সৌদি মেয়েরা চোখ ঢেকে রাখবে কেন?

মন্দ কাজ বন্ধ করার একটা কমিটি আছে সৌদি আরবে, সেই কমিটির লোকেরাই বলেছে তারা হাতছানি দেয়া চোখ নিষিদ্ধ করেছে। কোন চোখ হাতছানি দেয়, ডাকে, কী করে বুঝবো। যে চোখে কাজল, সেই চোখ তো বটেই, তার ওপর চোখের আকার আকৃতি দেখেও বলে দেয়া যায়, এ চোখ সুন্দর। কিন্তু মুশকিল হলো, সুন্দর হলে সে চোখ নিষিদ্ধ। অসুন্দর চোখ! ক্ষতি নেই। আর যে চোখে কাজল নেই! কাজল না থাকলেও সে চোখ নিষিদ্ধ হতে পারে, শুধু সুন্দর হওয়ার অপরাধে।

সৌদি মেয়েদের চোখ ঢেকে রাখতে হবে : মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কালো পর্দায় ঢেকেও শান্তি হচ্ছে না সৌদি আরবের। এখন থেকে মেয়েদের চোখও ঢেকে রাখতে হবে, বিশেষ করে যে চোখগুলো সুন্দর। পুরুষের যৌন উত্তেজনা বাড়বে এ কারণে সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে মেয়েদের।

চোখ ঢেকে রাখার অর্থ তাদের কোনো কিছু দেখার অধিকার নেই। তারা চোখ থাকতেও অন্ধ। আমার প্রশ্ন, পুরুষেরা উত্তেজিত হলেই বা অসুবিধে কী! উত্তেজনা সামলানোর ক্ষমতা কি সৌদি পুরুষের নেই?

যদি না থাকে, তবে সৌদি পুরুষেরা শিখুক কী করে সামলাতে হয়, আর মেয়েরা চোখ খুলে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করুক। নীতিপুলিশের জ্বালায় মেয়েরা বাধ্য হচ্ছে আস্ত এক একটা কালো কফিনের মধ্যে ঢুকে যেতে। চোখগুলোরও এখন থেকে বোরখা পরতে হবে নয়তো পিঠে বেত্রাঘাত পড়বে। নীতিপুলিশকে পুষছে কিন্তু সৌদির রাজপরিবার। এই ক’মাস আগেই উপহার দিয়েছে তিপ্পান্ন মিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কি পারতো না সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলতে? সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি করছে। ষাট বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। ছোটখাটো কোনো অংক নয় এটা। তো এই সময় যুক্তরাষ্ট্র কি সৌদি আরবকে পারতো না বলতে তোমরা মেয়েদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করো, তারপর অস্ত্রের বেচা কেনা হবে।

সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মুখ খোলে না, কিন্তু নানা দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন, সাবধান করে দিচ্ছে পৃথিবীর অনেক দেশকেই। শুধু সৌদি আরব, যে দেশটি মেয়েদের মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন করছে, সেই দেশটিকেই সাবধান করছে না। এর একটিই হয়তো কারণ, এমন বিলিয়ন ডলারের খদ্দেরকে যুক্তরাষ্ট্র অখুশি করতে চায় না।

সৌদি আরব মেয়েদের মানুষ বলে মনে করে না। ধর্ষিতা হলে শাস্তি দেয় ধর্ষিতাকেই। আত্মীয় পুরুষ ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে কোনো মেয়ের কথা বলা, চলাফেরা বারণ। স্বামীর অনুমতি ছাড়া মেয়েদের ঘরের চৌকাঠ পেরোনোও নিষেধ। বৈষম্যের সহস্র শৃঙ্খলে বন্দী নারী। নারী হয়ে জন্ম নিয়েছে বলেই ভুগতে হচ্ছে বর্বর পুরুষের এই পৃথিবীতে।

ধর্ম আর পুরুষতন্ত্রের শাসন সৌদি আরবে। সুতরাং যদি কারো ক্ষমতা থাকে সৌদি মেয়েদের দুর্দশা দূর করার, পরাধীনতার অন্ধকার থেকে তাদের উদ্ধার করার, সে সৌদি পুরুষ। কিন্তু মেয়েদের বিরুদ্ধে সৌদি আইনের প্রতিবাদ করতে এ পর্যন্ত খুব বেশি সৌদি পুরুষকে দেখা যায়নি।

মেয়েদের বিরুদ্ধে এই আইনটিকে ইতোমধ্যে একশ ভাগ সমর্থন করেছেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর পুত্র নাইফ। এই আইনে যে কাউকে যখন তখন ফেলা যায়, যখন তখন মেয়েদের জেলে পাঠানো যায়, পিঠে কঠিন বেত্রাঘাত করা যায়। কমিটির লোকেরা দুনিয়ার মুসলিমদের কাছে আবেদন করেছেন, নতুন আইনটিকে সকলে যেন সমর্থন করে, যেহেতু এই আইন ইসলামের ওপর ভিত্তি করে রচিত।

যৌন উত্তেজনা বেড়েছে, সে তোমার সমস্যা, আমার নয়। তোমার সেটি বাড়ে বলে আমার নাক চোখ মুখ সব বন্ধ করে দেবে, এ হতে পারে না। আমি তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নই যে তুমি আমাকে আদেশ দেবে আমি কী পরবো, কীভাবে পরবো, কোথায় যাবো, কতদূর যাবো।

তোমার সমস্যার সমাধান তুমি করো। আমাকে তার দায় দেবে কেন! যৌন উত্তেজনা আমারও আছে, সে কারণে তোমার নাক চোখ মুখ ঢেকে রাখার দাবি আমি করিনি। আমার ইচ্ছে হলে আমি চোখে কাজল পরবো, তোমার সমস্যা হলে আমার চোখের দিকে তাকিও না। যদি তারপরও চোখ চলে যায় মেয়েদের চোখের দিকে, আর তোমার ঈমান নিয়ে তুমি মুশকিলে পড়ো, তাহলে শক্ত করে নিজের চোখ দুটো বেঁধে রাখো কালো কাপড় দিয়ে। এর চেয়ে ভালো সমাধান আর হয় না। … জানি না সৌদি মেয়েরা কবে বলবে এমন কথা।

আজ সারা বিশ্ব হাসছে সৌদি আরবের কাণ্ড দেখে। নামতে নামতে তারা কতদূর নিচে নেমে গেছে। মেয়েদের সর্বাঙ্গ নিষিদ্ধ করেছে, এমনকী চোখও। ওদের এতো ঘৃণা মেয়েদের প্রতি। বুঝি না সব মেয়েকে কেন আজও মেরে ফেলছে না। কেন মৃতবৎ বাঁচিয়ে রাখছে। সম্ভবত মেরে ফেলছে না বা বাঁচিয়ে রাখছে একটিই কারণে, পুরুষেরা যেন ওদের ভোগ করতে পারে।

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা



মন্তব্য চালু নেই