সুন্দরবন বাঁচাতে চাই অয়েল সুইপার

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়ায় সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া কালো ফার্নেস তেল অপসারণে কাজ করতে পারছে না কাণ্ডারি-১০। তবে এতে যে পরিমাণ কেমিকেল আছে তাতে মাত্র এক ভাগ তেল ডুবিয়ে দেয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে রয়েছে বিশেষজ্ঞদের আপত্তি।তাই দেশের দক্ষিণ উপকূলের প্রায় তিন কোটি মানুষের ‘প্রাকৃতিক মা’ খ্যাত সুন্দরবনকে বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন অয়েল সুইপার জলযান। নদী, সমুদ্র বা জলাভূমি থেকে ভাসমান তেল দ্রুত চুষে নিতে সক্ষম এ অয়েল সুইপার জলযান রয়েছে এশিয়ার অনেক উন্নত দেশে। সিঙ্গাপুর মালেশিয়া বা আরব আমিরাত সরকারের সাহায্য নিয়ে সেখান থেকে দ্রুত অয়েল সুইপার জলযান আনা প্রয়োজন।বিশেষজ্ঞদের ধারনা সুন্দরবনকে রক্ষা করা এখন বাংলাদেশের জন্য চ্যলেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অয়েল সুইপার জলযান আনা হলে দ্রুতই রক্ষা করা সম্ভব হবে সুন্দরবনকে।

দেখা মিলছে না ডলফিনের: কয়েক বছর আগেও প্রাণিবিজ্ঞানীদের কাছে ইরাবতী ছিল হারিয়ে যাওয়া ডলফিন। বিশ্বের সবাই জানতো ইরাবতী ডলফিন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের একদল প্রাণিবিজ্ঞানী কয়েক বছর আগে সুন্দরবনসহ উপকূলে খুঁজে পান দুর্লভ ওই ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন।হারিয়ে যাওয়া ডলফিন ইরাবতীর সন্ধান মিলেছে সুন্দরবনে- এ খবরে তখন সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েল বোঝাই ট্যাংকার ডুবির পর তেল ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ওইদিন সকাল থেকেই শ্যালা নদীতে ডলফিনের অভয়াশ্রমে আর দেখা মিলছে না ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিনের।সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বাংলামেইলকে জানান, ইরাবতীসহ সুন্দরবনের ৬ প্রজাতির ডলফিন খুবই স্পর্শকাতর। তারা যখন বুঝেছে তাদের অভায়াশ্রম আক্রান্ত হয়েছে তারা দ্রুতই স্থান ত্যাগ করেছে এমনটিই মনে হচ্ছে। গত ৫ দিনে শ্যালা নদীসহ আশপাশের কোথাও কেউ ডলফিনের দেখা পায়নি। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ায় ডলফিন যদি সুন্দরবন ত্যাগ করে তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ড. শেখ ফরিদুল আরো বলেন, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪শ ৪৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে ৬৩টির বাস এই শ্যালা নদী এলাকায়। এ রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মিলছে না। আমাদের এ সম্পদ হারানোর জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ যারাই দায়ী তাদের একদিন জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

আবারো সুন্দরবনের ভেতরে নৌরুট : সুন্দরবনের শ্যালা নদীর ভেতর দিয়ে চলা অবৈধ নৌরুটে অয়েল ট্যাংকার ডুবির পর ওই রুটটি বন্ধ করে দেয় বিআ্ইডাব্লুটিএ। অয়েল ট্যাংকার ডুবে সুন্দরবনের ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ায় মহাবিপর্যয়ে পড়েছে সুন্দরবন। এ অবস্থার মধ্যে বিআইডাব্লুটিএ সুন্দরবনের সুপতি-কচিখালী নদী দিয়ে নতুন করে নৌযান চলাচলের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।আগামীকাল রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। শনিবার সুন্দরবন পরিদর্শন শেষে জয়মনি এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। মন্ত্রী আরো জানান, আগামী এক বছরের মধ্যে মংলা ঘষিয়াখালী নৌরুটের ড্রেজিং কাজ শেষ হবে। এরপর সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌচলাচল বন্ধ করা হবে। তবে প্রস্তাবিত এই নৌরুট নিয়ে রয়েছে সুন্দরবন বিভাগের চড়ম আপত্তি।

মংলায় আটকা ২ শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ: সুন্দরবনের অয়েল ট্যাংকার ডুবির পর বন্ধ করে দেয়া হয় অবৈধ ভাবে চলা শ্যালা নদীর চ্যানেলটি। ফলে মংলা বন্দরে আটকা পড়েছে ২ শতাধিক লাইটারেজ জলযান। এসব জলযানের মাস্টার ও ক্রুরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সারা দেশের সাথে মংলা বন্দরের নৌযোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মংলা বন্দরে অবস্থানরত ১১টি জাহাজে পণ্য উঠানো নামানোর কাজ দারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মংলা বন্দর হারবার মাস্টার খান মো. আখতারুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, সুন্দরবন বন বিভাগের উদ্যোগে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে ১০০ নৌকায় করে স্থানীয় দুইশ শ্রমিক ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে তেল অপসারণে কাজ শুরু করা হয়। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আমির হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন, দ্রুত তেল অপসারণে ২০০ শ্রমিক কাজ করছে। প্রথম দিন তোলা সম্ভব হয়েছে ৫ হাজার লিটার। এভাবে হাতুড়ে উপায়ে তেল তোলা হলে সময় লাগবে ৭৮ দিন। এখন প্রয়োজন ভাসমান অয়েল সুইপার জলযানের।OIL-SWEEPER-pic02



মন্তব্য চালু নেই