সৌরভের যে ১০ সিদ্ধান্ত ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছিল

সচিন রমেশ টেন্ডুলকারের থেকে তিনি যখন ব্যাটনটা হাতে নিচ্ছেন, ক্রিকেটবিশ্বের রিলে রেসে ভারত তখন বেশ পিছনে। অর্ধমৃত ভারতীয় ক্রিকেটকে তখন আইসিইউতে পাঠিয়ে দিয়েছে বেটিং দুর্নীতি। পর পর ম্যাচ হারতে থাকা বিধ্বস্ত ভারতকে সঠিক ট্র্যাকে ফেরানোর কঠিনতম দায়িত্বটা নিলেন সৌরভ। ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করল ভারতের ক্রিকেট ভাগ্য। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাতে তিনি যখন ব্যাটন তুলে দিয়েছেন, ভারতকে তখন রীতিমতো ভয় পেতে শুরু করেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ধোনির হাত ঘুরে সেই ব্যাটন এখন বিরাটের হাতে। বিরাটের তরুণ ব্রিগেডের কাছে প্রত্যাশা পূর্ববর্তী দুই দুর্দান্ত অধিনায়ককে টপকে যাওয়ার। আজকের ভারতীয় দল যে আগ্রাসন, যে তারুণ্যে বলিয়ান, তার আমদানি হয়ছিল সেই সৌরভের আমলেই। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক দাদার এমন কয়েকটি সিদ্ধান্ত, যা ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

দলে উইকেটকিপার রাহুল দ্রাবিড়ের অন্তর্ভুক্তি: কেরিয়ারের শুরু থেকে তখনও পর্যন্ত মোটামুটি তিন নম্বরেই ব্যাট করতেন রাহুল। ক্যাপ্টেন সৌরভ তাঁকে উইকেটকিপিংয়ের বাড়তি দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে দলে ব্যাটিং গভীরতা অনেকটা বেড়ে যায়।

ওপেনার সেওয়াগ: লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, যে কিছুটা অফ স্পিনও করতে পারে। তখনও পর্যন্ত এটাই ছিল বীরেন্দ্র সেওয়াগের পরিচয়। সৌরভ বুঝতে পারেন, এমন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকে লোয়ার মিডলে নামিয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। তাঁকে দিয়ে ওপেন করানো

শুরু করেন সৌরভ। ফল মেলে চমকপ্রদ।

অবসর ভেঙে শ্রীনাথের প্রত্যাবর্তন: ২০০৩ বিশ্বকাপের আগেই অবসর নিয়েছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। সৌরভ বুঝেছিলেন, অনভিজ্ঞ ভারতীয় বোলিংকে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিতে পারবেন শ্রীনাথই। সৌরভের কথায় দলে ফেরেন শ্রীনাথ। বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্সও ছিল যথেষ্টই ভাল।

ইডেন টেস্টে তিন নম্বরে লক্ষণ: ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ছ’নম্বরে নেমেছিলেন ভিভিএস লক্ষণ। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকেই তিন নম্বরে পাঠান সৌরভ। লক্ষণের ব্যাটেই ভারতীয় ক্রিকেটে ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয় পায় ভারত।

আগ্রাসী মনোভাবের আমদানি: সৌরভের আগে এই মনোভাবের বড়ই অভাব ছিল ভারতীয় দলে। ফ্লিনটফের শার্ট খোলার বদলা লর্ডসের ব্যালকনিতেই নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভারতীয় দলে আগ্রাসী মনোভাবের সেই শুরু।

সামনে থেকে নেতৃত্ব: ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রথম ম্যাচে সিঁটিয়ে থাকা দলকে চাগিয়ে তোলে তাঁর ১৪৪। পাল্টা মারের সেই ইনিংসই সিরিজে পরবর্তী সময়ে এগিয়ে রাখে ভারতকে।

ব্যাটিং অর্ডারে কাইফকে ওপরে তোলা: ২০০৩ বিশ্বকাপে আনোয়ারের শতরানের সুবাদে ২৭৩ রনের বড় স্কোর করে পাকিস্তান। জবাবে সচিনের বিধ্বংসী ইনিংসে ভর করে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসা ভারত আচমকা পরপর উইকেট খুইয়ে চাপে পড়ে যায়। ম্যাচে দ্রাবিড়, যুবরাজদের আগে কাইফকে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরবর্তীকালে কাইফকে উপরে নামিয়ে একাধিক ম্যাচ জেতে ভারত।

অনভিজ্ঞ হরভজনকে দলে নেওয়া: অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে তেমন পারফর্ম করতে না পারা হরভজন এক সময় ভেবেছিলেন ক্রিকেট থেকে অবসরের। নির্বাচকদের সঙ্গে প্রায় যুদ্ধ করে হরভজনকে দলে নিয়েছিলেন তিনি। হরভজনের অফ স্পিনে কাত হয়ে সিরিজ হারে অস্ট্রেলিয়া।

মেঘলা হেডিংলেতে টসে জিতে ব্যাটিং: মেঘলা আবহাওয়ায় পেস সহায়ক উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সৌরভ। হরভজন এবং কুম্বলেকে চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনের উইকেটের সুবিধা দেওয়ার জন্য এই সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। টেস্টে ইংল্যান্ডকে ইনিংস ও ৪৬ রানে হারিয়ে বিদেশের মাঠে অন্যতম সেরা জয় তোলে ভারত।

ইডেন টেস্টে সচিনকে দিয়ে বল করানো: ঐতিহাসিক ইডেন টেস্ট মনে থাকবে লক্ষণ-রাহুল জুটির অনবদ্য ব্যাটিং এবং হরভজনের বোলিংয়ের জন্য। কিন্তু পঞ্চম দিনে ম্যাচ প্রায় বাঁচিয়ে দেওয়া অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে সাহায্য করেছিল সচিনের লেগস্পিন। রাজুকে সরিয়ে সচিনকে সে দিন বল করানো ছিল দাদার মাস্টারস্ট্রোক।

স্টিভ ওয়কে অপেক্ষা করানো: সৌরভ কোনও দিন স্বিকার না করলেও উদ্ধত অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে টসের আগে অপেক্ষা করিয়ে সিরিজ শুরুর আগেই চিন মিউজিক শুনিয়েছিলেন তিনি। সেই স্ট্র্যাটেজিতে প্রথমেই ব্যাকফুটে চলে যায় অজিরা।

তরুণ ব্রিগেডকে তুলে আনা: ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী প্রজন্মের উত্থান সৌরভের হাত ধরেই। জাহির-যুবরাজ-হরভজন-সহবাগদের মতো ম্যাচ উইনারদের তুলে এনেছিলেন তিনিই।-আনন্দবাজার



মন্তব্য চালু নেই