সেই হাসনাত নিরাপত্তা হেফাজতে, স্বীকার করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত আর করিম নিরাপত্তা হেফাজতে আছেন বলে স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এই কথা বলেন।

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় হাসনাত সন্দেহভাজনদের একজন বলে জানিয়েছে পুলিশ। জঙ্গিরা সেদিন ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করলেও হাসনাত বা তার পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দেয়। ওই রেস্টুরেন্টের ভেতরের ঘটনার ভিডিওচিত্রে হাসনাতকে জঙ্গিদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। জঙ্গিরা তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞের ছবি প্রকাশ করেছে বলেও পুলিশের তদন্তে বের হয়ে এসেছে।

হলি আর্টিজানে কমান্ডো হামলার পর হাসনাত করিমের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়ি ফিরলেও হাসনাত ফেরেননি বলে অভিযোগ করছেন তার বাবা রেজাউল করিম। আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। তবে তাকে এখনও আদালতে তোলা হয়নি।

হাসনাতকে নিজেদের হেফাজতে রাখার কথা এতদিন ধরে অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। তবে তিনি জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে আছেন বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

হাসনাতের সঙ্গে একই দিন কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খানকেও পুলিশ আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। তবে তার বিষয়টিও স্বীকার করেনি পুলিশ।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে নরসিংদী থেকে রুমা আক্তার নামে এক নারীকে আটকের কথা জানিয়েছেন তার স্বজন ও স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে তাকেও আটকের কথা স্বীকার করেনি গোয়েন্দা পুলিশ।

তবে আর্টিজান হামলার ২৬ দিনের মাথায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেন হাসনাত করিম আটক আছেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে হাসনাত আর করিম নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংগঠনটির বিকাশে ভূমিকা রাখেন- গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন প্রমাণ পাওয়ার পর ২০১২ সালে তাকে বহিস্কার করে নর্থ সাউথ। এই হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্তরাই পরে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আর্টিজান হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথে হাসনাত করিমের ছাত্র ছিলেন। এই দুইজনের মধ্যে সখ্যের বিষয়টি রেস্টুরেন্টটিতে হামলার পর ধারণ করা সিসি ক্যামেরার ছবিতেও দেখা গেছে। জিম্মিদের হত্যার পর হাসনাত ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্বিঘ্নে থেকেছেন। এমনকি জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ছাদে উঠে ধূমপান করেছেন-এমন ছবিও এসেছে গণমাধ্যমে।

হাসনাত সরকারের হেফাজতে আছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানালেও তিনি কী বলেছেন তা বলেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাকে কেন আদালতে তোলা হয়নি, সে প্রশ্নের জবাবও পাওয়া যায়নি।

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে গেছে পুলিশ। এধরনের অভিযান আরো চলবে জানিয়ে জঙ্গিদের বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা বারবার বলেছি, এ দেশের মাটিতে কখনই সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে’।



মন্তব্য চালু নেই