সেই বাঙালি আমাজানকন্যা সারাহ্ কী করছেন?

অ্যাডভেঞ্চারে বাঙালি নারীরা যে পিছিয়ে নেই গত কয়েক বছর আগে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বাংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও ফিল্ম মেকার সারাহ্ বেগম। ২০০৯ সালে অ্যাডভেঞ্চারের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আমেরিকার গহীন অরণ্য আমাজানে গিয়েছিলেন। ২৯ বছর বয়সী সারাহ্ বিশ্বকে দেখিয়েদিয়েছেন যুদ্ধ নয়, আদিবাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তাদের জয় করা সম্ভব।

ইকুয়েডরের হুয়ারোনি আদিবাসীদের নিয়ে সারাহ্’র নির্মিত আধাঘণ্টার সেই তথ্যচিত্র ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। মাত্র ২১ বছর বয়সে অসাধারণ ওই তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে সারাহ অকল্পনীয় কাজ করে ফেলেছিলেন। এছাড়া শেফিল্ড ডকুমেন্টরি ফেস্টিভ্যাল ও অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও জায়গা করে নিয়েছিল।

সারাহ্’র এই হুয়ারোনিদের জয় আর তার অভিনব অভিযান মোটেও সহজ ছিলো না। কেননা, এর আগে ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন যাজক ওই গোত্রের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কেউ প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারেননি।

সারাহ্’র যখন ১৪ বছর তখন একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন দাদা-দাদীর সঙ্গে দেখা করতে। দুই সপ্তাহের জন্য বেড়াতে এসে থেকে গিয়েছিলেন ১৬ মাস। প্রকৃতিপ্রেমী সেই কিশোরী মজে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। সেই কিশোরী সারাহ্’র প্রকৃতির প্রতি দুর্নিবার টানই তাকে নিয়ে গিয়েছিল আমাজানের ভয়ঙ্কর সুন্দর গহীন জঙ্গলে।

২০১৩ সালে আলোচনায় আসার পর থেকেই বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন সারাহ্। অ্যাডভেঞ্চারের টানে এখনো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চষে বেড়ান। তিনি ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্ট্রোগ্রামে সক্রিয়। এসব সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি গেল ফেব্রুয়ারি মাসে ঘানা ভ্রমণ করেছেন। গেল ২ মার্চ তিনি লন্ডনে ফিরেছেন।

সারাহ্ বেশকিছু ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র নির্মাণে যুক্ত ছিলেন। বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়ায় উপস্থাপক ও আলোচক হিসেবেও কাজ করেছেন। নারীদের সংগঠনেও ছিলেন বেশ সক্রিয়। তার কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের আলোচিত ডকুমেন্টারি ‘দ্যা লস্ট নেশন’, ‘লাইভ ইন দ্য ডরেন গ্যাপ’ (২০১৪), মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বত নিয়ে ‘বারসে অব আওয়ারকিয়া ভেলি’ ইত্যাদি। সর্বশেষ গেল ৫ মার্চ লন্ডনে রোটারি ক্লাবে সফল নারী হিসেবে একটি আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন। ২০১০ সালে সারের কিংসটন ইউনিভার্সিটি থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন সারাহ।

তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে দক্ষিণ আমেরিকার গহীন অরণ্য আমাজানে যান সারাহ্। সেখানকার ভয়ঙ্কর আদিবাসী হুয়ারোনিদের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ট সম্পর্ক। এমনকি তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য গোত্রের সেরা শিকারী হিসাবে পরিচিত গিংটোকে বিয়েও করেন। যার বয়স ছিল সারাহর দ্বিগুণেরও বেশি।

সারাহ্ তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, হুয়ারোনি গোত্রের সেরা শিকারীকে বিয়ে করতে গিয়ে তাকে যোগ্যতাও অর্জন করতে হয়েছে। শিখতে হয়েছে কীভাবে বড় বড় ঘাস বুনতে হয়। আর ব্লোপাইপ থেকে বিষাক্ত তীর ছুঁড়ে শিকার করতে হয়। হুয়ারোনি গোত্রের ‘বউ’ হওয়ার ঘটনাটিও যে মজার ছিল, তাও উঠে আসে এই তথ্যচিত্র নির্মাতার বর্ণনায়।

সারাহ্ বলেন, ‘আমাকে বয়স্করা বেশ পছন্দ করেছিল। কিন্তু কী ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমাকে একটা কুঁড়েঘরে ডেকে নেয়া হয়, সেখানে যারা ছিল, তারা সবাই নগ্ন ছিল। আমাকে বলা হল, তাদের মতো করে কাপড় পরতে হবে। যা এক টুকরো গাছের ছাল দিয়ে তৈরি। শুধু কোমরে পেঁচিয়ে রাখা হয়। এরপর একজন নারী আমার গায়ের কাপড় খুলে ফেলে এবং গোত্রের বয়ষ্করা আনন্দে তাদের ভাষায় চেঁচাতে থাকেন।’

এরপর সারাহ দেখতে পান, হুয়ারোনিরা তাদের নিজেরা পানীয়, যার নাম চিচা এবং ম্যাকাও পাখির পালক দিয়ে মুকুট তৈরি করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে জানানো হল, তারা আমাকে তাদের রাণী বানাতে যাচ্ছে। তারা আমাকে একটি নামও দেয়- ‘ইমিকা’, যার অর্থ হচ্ছে শেষ নাম। তখন বুঝতে পারলাম, এটা একটা বিয়ের আয়োজন।’

তবে শেষ পর্যন্ত সারাহ জানতে পারেন, এটা চিরাচরিত বিয়ে নয়, শুধুই একটা ‘সম্মানজনক’ সম্পর্ক। ওই গোত্রের মানুষগুলো এখন সারাহ্’র খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। আমাজন ছেড়ে এলেও তাদের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তিনি। তাদের দেখতে সেখানে আবারো যাওয়ার ইচ্ছে করে।

হুয়ারোনিদের কাছ থেকে ফিরে আসার বিষয় উল্লেখ করে সারাহ্ জানান, যে কাজের জন্য সেখানে যাওয়া, সেই কাজ ভালোমতো চলার পর একদিন পাকস্থলি সংক্রমণে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার প্রয়োজনে ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফিরে আসেন আধুনিক দুনিয়ায়। সূত্র: ডেইলি মেইল, টাইমস অব ইন্ডিয়া।



মন্তব্য চালু নেই