সেই সন্ধ্যা এসেই নিয়ে গেল তাকে

আধুনিক বাংলা সংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক লাকী আখন্দ অসংখ্যা গানের সংগীতায়জন করেছেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- এই নীল মনিহার…, আবার এলো যে সন্ধ্যা.. আমায় ডেকো না…। এসব জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে একটি গান খুব রোমান্টিক ধাঁচের-

আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দু’জনে
চলো না ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…।

তরুণদের কাছে এ গানটি তুমুল জনপ্রিয়। এতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দ। তবে সেই ছোট ভাই যখন ১৯৮৭ সালে সবাইকে ছেড়ে অজানাতে চলে গেলেন তখন সে ভার মনে হয় সহ্য করতে পারছিলেন না লাকী আখন্দ। তাইতো ভাইয়ের মৃত্যুর পরপরই সংগীতাঙ্গন থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

গানের সেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিল শুক্রবার (২১ এপ্রিল) মিটফোর্ড হাসপাতালে তার জীবনে নেমে এসেছে সন্ধ্যা। যে সন্ধ্যায় তিনি চলে গেছেন অজানাতে। যেখানে নদী এসে এসে থেমে গেছে।

লাখী আখন্দের সংগীতায়জনে করা বিখ্যাত গানের মধ্যে আরো রয়েছে, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে…’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার..’, ‘মামনিয়া…, ‘বিতৃঞ্চা জীবনে আমার…’, ‘কি করে বললে তুমি..’ ‘লিখতে পারি না কোনও গান…, ‘ভালোবেসে চলে যেও না…’ প্রভৃতি।

লাকি আখন্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। তার শৈশব কেটেছে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে। শৈশবেই তার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানে সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। সুরকার হিসেবে আরো কাজ করেছেন এইচএমভি ভারত এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও। ১৯৬৯ সালে লাকি আকন্দ পাকিস্তানী আর্ট কাউন্সিল হতে বাংলা আধুনিক গান বিষয়শ্রেণীতে পদক লাভ করেছিলেন।

স্বাধীনতার পর পর নতুন উদ্যমে বাংলা গান নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার নিজের সুর করা গানের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। শিল্পীর সহোদর ক্ষণজন্মা হ্যাপী আখন্দের সাথে ছিলো তার আত্মার সম্পর্ক। ভাইয়ের মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। দুজনের যৌথ প্রয়াসে সূচিত হয়েছিলো বাংলা গানের এক নতুন ধারা।

১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে লাকি আখন্দের প্রথম সলো অ্যালবাম প্রকাশ পায়। তিনি ব্যান্ড দল হ্যাপি টাচএর সদস্য। জীবনের শেষ সময়ে তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক (সংগীত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই