সেই ঝুমার মামলায় কারাগারে ‘বুড়ো মিয়া’

নাটকের অভিনয়ের সূত্র ধরে বাস্তবে প্রেম ও বিয়ে। এরপর সংসার। অনেকটা সিনেমার কাহিনীর মতো তাদের যুগলজীবন। এর মধ্যে এসেছে ঝড়-ঝাপটা। বুড়ো মিয়া নাটকের নায়িকা সিলেটের আলোচিত ঝুমা আক্তার ঝুমি জেলও খেটেছেন প্রায় তিন মাস। জোরপূর্বক ভাবীকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে সিলেটি নাটকের নায়িকা ঝুমা আক্তার কারাবরণ করেন। আড়ালে ছিলেন স্বামী জয়নাল আবেদীন পলাশ। নাটকের নাম তার ‘বুড়ো মিয়া’। -মানবজমিন।

এ কারণে জয়নালকে ‘বুড়ো মিয়া’ নামেই চিনেন সবাই। মা ও ভাইকে নিয়ে কারাবরণের পর ছাড়া পেয়ে ফের স্বামী জয়নালের কাছেই চলে আসেন ঝুমা আক্তার। সব ভুলে সংসারী হতে চেয়েছিল ঝুমা। কিন্তু জয়নালের প্রকৃত রূপ তার কাছে খোলাসা হয়ে গেলো অল্প দিনেই। প্রিয় স্বামীর নির্যাতনে ঝুমা আক্তারকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আর এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঝুমা স্বামী জয়নালের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করলে পুলিশ জয়নালকে কারাগারে পাঠিয়েছে। ঝুমা আক্তার ঝুমির বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকেরগাঁওয়ে।

পিতার নাম কাদির মিয়া। বয়স একুশ কিংবা বাইশ। রূপ যৌবনের কারণে সিলেটের যুব সমাজে ঝুমার রয়েছে বিশাল পরিচিতি। নাটক ও মডেলিংয়ের সুবাদে ঝুমা কয়েক বছর ধরে সিলেটের শোবিজ অঙ্গনে পরিচিতি পান। আর জয়নাল আবেদীন পলাশের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দিঘলী গ্রামে। পিতার নাম মৃত কাজিম উদ্দিন। তিনিও সিলেটের আঞ্চলিক নাটকের মানুষ। এ কারণে শোবিজ অঙ্গনে তার পরিচিতি। প্রায় দুই বছর আগে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত হয় ‘বুড়ো মিয়া’ নামের একটি নাটক। ওই নাটকে নায়ক ছিলেন জয়নাল আর নায়িকা ছিলেন ঝুমা আক্তার ঝুমি। সেই থেকে তাদের প্রেম শুরু। প্রেম থেকে এক পর্যায়ে নাটকের নায়ক-নায়িকা বাস্তব জীবনের যুগলজুটি হয়ে উঠেন। কিন্তু বাস্তব জীবনের যুগলবন্দি তাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝুমার পরিবার জানিয়েছেন, জয়নাল ধোঁকা দিয়ে ঝুমাকে বিয়ে করেছিল। ঝুমার আগের স্বামীকে কৌশলে ডিভোর্স দেয়ায় সে।

এরপর ঝুমাকে নিয়ে নতুন জীবন গড়ে। কিন্তু জয়নালের চোখ পড়ে ঝুমার ছোট বোন ও ভাবীর ওপর। তাদের সঙ্গেও গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আর এসব বিষয় নিয়ে দেখা দেয় পারিবারিক বিরোধ। এক পর্যায়ে জয়নালের প্ররোচনায় ভাবীই মামলা করেন ঝুমার বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল মা ও ভাই সহ ঝুমাকে। প্রায় ৬ মাস আগে ঝুমা গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাস কারাবরণ করেন। এরপর তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে ফের জয়নালের সঙ্গে ঘর সংসার শুরু করেন। কিন্তু জয়নালের বহুগামিতার কারণে তাদের সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। উঠে আসে যৌতুকের প্রসঙ্গটি। যৌতুকের দাবিতে ঝুমাকে জয়নাল অকথ্য নির্যাতন শুরু করেন।

ঝুমার পারিবারিক সূত্র জানায়, বিয়ের দুই মাস পর বুড়ো মিয়া স্ত্রী ঝুমার কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। ঝুমা রাজি না হলে তার ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতো জয়নাল। গত ৬ই মে রাত ১১টার দিকে ঝুমার কাছে আবার যৌতুকের টাকা চায়। ঝুমা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে ওই রাতে জয়নাল ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বেধড়ক মারপিট করে। ওই রাতে ঝুমা রান্নাঘরে অজ্ঞান অবস্থায় রাতযাপন করেন। সকালে জ্ঞান ফিরলে তাকে আবার মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে মুঠোফোনে ঝুমা বিষয়টি পরিবারকে জানালে তার ছোট ভাই রাজন এসে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ঝুমা ওসিসি সেন্টার থেকে রিপোর্ট এনে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে যৌতুক আইনে দরখাস্ত মামলা করেন। আদালত বিশ্বনাথ থানাকে মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দেন। তদন্তের পর বিশ্বনাথ থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে। বৃহস্পতিবার রাতে জয়নালকে আটক করে বিশ্বনাথ পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জয়নাল ‘বুড়ো মিয়া’ নামে মেয়েদের সঙ্গে নাটকের কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক বিয়েরও অভিযোগ আছে। স্ত্রী ঝুমার মামলায় তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই