সৌদি বাদশার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব বিশ্ব শান্তি, উন্নয়ন এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর কল্যাণে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। রোববার বিকেলে জেদ্দার আন্দালুসে বাদশাহর আল সালাম প্রাসাদে সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই ঐকমত্য হয়।

বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তারা জানান, প্রায় ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী এবং সৌদি বাদশাহ বৈঠকে উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্ভবনাগুলোকে খতিয়ে দেখার বিষয়েও একমত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ৫ দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশকে শীর্ষ ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ’র মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র।’ সৌদি বাদশাহ দুইবার একই শব্দ উচ্চারণ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর দুই দেশের মধ্যে নতুন অধ্যায়ের সূচনাই শুধু নয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও এর মাধ্যমে এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হল বলেও পররাষ্ট্র সচিব অভিমত ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক যে পূর্ণতা লাভ করল, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। সৌদি বাদশাহ বিশ্ব শান্তি, প্রগতি এবং উন্নয়নে বাংলাদেশের বিরাট ভূমিকা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শান্তির অন্বেষণ, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

দুই নেতা বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রপন্থার বিরুদ্ধেও তাদের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন বলেও পররাষ্ট্র সচিব জানান।
সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশের ‘ইসলামী জোট’-এ শরিক হওয়ার বিষয়ে বাদশাহ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই কনসেপ্টের দুটি অংশ রয়েছে একটি সামরিক কেন্দ্রিক এবং অপরটি রাজনৈতিক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোন অংশে যোগ দেবে.. এটা বাংলাদেশের ওপরই নির্ভরশীল.. এটা বাধ্যতামূলক নয়, এটা স্বেচ্ছা কেন্দ্রিক। আমরা বাংলাদেশের এই জোটে যোগদানের বিষয়টাতেই খুশি।

পররাষ্ট্র সচিব এবং প্রেস সচিব জানান, দুই নেতা বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে একযোগে কাজ করে যাওয়ার বিষয়েও অঙ্গীকার করেন।

সৌদি বাদশাহ বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের ইসলামী জোটে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এর মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব বরাবরই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের একটি বিশেষ জায়গা দখল করে রয়েছে। কারণ মক্কা এবং মদীনায় দুটি পবিত্র মসজিদের অবস্থান রয়েছে এবং সৌদি আরব রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মভূমি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী উপলদ্ধি করতে হবে। যাতে কেউ এর ভুল ব্যাখ্যা করে কোনরকম ফায়দা লুটতে না পারে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি সারাদেশে ৫৬০টি ইসলামিক কেন্দ্র গড়ে তোলায় তাঁর সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এর মাধ্যমে ইসলামের শান্তির বাণী সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই আসল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং সকল ধর্মাবলম্বীদের বসবাসের উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য বলেও জানান।

প্রধানমন্ত্রীর ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের বিষয়ে সৌদি বাদশাহ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা তাঁর (শেখ হাসিনার) কনসেপ্টের বিষয়ে খুব খুশি এবং এ বিষয়ে সহযোগিতাও করতে চাই।’ তিনি বিষয়টি বাংলাদেশে গিয়ে দেখে আসার জন্য একজন সিনিয়র মন্ত্রীকেও বাংলাদেশে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ইসলামী সংস্কৃতি, আরবি ভাষা এবং ইসলামের মূল দর্শন প্রচারের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সকল অপপ্রচার দূর করতে ঢাকায় একটি ইসলামিক এরাবিক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথাও জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যেই ডিজিটাল ভার্সনে বাংলা, আরবি এবং ইংরেজী ভাষায় কোরআন শরিফ প্রকাশ করেছে। যাতে করে তরুণ প্রজন্ম সহজেই পবিত্র কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

এই বিষয়টি শুনে সৌদি বাদশাহ খুবই আনন্দিত হন এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশে শিল্পায়ন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁর সরকার একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো থেকে বেশ কয়েকটি তাদের জন্যও বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। যেখানে তারা কৃষিভিত্তিক শিল্প যেমন এগ্রো প্রসেসিং, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম দূরীকরণে ‘মাল্টি মডেল ট্রান্সপোর্ট সিষ্টেম’ গড়ে তোলায় সৌদি আরবের সহযোগিতা কামনা করেন।

এর উত্তরে সৌদি বাদশাহ বলেন, এটি একটি খুবই ভালো প্রস্তাব। এ বিষয়ে তিনি সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। সৌদি বাদশাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়। প্রধানমন্ত্রী সুবিধাজনক সময়ে সৌদি বাদশাহকে বাংলাদেশ আসার আমন্ত্রণ জানান। সৌদি বাদশাহ আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, তিনিও বাংলাদেশ সফরের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন।

দুই নেতা আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।সূত্র: বাসস।



মন্তব্য চালু নেই