সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাধা কাটছে না, ভেঙ্গে গেছে আলোচনা

মিয়ানমারে সু চির সঙ্গে সামরিক জান্তার আলোচনা ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রেসিডেন্ট পদে সুচির আসীন হওয়ার পথ খুলে দেয়া জন্য সামরিক জান্তার সঙ্গে সুচির দফায় দফায় বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে কোনো কাজ হয়নি। আলোচনার পথ রুদ্ধ করার জন্য সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণাও দিয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী ১০ মার্চ পার্লামেন্ট সদস্যরা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য ভোট প্রক্রিয়া শুরু করবে।

এর আগে মিয়ানমারে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ১৭ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

নির্বাচন এগিয়ে আনার মধ্যদিয়ে অং সান সু চির প্রেসিডেন্ট পাওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধন নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যে আলোচনা চলছিল তার আনুষ্ঠানিক অবসান হতে চলেছে।

গত বছর ৮ নভেম্বরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। নির্বাচনে দলটি প্রায় ৮০ শতাংশ আসন পায়। নিজ আসনে সু চিও জয়লাভ করেন।

কিন্তু সু চির দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে সাংবিধানিক বাধা রয়েছে। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানদের কেউ বিদেশি নাগরিক এমন ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির স্বামী যুক্তরাজ্যের নাগরিক ছিলেন। তার সন্তানও যুক্তরাজ্যের নাগরিক।

সু চিকে প্রেসিডেন্ট করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আর সংবিধান সংশোধনের জন্য দেশের সামরিক জান্তার সমর্থন প্রয়োজন। আর সেই সমর্থন আদায়ের জন্যই আলোচনা চলছিল। অর্থাৎ সুচির দল এনএলডি ও সেনাবাহিনী মধ্যে চলমান আলোচনায় অগ্রগতির যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল নির্বাচন এগিয়ে আনার মধ্যদিয়ে তা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

সূচি বলে আসছিলেন যে যেভাবেই হোক তিনি দেশ পরিচালনা করবেন।

মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, উভয় কক্ষ থেকে একজন করে মোট দুই জন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পাবে। আর সংসদের একচতুর্থাংশ আসনের স্থায়ী সদস্য সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরা তাদের মধ্য থেকে একজন প্রার্থী দেবে।

পার্লামেন্ট সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। হেরে যাওয়া বাকি দুই প্রার্থী ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবে।

মিয়ানমারে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ১৭ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন মনে করা হয়েছিল সংবিধান সংশোধন জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করতেই এই দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসির ইয়াংগুন প্রতিবেদক জন ফিশার বলেছেন, সংবধিান সংশোধন নিয়ে সূচি ও সেনা প্রধানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও আসলে ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। আলোচনার দরজা বন্ধে করতেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনলেন।

তবে বিদ্যমান বাস্তবতায় মনে করা হচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সূচি এমন একজনকে প্রার্থী করবেন যিনি হবেন সূচির বিশ্বস্ত সহযোগী।

এনএলডি কর্মকর্তা উইন হেইন বিবিসিকে বলেন, তাদের দল সংবিধান সংশোধনের চেষ্টাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দিয়ে যাবে।তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে অং সান সুচিই হবেন দেশের প্রেসিডেন্ট আগে আর পরে।

এ নির্বাচনের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ শুরু হবে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী সু চির হাত ধরেই অর্ধশতাব্দী পর মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই