আইএস দমনের পরিকল্পনা ঘোষণা

সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বুধবার রাতে ইরাক ও সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামি স্টেটকে নির্মূলের এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এক ভাষণে তিনি বলেছেন, জঙ্গিদের দমন করতে প্রথমবারের মত সিরিয়ায় বিমান হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট। এছাড়া ইরাকে সামরিক অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

জাতির উদ্দেশে দেয়া টেলিভিশন ভাষণে আইএসকে নির্মূলের প্রত্যয় ব্যক্ত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন,‘আমেরিকানদের হুমকি দিয়ে কোনো গোষ্ঠী পৃথিবীর বুকে নিরাপদ থাকতে পারবে না।’ তিনি ইরাকে আরো ৪৭৫ জন মার্কিন সেনা পাঠানোরও ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নেবে না।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিরাট অংশ দখল করে ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছে ইসলামি স্টেট গোষ্ঠী। ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলার প্রতিবাদে সম্প্রতি তারা দুজন মার্কিন সাংবাদিককে হত্যা করার পর এদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন ওবামা।

ওবামার পরিকল্পনার প্রধান তিনটি কৌশল হচ্ছে:

ক. আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে ইরাক ও সিরিয়ায় একটি নিয়মানুগ বিমান অভিযান পরিচালানা করা।

খ. মিত্র দেশগুলোর স্থল বাহিনীকে আইএসর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য সমর্থন বাড়ানো। তবে এক্ষত্রে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে জোটের বাইরে রাখা হবে এবং তার কাছ থেকে কোনো সহায়তা নেয়া হবে না।

গ. জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ এবং সামরিক সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া যাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হয়ে কোনো বিদেশি যোদ্ধা তাদের সঙ্গে যোগ দিতে না পারে।

ঘ. আইএসের অগ্রসর অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক লোকজনের প্রতি মানবিক সাহায্য অব্যাহত রাখা।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইরাকে আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে দেড়শ’র বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এছাড়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ইরাকি ও কুর্দি সেনাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে ওবামা প্রসাশন।

আইএসকে দমনের জন্য বুধবার বড় ধরণের সামরিক জোট গঠনেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওবামা। তার এ লড়াই পরিকল্পনা অনুমোদন করায় মার্কিন কংগ্রেসকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। তবে ওবামা বলেন, তারা এটি অনুমোদন না করলেও তিনি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতেন।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, ওবামার ওই পরিকল্পনায় সিরিয়ায় আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট মার্কিন জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,‘আমি এটি স্পষ্ট করে ঘোষণা করতে চাই যে, যেসব সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে আমরা তাদের খুঁজে বের করবো, তা তারা যেখানেই থাকুক না কেন।’

তবে সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনী কোনো স্থল হামলা চালাবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের উৎখাতে একটি বড় ধরণের জোট গঠনের কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট একা কোনো সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না।

তিনি আরো বলেন, আইএসর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। আর এ লড়াই কবে নাগাদ শেষ হবে সে বিষয়েও তিনি কিছু জানাননি।

এর আগে গত বছর প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যূত করতে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের বিরোধিতার মুখে সে পরিকল্পনা থেকেব সরে আসেন তিনি।

তবে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে কাজ করবেন না বলে বুধবার ওবামা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও আসাদের বাহিনী ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছে। ওবামা এ সম্পর্কে তার ভাষণে বলেছেন,‘আইসিলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা আসাদ সরকারের ওপর নির্ভর করতে পারি না, যে নাকি নিজের দেশের লোকজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। ’ এর বদলে তিনি এ লড়াইয়ে সিরিয়ার বিরোধী দলগুলোকে আরো শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এদিকে আইএসকে মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী জোট গঠনের লক্ষ্যে বুধবার থেকে মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সফরের প্রথম দিনে তিনি বাগদাদে যান। মার্কিন বিমান বাহিনী ইতিমধ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছে। মার্কিন সামরিক অভিযানকে সহায়তার জন্য সম্প্রতি একটি ঐকমত্যের সরকার অনুমোদন করেছে ইরাকি পার্লামেন্ট। এছাড়া ইরাকি সামরিক বাহিনীর জন্য আড়াই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।



মন্তব্য চালু নেই