্টাতে যেতে হত চরম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। শিশুকালেই রাষ্ট্র নিয়ে নিত শিশুকে মায়ের কোল থেকে। মা নয়, রাষ্ট্রের দায়িত্বে আর নিয়ম মেনে বড় হত বালক। হয়ে উঠতো যোদ্ধা। তবে এই যোদ্ধা হয়ে উঠতে কিন্তু এমন অনেক কার্যক্রম ও নিয়ম মেনে চলতো স্পার্টানরা যে সেগুলোকে দেখে অনেক সময় তাদের পাগলামীও মনে হতে পারে। চলুন দেখে আসি সাহসী যোদ্ধা জাতি স্পার্টানদের যোদ্ধা তৈরির এমনই কিছু উদ্ভট পদ্ধতিকে।

১. নিন্মমানের খাবার

নিন্মমানের খাবার বলতে এখানে সেই খাবারের কথা বলা হচ্ছেনা যেটাকে আমরা নিন্মমানের বলে মনে করে থাকি। যদিও প্রচুর খাটতে হত, তবু স্পার্টান আর্মিতে বাচ্চা থেকে বড়- সবাইকেই দেওয়া হত নিন্মমানের অতি অখাদ্য খাবার। একবার এক ভ্রমণকারী স্পার্টান সামরিক বাহিনীতে খাবার খাওয়ার পর ঠাট্টাচ্ছলেই বলেছিলেন- এবার বুঝেছি, কেন স্পার্টানরা মরতে ভয় পায়না। সেখানে সবচাইতে ভালো মানের খাবার ইসেবে পরিচিত ছিল ব্ল্যাক ব্রোথ। যেটি কিনা রান্না করা হত মাংস, রক্ত, লবন ও ভিনেগার দিয়ে। তাও আবার খুব অল্প পরিমাণে। যে জন্তু মারতে পারতো সে অবশ্য একটু বেশি ভাগ পেত আর সেটা বাড়ি নিয়ে যেতে পারতো। এইটুকুই! এছাড়া আর কোন সময় বাড়িতে বসে খাবার গ্রহণের অনুমতি ছিল না কোন স্পার্টান যোদ্ধার।

২. শাস্তি চক্র

খাবার খাওয়ার পর একজন আন্ডার-মাস্টারের কাছে আসতে বাধ্য হত শিক্ষানবীশেরা। তাদেরকে কিছু প্রশ্ন করতো আন্ডার-মাস্টার। যদি সেটার উত্তর আশানরূপ না হত তাহলে প্রচন্ড আঘাত করা হত শিক্ষানবীশের হাতের আঙ্গুলে। আর এরপর সেই শিক্ষানবীশকে আরেকবার পরীক্ষা করতেন উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকেরা। যদি পরীক্ষায় দেখা যেত যে আন্ডার-মাস্টার শিক্ষার্থীকে কম বা বেশি মেরেছে কিংবা কোন গাফিলতি করেছে তাহলে শাস্তি হিসেবে আঘাত পেতে হত তাকেও।

৩. অত্যাচারের উৎসব

স্পার্টানদের ভেতরে ডায়ামাস্টিগোসিস নামে একটি বার্ষিক উত্সব অনুষ্ঠিত হত। আর এইখানে হত এক অন্যরকম নির্যাতনের প্রতিযোগিতা। বালক থেকে পুরুষ- সব স্পার্টানরা ভীড়ের ভেতরে গিয়ে দাড়াতো আর তাদেরকে আঘাত করা হত বারবার। প্রতিযোগিতা হত কে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারে আঘাত সহ্য করে তার ওপর ভিত্তি করে। মৃত্যু এলেও এটি ছিল স্পার্টানদের জন্যে গৌরবের বিষয়। সবাই চাইতো অংশ নিতে এই প্রতিযোগিতায়। একটা সময় দূর দেশ থেকেও স্পার্টায় এসে টিকেট কেটে এই প্রতিযোগিতা দেখা শুরু করে অন্য দেশের মানুষেরা।

৪. চিহ্নহীন কবর

স্পার্টানরা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু হলেই সমাধির অধিকারী হতে পারতো। কেউ যদি বয়সের কারণে মারা যেত তাহলে সেটা তার জন্যে লজ্জাকর ব্যাপার বলে মনে করা হত আর কোনরকম চিহ্ন ছাড়াই তার লাশকে পুঁতে ফেলা হত। তবে নারীদের ক্ষেত্রে যুদ্ধ না করেও অনেকে সমাধি পাওয়া যোগ্যতা অর্জন করতে পারতো। এই যেমন- সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলে এই সম্মান পেত সে।



মন্তব্য চালু নেই