স্থবির হয়ে আছে রিজার্ভ চুরির টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়া

থেমে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া। একই সঙ্গে বাংলাদেশ, ম্যানিলা, ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের তদন্ত অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সিআইডি, পুলিশ, এফবি আইর তদন্তও চলছে ঢিমেতালে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), এ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) কোন সংস্থাই জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না দোষীদের চিহ্নিত করতে বা অর্থ উদ্ধারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (৮০০ কোটি টাকা) চুরির চার মাস অতিবাহিত হলেও এর কোন সুরাহা হয়নি এখনও। রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৬ কর্মকর্মার নাম এলেও তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে তা স্পষ্ট হয়নি এখনও। সর্বশেষ গত ৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরত আনতে গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠকে ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে সব কার্যক্রমের একটি রোড ম্যাপ তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুইফট ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত দায় নিতেও রাজি হয়নি। তাই চুরি হওয়া উদ্ধারে আগামী ১৫ জুলাই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, দায়িত্বে অবহেলা থাকায় অভিযুক্ত ছয় কর্মকর্তার মধ্যে দু’জনের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড জেনে যায় হ্যাকাররা। এ ছাড়া তাদের অসতর্কতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার সিস্টেমে হ্যাকাররা প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত বা ফৌজদারি বিধিতে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে এলআরে (লিভ রিজার্ভ) নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অর্থাৎ ওএসডি করা হতে পারে তাদের। এরই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তাদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সূত্র জানিয়েছে, উপ-পরিচালক জিএম আবদুল্লাহ ছালেহীনকে আরও দুই কর্মকর্তার সঙ্গে একই আদেশে এ্যাকাউন্টস এ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্ট থেকে কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ১-এ বদলি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মির্জা আবদুল্লাহিল বাকি বলেন, আমরা এখনও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাইনি। পত্রিকায় তাদের নাম দেখেছি। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এদিকে সিআইডির একটি সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভে চুরির সঙ্গে ৩০ বিদেশী নাগরিককে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের অনেকেই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। সিআইডি প্রযুক্তিগত তদন্ত, এফবি আই ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় তাদের প্রকৃত নাম-ঠিকানা উদ্ধার করেছে। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের আলাদা প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে। এদের গ্রেফতারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সিআইডির দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ইন্টারপোল পলাতক অভিযুক্তদের বিষয়ে রেড নোটিস জারি করবে বলে জানা গেছে।

এদিকে গত ৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরত আনতে গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠকে ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে সব কার্যক্রমের একটি রোড ম্যাপ তৈরি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া টাস্কফোর্স বৈঠকে রিজার্ভের চুরির অর্থ দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ কি কি হওয়া উচিত এবং ফিলিপিন্সে কোন আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে সময়সীমা সংক্রান্ত কোন বাধ্যবাধকতা আছে কি-না তা পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আগামী টাস্কফোর্স সভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. ইউনুসুর রহমান জানান, অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এছাড়া আমরা আর কোন উপায় দেখছি না।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে চলতি বছরের ৫ ফেব্র“য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ৯৫১ মিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা করে। পরে বেশ কিছু পেমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে বেশিরভাগ অর্থচুরি ঠেকানো গেলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে স্থানান্তরে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। ওই অর্থ ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার ব্রাঞ্চের চারটি এ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনাটি তদন্তে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে মার্কিন গোয়েন্দা এফবি আই। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক অভ্যন্তরীণভাবেই হয়েছে। আর বাংলাদেশের তদন্তকারীরা এ ঘটনার জন্য আংশিকভাবে সুইফট সিস্টেমকে দায়ী করেছেন। কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকই নয়, ভিয়েতনাম ও ইকুয়েডরের ব্যাংকেও একই স্টাইলে হামলা হওয়ায় সুইফটের নিরাপত্তার ইস্যুটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। কোন কোন তদন্তকারী আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার হামলার সঙ্গে ২০১৪ সালে সনি পিকচার্সে উত্তর কোরিয়ার সাইবার হামলার মিল পেয়েছেন। দুটি ঘটনাতেই একই ধরনের ম্যালওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি তাদের। তবে কারা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত তার কোন সুরাহা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। সম্প্রতি এফবি আইও জানিয়েছে, দায়ীদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে দ্রুত শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এ ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিলেও তা এখনও সরকার প্রকাশ করেনি। এমনকি রিপোর্টে দেয়া সুপারিশের বাস্তবায়নও দেখা যায়নি। ফলে চুরি হওয়া রিজার্ভের বাকি অর্থ আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কি না এ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগোলে অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একজন আইনবিদকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করলেও এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি আদৌ মামলা করা হবে কি না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষ বলেছিল অর্থ উদ্ধারে আমাদের সহায়তা দেবে। কিন্তু তারা এর কোন দায় নেবে না। এখন পর্যন্ত তারা কোন ধরনের সহায়তা দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফিলিপিন্সের যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন। তাদের কাউকেই সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেনি। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিয়েছে। সে দেশের মুদ্রা পাচার আইনেও অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া চীনা ব্যবসায়ী উইলিয়াম গোসহ অন্য সন্দেহভাজনরাও এখন আর পুলিশের পর্যবেক্ষণে নেই বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে এপিজি। তবে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ ও ফিলিপিন্সকে এ ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করতে পারলে বাংলাদেশ কালো তালিকার ঝুঁকিতে পড়বে না। পাশাপাশি গেল মাসের শুরুতে এফবি আইর এক তদন্তে বলা হয়েছিল, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ জড়িত। তাদের দেয়া এ তথ্য যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবু বাংলাদেশ কালো তালিকার ঝুঁকিতে পড়বে না। ফেড, সুইফটকে দায়ী করতে পারলে এবং অন্য হ্যাকার গ্রুপকে চিহ্নিত করতে পারলে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হতো বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আসলে কে বা কারা জড়িত, তা এখনও জানা না গেলেও সম্প্রতি ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে, রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সাইবার অপরাধী গোষ্ঠী এ চুরির সঙ্গে জড়িত। তদন্তের স্বার্থে নাম পরিচয় গোপন রেখে সংশ্লিষ্টরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘ড্রাইডেক্স’ নামের কথিত সাইবার অপরাধী গোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্তত ১২টি ব্যাংকে এ হামলা চালায়। এ সাইবার অপরাধী গোষ্ঠী রাশিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে এ অপকর্ম ঘটাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমটি আরও জানায়, কথিত ওই সাইবার অপরাধী গোষ্ঠী ‘ড্রাইডেক্স’ নামের একটি ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করে চুরির ঘটনা ঘটায়।

তদন্ত শুরু করেছে ইউএস এ্যাটর্নি অফিস ॥ এদিকে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ইউএস ডলার চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে ম্যানহাটনে অবস্থিত ইউএস এ্যাটর্নির অফিস। অর্থ লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফট ব্যবহার করে ফেব্র“য়ারিতে সংঘটিত এই অর্থ চুরির ঘটনাটির তদন্ত করছেন নিউইয়র্কের দক্ষিণাংশের জেলার ইউএস এ্যাটর্নি প্রিত ভারারা। বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরির প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে দ্য ফেডারেল রিজার্ভ এবং অন্যান্য আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকগুলোকে জালিয়াতি করে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা পর্যালোচনা করতে বলে। সাইবার চুরির উদ্যোগ নেয়ার লক্ষণ খুঁজে বের করতে গত মাসে এফবি আইয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এফবি আই কর্মকর্তারা জানান, সংস্থাটি বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কাজ চালাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের অপরাধটি কে করেছে তা এখনও বের করতে পারেনি। এই চুরির বিষয়ে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ব্যবস্থা নিয়েছে বা তাদের ভূমিকা পর্যালোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি কংগ্রেসনাল কমিটি তদন্ত করছে।

অর্থ উদ্ধার নিয়ে শঙ্কা ॥ ফিলিপিন্সে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরির ৮১ মিলিয়ন (আট কোটি ১০ লাখ) ডলার ফেরত দেয়ার আশা করেছিলেন দেশটির সিনেটের প্রেসিডেন্ট র‌্যাল্ফ রেক্টো। আগামী ৩০ জুন বর্তমান প্রেসিডেন্ট এ্যাকুইনো পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। আর এ সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত দেয়া হতে পারে বলে গেল মাসে দেশটির গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন। ঘটনার প্রথম দিকে ফিলিপিন্সের সংসদে এ বিষয়ে শুনানি হলেও এখন আর এ বিষয়ে দেশটি কোন কথা বলছে না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারের সুযোগ ‘খুব কম’ বলে জানিয়েছিল ফিলিপিন্সের তদন্তকারী সিনেট কমিটি ব্লু রিবন। ওই কমিটির সদস্য সের্গিও ওসমেনা গেল মাসে জানিয়েছেন, তার সন্দেহ, চুরি যাওয়া অর্থ এর মধ্যেই দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জিম্মায় থাকা রিজার্ভ চুরির অর্থের মধ্যে কিম ওংয়ের ৪০ লাখ ৬৩ হাজার মার্কিন ডলার এবং ৮৩ হাজার ডলার বাজেয়াপ্তকরণ করা হয়েছে। তাই যথাসময়ে পুরো অর্থ উদ্ধার সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ফিলিপিন্সের মধ্যে মানিলন্ডারিং চুক্তি নেই। ফলে আন্তর্জাতিক চুক্তি পালেরমো কনভেনশনে উভয় দেশই স্বাক্ষরকারী হওয়ায় এর অধীনে ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় আইনী সহয়তা দিতে পারে।

১৫ জুলাই ফেডারেল রিজাভ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক ॥ চুরি হওয়ার রিজার্ভ উদ্ধারে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। আগামী ১৫ জুলাই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। রয়টার্স জানিয়েছে, সুইফটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির চার মাস পরও তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি। অপরাধীদের ধরতে তদন্তে অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এখন চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ও ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর ও ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ রাজী হাসান আগামী ১৫ জুলাই নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মে মাসে সুইজারল্যান্ডে নিউইয়র্ক ফেড, সুইফট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সুইজারল্যান্ডের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল সুইফট ও নিউইয়র্ক ফেড।

বৈঠকের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার ছাড়াও ভবিষ্যতে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ জমা রাখার বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, চুরি হওয়া রিজার্ভ উদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেখানে অন্যান্য বিষয়ও আলোচিত হবে। ফেডারেল ব্যাংকের আমাদের এ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমরা তাদের গ্রাহক। অনেক কিছুই আছে আলোচনা করার মতো। তবে বৈঠকে সুইফটের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন কিনা তা জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেও সুইফটের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জনকণ্ঠ



মন্তব্য চালু নেই