সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সুন্দরবন ধ্বংস করে বাংলাদেশের বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। এ দাবিতে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা হবে না, এটা হবে সমগ্র জাতির ব্যর্থতা।’

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন আয়োজিত রামপালের কয়লার তাপ বিদ্যুৎসহ সুন্দরবন বিধ্বংসী সব কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ ও জাতীয় ঐতিহ্য সুন্দরবন সুরক্ষার দাবিতে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় আলোচকরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের মদদে অরিয়ান গ্রুপ সুন্দরবনের ভেতরে আরও একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাঁয়তারা করছে।

তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ অবৈধ সরকারের কাছ থেকে সুন্দরভাবে কোনো দাবি আদায় করা যাবে না। জোর করেই আদায় করতে হবে। এতো আন্দোলনের পরেও সরকার তাদের অবৈধ বাজেট ঘোষণায় সুন্দরবনকে ধ্বংসের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ভিত্তিটাই হচ্ছে সুন্দরবন। একে ধ্বংস করে বিদ্যুতের প্রয়োজন বাংলাদেশের নেই। সুন্দরবন বিভিন্ন ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মায়ের মতো আগলে রাখে।’

গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ সর্বনাশা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাই, বিষাক্ত পারদ, কয়লা, বর্জ্য ধোঁয়া এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সুন্দরবন, পরিবেশ বিরল প্রজাতির ডলফিন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জীব বৈচিত্র্য, হরিণ, বানর ও মাছ, কৃষি ভূমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করবে।

প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পরিবেশ সুরক্ষা এজেন্সির (ইপিএ) তথ্য মতে, এ ধরনের প্রকল্প থেকে নির্গত সালফার ডাই-অক্সাইডের কারণে হৃদরোগ, অ্যাজমা (হাঁপানি), নাইট্রোজেন, ডাই-অক্সাইডের কারণে ফুসফুসের টিস্যুর মৃত্যু হয় এবং ক্যান্সারের বিস্তার ঘটায়, যা সর্বোপরি এসব প্রজন্ম মেধা ধ্বংস করে দেয়।

কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত দূষণকারী পদার্থের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১৩ হাজার পর্যন্ত মানুষ মারা যায় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বৈঠকে অন্যান্য বক্তারা বলেন, এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইন ১৯৯৫ ও সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এছাড়াও ইউনেস্কো ভিত্তিক ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অতি নিকটে এরূপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ রামসার কনভেনশনের সরাসরি লঙ্ঘন।

বৈঠক থেকে বক্তারা সুন্দরবনের পাশে বিধ্বংসী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করার জোর দাবি জানান।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন- অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন, লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শেখ তাহসিন আলী, ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেন, ড. মো. শাহজাহান, মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বেনু প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই