সোনার বাংলায় সোনার মানুষ গড়তে চাইলে সদিচ্ছাই যথেষ্ট

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয় কম বেশি সবারই থাকে। সুস্থ বিবেক মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করে। আর অসুস্থ বিবেক আইন অমান্য করতে উদ্ভুদ্ধ করে। ন্যায় বিচার কায়েম করতে হলে সবার জন্য একই হুকুম বলবৎ থাকা দরকার। একই আইনের অধিনে একজন শা¯িত পাবে আর অন্যরা পুরস্কৃত হবে এমনটি ভাবা অনুচিত। নিজের দূর্বলতা ঢাকতে গিয়ে অপরকে দমন করতে আইন করা হলে শান্তির চেয়ে অশান্তিই বেশি। আর এমন আইনকে লোকেরা কালো আইন হিসেবে জানে ও মানে। আর কালো আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ থাকেনা। আইনের শাসনের নামে আইনের অপ-প্রয়োগ করা হলে তার ফল ভাল হয়না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে আইন করা হলে তা দীর্ঘস্থায়ী ও ফলপ্রসূ হয়।

সম্প্রতি সময়ে মৌখিক আইন জারি করার মাধ্যমে চলছে কথিত গণতন্ত্রের চর্চা। কোন কোন আইন নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিরোধীদল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া নেহায়েৎ অন্যায়। যে কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলাম লেখক মো: আবুসালেহ সেকেন্দার যথার্থই লিখেছেন, ভিন্নমত দমন করা মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী। আমরা জানি, পৃথিবীর কোন শাসক জোর-যুলুম করে সুনাম কুড়িয়েছেন এমনটি দেখা যায় না। বরং অপমানের ঝুলি কাঁধে নিয়েছেন, এটাই চিরন্তন সত্য। সাধারণের অধিকার সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অন্যের অধিকার হরণ হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এমন স্বোচ্ছাচারীতা মোটেই কাম্য নয়। প্রতিপক্ষকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে আইনের শাসন চালু করতে হয়। খাবার, পানীয়, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টিভি, ডিস, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ইত্যাদি সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম করা যায়না। তেমনি ভাবে কাউকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার, গুম-খুন, হত্যার রাজত্ব কায়েম করে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া যায় না। কথিত গণতন্ত্রে এমন হাজারো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। এখন যারা সরকারি দলে আছেন, তারাও যে যুলুমের শিকার হয়নি তা অস্বী^কার করা অর্থহীন।

দেশে এমন একটি অবস্থা বিরাজ করছে যে, নির্যাতিত পরিবারগুলো কান্নারও সুযোগ পাচ্ছে না। নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকেও পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। অন্যায় করে একজন আর শাস্তি পেতে হয় অন্যদের। বাবা অভিযুক্ত বলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে পরীক্ষা কেন্দ্রের গেট থেকে ধরে এনে শাস্তি দেয়ার আগে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। তবে এরকম অমানবিক কাজের মতো আরো অনেক বিষয় অতীতে শুরু হয়ে এখনও অব্যহত আছে। এ ধরণের কর্মকা- কখনোই স্বস্তি দেয় না। এছাড়া লেখালেখি করলে কিংবা গণমাধ্যমে কথা বলতে গেলে, হামলা, গ্রেফতার, দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও বা¯তব চিত্র ভিন্ন। ঠুনকো অযুহাতে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ, দৈনিক আমার দেশ, টকশো অনুষ্ঠান ফ্রন্ট লাইন বন্ধ করানো, শৃংঙ্খলা জনিত অযুহাত দেখিয়ে সব ধরণের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, তাফসির মাহফিল-র এর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া মোটেই যুক্তি সঙ্গত নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বেকার হওয়ায় সন্তানদের লেখা পড়াব বন্ধ হয়ে গেছে। মানবেতরভাবে চলছে তাদের জীবন।

সর্বত্রই মৌখিক আইনই বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে মনে হয়। যে কারণে সাধারণ মানুষেরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে ইতিবাচক সংবাদের তুলনায় নেতিবাচক সংবাদই বেশি স্থান পাচ্ছে। দেশটি ভাল চলছে না খারাপ চলছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দুর্বৃত্তদের সহিংসতা ও কঠোর হস্তে দমন-পীড়নের যাতাকলে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এতে করে দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতির নামে যারা এ কাজগুলো করছে ভবিষ্যতে তাদেরকে এর চেয়েও ভয়াভহ পরিস্থিতি মেনে নিতে হতে পারে। সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল সবার জন্যই স্বেচ্ছাচারীতা, দলীয় বিবেচনায় আইন প্রণয়ন, অপরকে নির্মূল করার মানসিকতা বর্জন করা উচিত।

অনিয়মই যেখানে নিয়ম, সেখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম আছে তা বলা যায় না। আইন যখন সবার জন্য সমান। কেউই আইনের উর্ধ্বে নন। এ কথাটি আইন প্রণেতাদেরও মনে রাখা উচিত। কেউ যদি যুলুম করে, আর যুলুমকরা হয়েছে এটা জেনে বুঝেও অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে সময়ের ব্যবধানে তাদের ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় এটাই মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত। ব্যক্তি ও দলের স্বার্থ সংরক্ষণে যারা আইন ভঙ্গ করে অভ্যস্ত, তাদের মুখে প্রায়শই আইনের শাসনের কথা শোনা যায়। এ ধরণের দ্বৈত চরিত্রের ফলে অশান্তির আগুন ঘরে ঘরে জ্বলছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদের দায়বদ্ধতা অন্যদের তুলনায় বেশি। সে দৃষ্টিকোন থেকে বলছি, আমাদের রাষ্ট্রীয় অভিভাকরা কি কখনও ভেবে দেখেছেন, তারা কখনো অন্যায় আচরন করছেন কি না ? আইনের শাসনের নামে কালো আইন হচ্ছে কিনা ? সর্বোপরি বলতে চাই, সোনার বাংলায় সোনার মানুষ গড়তে চাইলে সদিচ্ছাই যথেষ্ট।



মন্তব্য চালু নেই