স্ত্রীকে ‘আত্মঘাতী হামলা’র নির্দেশ দিয়েছিল মুসা!

পুলিশের অভিযান টের পেয়ে স্বামী মাঈনুল ওরফে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল স্ত্রী তৃষামনি। বিশেষ অ্যাপসে ‘সিক্রেট কনভারসেশন’ হয়েছিল তাদের মধ্যে। পুলিশ তাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলেছে বলে জানায় মুসাকে জানায় তৃষামনি। মুসা এ সময় তৃষামনিকে বলে ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ পরে নেওয়ার জন্য। চার মাসের শিশুসহ আত্মঘাতী হওয়ার পরামর্শ দেয় সে। কিন্তু শিশু সন্তানের কথা মাথায় রেখে স্বামীর সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সন্তানসহ আত্মসমর্পণ করে সে। ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দেয় তৃষামনি। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাসার নিচতলায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। রাতভর বাড়িটিকে ঘেরাও করে রাখা হয়। ভোরে ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। এ নিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে কয়েকঘণ্টা দেনদরবারও চলে। পরে সকাল ১০টার দিকে তৃষামনিসহ দুই নারী জঙ্গি তাদের সন্তান নিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী অন্য জঙ্গি নারীরা হলো রূপনগরের অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম ওরফে শীলা। এ সময় সারিকা নামে এক নারী সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক নারী ও পুলিশের গোলাগুলিতে আফিফ কাদেরী আদর নামে এক তরুণ নিহত হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে এক অভিযানে আফিফের বাবা তানভীর কাদের নিজেই আত্মহত্যা করে মারা যান। ওই সময় আফিফের জমজ ভাই তাহরীম ও মা আবেদাতুল ফাতেমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।খবর বাংলাট্রিবিউনের।

কাউন্টার টেরোজিম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘বেশিরভাগ নারী জঙ্গিরা তাদের স্বামীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় তৃষামনি তার স্বামী মাঈনুল ওরফে মুসার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করা তৃষামনির গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা এলাকায়। দক্ষিণখানের ওই বাসায় ওঠার আগে স্বামীর সঙ্গে তারা উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকতো। ’ ২০১৪ সালে তৃষামনির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তৃষামনির বাবার নাম আবদুস সামাদ।

সিটি সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণকারী তৃষামনি জঙ্গি স্বামীর সঙ্গে থাকলেও জঙ্গিবাদ ততটা পছন্দ করতো না। ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে তার স্বামী তাকে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করেছিল বলে দাবি করে। অন্যদিকে আত্মসমর্পণকারী আরেক নারী জেবুন্নাহার ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের ধোনাইতরিতে। তার বাবার নাম মমিনুল হক মজুমদার। মায়ের নাম জোহরা আক্তার চৌধুরী। মা জোহরাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে শীলাকে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শীলা জানিয়েছে, সে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। বছর দু’য়েক আগে তার স্বামী কানাডায় গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। পরে স্বামীর চাপে তিনি নিজেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। তারা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গেই জঙ্গিদের ভাষায় কথিত ‘হিজরত’ করে।

আজিমপুর থেকে আশকোনায় শীলা

গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের তিন দিন আগে আশকোনায় জঙ্গি মুসার আস্তানায় যান শীলা। উদ্দেশ্য ছিল মুসার শিশু বাচ্চাকে দেখতে যাওয়া। উত্তরায় অবস্থানের কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ১০ সেপ্টেম্বর ওই বাসাতেই বসেই তিনি আজিমপুরে অভিযানের খবর পান তিনি। আজিমপুরের বাসা থেকে তার এক মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার খবরও পান। পরবর্তী সময়ে ওই শিশুকে নানি জোহরার হেফাজতে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি সেখানেই থেকে যান। সাংগঠনিকভাবে তাদের থাকা-খাওয়ার সব খরচ বহন করতো মঈনুল ওরফে মুসা।

সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, গুলশান হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও শীলা ও তৃষার অনেক তথ্য জানা রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। তাদের রিমান্ডে নিয়েও এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় মুসা

আশকোনার বাসা ভাড়া নিতে পুলিশের ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেছিল মাঈনুল ওরফে মুসা। তবে মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হিসেবে নিজের পরিচয় যেমন ভুয়া দিয়েছিলেন, তেমনি জাতীয় পরিচয়পত্রও দিয়েছিলেন ভুয়া। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, রাজধানী বা রাজধানীর আশেপাশের কোনও এলাকাতেই মুসা অন্য কোনও নামে আরও একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছেন।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুসার প্রকৃত নাম মাঈনুল। তার সাংগঠনিক নাম হলো মুসা। তারও গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করে মুসা। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। পরে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের লাইফ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

সিটি সূত্র জানায়, আশকোনার বাসায় প্রতি শুক্রবার আসতো মুসা। দুই-একদিন থেকে চলে যেত। তার সঙ্গে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মুসা ওই বাসায় আসে। শুক্রবার তার আসার কথা থাকলেও আসেনি। সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, মুসার সঙ্গে ওই বাসায় সেলিম ও ফিরোজ নামে দুই ব্যক্তি যাতায়াত করতো। কাউন্টার টেররিজম কর্মকর্তারা এই দুই ব্যক্তিকেও খুঁজছে।



মন্তব্য চালু নেই