সেপটিক ট্যাংক যেন মৃত্যুফাঁদ

সেপটিক ট্যাংক। বাড়ি বা ভবনে পানির চাহিদায় বেশ গুরুত্ব বহন করে।

অবশ্য বন্ধ ট্যাংকে এক প্রকার বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়। এ কারণে এটি সময়ের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়। তবে আতঙ্কিত না হয়ে ট্যাংক পরিষ্কার করার আগে সতর্ক থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

১০ জানুয়ারি উত্তর মাদারটেকের ফজল মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামেন ভাড়ায় আনা শ্রমিক আতিয়ার রহমান। ট্যাংকের মুখ খুলে তিনি ভেতরে নামেন। এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে, চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একইভাবে গাজীপুরের কালিগঞ্জের বাসায় ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামেন দুই ভাই মাসুম ও জুয়েল হোসেন। ট্যাংকে নামার সঙ্গে সঙ্গে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধারে নামেন মাসুম। জুয়েলকে উদ্ধার করা হলেও মাসুমকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে তাকে বাঁচাতে গিয়ে অচেতন হয়ে মারা যান ভাই মহসিন।

এ ছাড়া মাঝে মধ্যেই এ ধরনের অচেতন রোগীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য (ঢামেক) নিয়ে আসেন স্বজনেরা। এদের মধ্যে অনেকেই অনেক দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি যান। আবার কেউ কেউ মারা যান। মেডিক্যাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২ বছরে সেপটিক দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ৩০ জন। আর গেল বছরের ১০ মাসে ২৩ জন মারা গেছে। এ কারণে এটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে সংস্থাটি মনে করে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেক দিন বন্ধ থাকায় সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে জৈব পদার্থ সৃষ্টি হয়ে তা পচন ধরে। তৈরি হয় মিথেন ও হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো গ্যাস। কেউ ভেতরে নামলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি দাহ্য যেকোনো পদার্থের স্পর্শ পেলে সেক্ষেত্রে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। কেননা ট্যাংকে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি হতে পারে। এতে দেয়াল সহজে ধসেও পড়তে পারে। ট্যাংক বহুদিন পরিষ্কার করা না হলে সেটি অনেক বড় একটি গ্যাসের চেম্বারে পরিণত হয়।

গ্যাসের বিষক্রিয়া খুবই তিব্র। এ অবস্থা ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাড়ির ট্যাংকে বিরাজমান আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মাফিজুর রহমান রাজধানীতে ‘সেনিটেশন বিষয়ক’ এক অনুষ্ঠানে বলেন, ট্যাংকের মুখ খোলার পরপরই ট্যাংকে প্রবেশ করা যাবে না। সময় দিতে হবে। পানি দিয়ে পুরো ট্যাংক ভরে ফেলতে হবে। পানি পরিষ্কারের সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ ছাড়া ট্যাংকের মুখ অনেকক্ষণ খোলা রাখা যেতে পারে। আর কয়েকদিন পরপর ট্যাংকের মুখ খোলা রাখলে সেক্ষেত্রে অনেকাংশে গ্যাস জমাট বাধার সম্ভাবনা কম থাকে।



মন্তব্য চালু নেই