সিরাতুল মুস্তাকিম এর পথ এবং বায়াত সম্পর্কে আলোচনা

ইসলাম জেনে বুঝে মানতে গেলে দেখা যায় শরিয়তের সাথে সাথে মারেফতের জ্ঞান হাসিল করা প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষিত মানুষরা যখন তরিকত সম্পর্কে পড়াশুনা করে এবং তখন তারা খাজেগানে খাজা হযরত উয়ায়ছ আল কারণী রাহ. এর নাম হাদীস শরীফে দেখতে পায়। যেমন সহীহ মুসলিম শরীফের ৮৫ নং অধ্যায়ে ওয়ায়েছ কারণীর ফজীলত অধ্যায় পড়লে সেখানে খুব পরিষ্কার করেই রাছুল সা. ওমর রা.কে বলেছিলেন ওয়ায়েছকে দিয়ে তার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করাতে। এবং রাছুল সা. এও বলেছিলেন ওয়ায়েছ এর দোয়ায় অগনিত মানুষ বিনা হিসাবে বেহেস্তে যাবে। ওয়ায়েছ যখন আল্লাহর কাছে হাত উঠায় আল্লাহ্ তাঁর হাত খালি ফিরান না। আপনাদের সবার অবগতির জন্য একটি কথা স্মরন করিয়ে দিতে চাই যত তরিকায়ই থাকুক না কেন, কোন তরিকতের পীর অর্থাৎ কোন তাবেঈন সম্পর্কে রাছুল সা. কোন ভবিষ্যৎ বানী করে যান নাই। এমন কি হাদীসে যে আশরায়ে মুবাশশারা ১০ জন বেহেস্তীর মধ্যে ২য় ব্যক্তিকেও ওয়ায়েছ আল কারণীর রা. এর দোয়া নিতে বলেছেন রাসূল সা.। মানুষ যখন এসব পড়ে তখন তারা বাছ বিচার না করেই উয়ায়ছী তরিকতের পীরের নাম শুনলেই তার হাতে বায়াত নিতে চেষ্টা করেন খাজেগানে খাজার দোয়ায় সামিল হওয়ার আশায়। এরকম মানুষ গুলির জন্য চিন্তা হয়। ভালোর আশায় সেই ভুলই তো করছেন! আপনাদের সুবিধার জন্য এই কথাটি আমি বার বারই বলি খাজেগানে খাজার দোয়ায় অবশ্যই বিনা হিসাবে বেহেস্তে যাবে। কোরআন বিরোধী পীর এবং তার তালেবদের কোন ক্রমেই ভাবা উচিৎ হবে না; যে খাজার নামেই বেহেস্তের হকদার হবেন। উয়ায়ছ আল কারণী রাহ. পথ অনুসরন করতে না পারলে সে তরিকত কোন কাজেই আসবে না। বর্তমানে কিছু নামধারী পীর সাহেবগন দেখছেন উয়ায়ছী তরিকতের দিকে মানুষের ঝোক বেশী কারণ হাদীসেও খাজা উয়ায়ছ ব্যতীত কোন পীরের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই তারাও তাদের পূর্বের আকিদা পাল্টিয়ে উয়ায়ছী তরীকতের পীর হতে চেষ্টা করছেন। অন্য তরিকতের অনেক পির সাহেবরা তাদের নামের সাথে ব্যবহার করছেন উয়ায়ছী নেসবতে।

আপনাদের কাছে অনুরোধ মনে রাখবেন উয়ায়ছী তরিকতের সঠিক পীর সাহেবগন কোন মানুষ উয়ায়ছী তরিকতে দাখিল (বায়াত)হতে চাইলে উয়ায়ছী তরিকতের ওযুর দোয়ায় ওযু করিয়ে নিবেন। তারপর তওবা পড়াবেন তারপর বায়াতের বানী পড়িয়ে বায়াত করবেন। যদি কেউ না করেন বুঝতে হবে সে উয়ায়ছী নাম ব্যবহার করে চলছেন। উয়ায়ছী তরিকতেও বায়াত সম্পর্কে বর্তমানে নানান ধারনার কথাবার্তা বিদ্যমান। কেউ কেউ বলে পীরের সন্তানদের বায়াত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তারা মিথ্যা বলেন। তার প্রমান যে উয়ায়ছী তরিকতের প্রধান যিনি বাংলাদেশে প্রায় ২০০ শত বৎসর আগে ভারতের সিমলা থেকে এই তরিকতের ঝান্ডা নিয়ে এসেছিলেন। তিনি হলেন হযরত শাহ আব্দুর রহিম উয়ায়ছী (রাহ:) তাঁর দুই ছেলে সন্তানকে অপ্রাপ্ত বয়সেই বায়াত করে ছিলেন কোলে বসিয়ে। পরে শাহ সাহেবের আপন ভাই হযরত শাহ আব্দুল কাদের উয়ায়ছী রাহ. তাদের শিক্ষা দিক্ষা দিয়ে খেলাফতি দান করেন। উয়ায়ছী তরিকতের এক পির সাহেবের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন অনেক মানুষ বায়াত নেওয়ার পর পীরের কাছে আর আসেনা বিধায় আমরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রথমেই বায়াত করি না। যে লোক স্থায়ীভাবে তরিকত ধরে রাখে তাকে পুনরায় বায়াত করা হয়। পীর সাহেবরা নিজেরা বিধান নিজেদের স্বার্থে তৈরী করে নিয়েছেন। যারা তরিকত নেওয়ার পর সঠিক পথে ফিরে না কোরআনের ভাষায় তারা গাফেল। এই সব গাফেলদের সম্পর্কে আল্লাহ্ সূরা ফাত্হ এর ১০নং আয়াতে বলেছেন “আর যে ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে সে তো তা করবে নিজেরই অনিষ্টের জন্য!” আল্লাহ্ কোরআনে যেহেতু সব স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন সেখানে অতিরিক্ত পান্ডিত্য করা বেদাৎ জন্ম দেওয়ারই সামিল। তওবা বায়াত এর পূর্ব শর্ত যাকেই বায়াত করা হউক না কেন তাকে অবশ্যই উয়ায়ছী তরিকতের ওযুর দোয়ায় ওযু করিয়ে আগে তওবা পরিয়ে বায়াত করতে হয়। কোরআনে সূরা ফাহত ৪৮ এর ১০নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যারা বায়াত গ্রহন করে এবং তা সঠিক ভাবে পালন করে তাদের জন্য অচিরেই মহা পুরুষ্কার রেখেছেন।

মনে রাখতে হবে দুর্গন্ধ সবসময়ই খুব দ্রুত ছড়ায়। কোরআনে বায়াত করার প্রথা আল্লাহ নিজেই বলে দিয়েছেন ৪৮:১০ আয়াতে। সেটাই নিয়ম এর বাইরে যারা যেভাবেই বায়াত করেন সবই বেদাৎ। আমি অন্য তরিকতের কথা বলতে চাই না। আপনারা খেয়াল করে দেখে চিন্তা করবেন।

কোরআনে মুমিন নারী এবং পুরুষদের বায়াত করার ব্যপারে শর্ত আছে। আল্লাহ্ রাসূল সা.কে মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে বায়াত করার ব্যাপারে স্পষ্ট বলেছেন। কোন লোক বাবার অবাধ্য হয়ে এবং কোন নারী স্বামীর অবাধ্য হয়ে পীরের কাছে গেল সে কিভাবে মু’মিন থাকতে পারে?

৬:১১৬# যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।

উপরোক্ত আয়াতের কথা আমাদেরও খেয়াল রেখেই চলতে হবে। অধিকাংশ মানুষ যাই করবেন সেটাই সঠিক নিয়ম হতে পারে না। আপনারা আপনাদের চোখ, কান, বিবেক কাজে লাগান। না হয় যে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হতে হবে। এটাও আল্লাহ বলেছেন ৭:১৭৯ আয়াতে।
চিন্তা করে দেখবেন আমার কথাটি। আপনি যদি ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার গাড়ির টিকেট কিনেন সে টিকেট দিয়ে কি অন্য গাড়ি চিটাগাং নিয়ে যাবে? আমরা সকলেই জানি কোন মতেই এক জায়গার টিকেট দিয়ে অন্য জায়গায় যাওয়া যাবে না। অধিকাংশ মানুষ যখন পির সাহেবদের কাছে বায়াত হওয়ার জন্য যায় ওযু করে যায় আগে থেকেই। যদি কেউ ওযু না করে যায় পির সাহেবগন বা তার কোন প্রাক্তন মুরিদ বলেন ওযু করে আসতে। শরিয়তের মানুষগন তো জানেন শরিয়তের ওযু। শরিয়তের ওযু দিয়ে কি করে মারেফতে বায়াত হওয়া যায়? আশ্চর্য্য সেটা কারোরই চিন্তায় আসে না! এই সাধারন জিনিষটা চিন্তা করলেও তো বুঝা যায়; যে কেমন মানুষের আনুগত্য সে গ্রহন করতে যাচ্ছে! চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যেমন এক স্থানের টিকেট দিয়ে অন্যস্থানে যাওয়া হবে না; ঠিক তেমনি শরিয়তের ওযুতেও মারেফতের গন্তব্যে পৌচ্ছা যাবে না।

বর্তমানে আর এক জাত পীরের উদ্ভাবন হয়েছে যারা কিনা মহিলাদের খেলাফতি প্রদান করে মহিলা পীর বানিয়ে ছাড়ছেন। একটি কথা স্বরণ করিয়ে দিতে চাই এবং আপনাদেরও হয়তো জানা আছে আহলে বায়াতের সঠিক অনুসারী যত পীর ফকির আছে তারা সবাই বিদায় হজ্জের ভাষন সম্পর্কে অবগত। বিদায় হজ্জের শেষ ভাষনে অর্থাৎ গাদীর-ই-খুম এর ভাষনে আমাদের রাছুল সা. আহলে বায়াতকে মানতে বলেছেন। যদিও আহলে বায়াতের অধিকারীগনের মধ্যে মা ফাতেমাও সামিল ছিলেন। তবুও মা ফাতেমাকে এমনকি নারীদের মধ্যে আল্লাহর রাছুল সা. বলেছেন আদর্শ যে চার জন মহিলা তারা ছিলেন (ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া, ইছার মাতা মরিয়ম, খুয়াইলিদের কন্যা খাদিজা এবং মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা) এমনকি রাছুল সা. স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীনা আয়েশা এর নিকট হইতেও নারীদের খেলাফত পাওয়ার কোন প্রমান পাওয়া যায় না। যেসব পীর ফকির মহিলাদের খেলাফত প্রদান করেছেন অথবা সমর্থন করছে সেইসব মহিলা পীর এবং পুরুষ পীর উভয়েই গাফেল ভন্ড মুনাফিক। এদের কাছে বায়াত হওয়ার একমাত্র অর্থ হচ্ছে নিজেদেরকে আখেরাতের জন্য দোজখের হকদার বানানো। আল্লাহ কোন মহিলাকে নবী/ রাছুল হিসাবে প্রেরন করেন নাই। তাদের কোন বেলায়েত বা রেসালত নাই। কোন মহিলা ওলি ছিল; তার প্রমান নাই। সেমতে কোন মহিলা পির হতে পারে না। যেহেতু কোন ওলি বা পির ব্যতীত মাজার করা যায় না। সেহেতু মহিলাদের মাজার বানানোর কোন সুযোগ নাই। তারপর মানুষকে প্রতারনা জালে আটকে টাকা কামানোর ব্যবস্থা করেছেন বাংলাদেশে অনেক পির সাহেবগন।

মানুষের দম থাকা পর্যন্ত ইবলিশ তার পিছু ছাড়ে না, কাকে কখন কুমন্ত্রনা দিয়ে গাফেলে পরিনত করতে পারে সেই অশরীরি জীবটি সেটা মানুষ নিজেও জানে না। মনের অজান্তেই ইবলিশের পায়রবী শুরু করে দেয়। কাজেই আমার কথাগুলি না মেনে নিজেদের বিবেক জাগ্রত করুন। এবং আপনার সাথী ভাইটিকে বিবেক জাগ্রত করতে সাহায্য করুন। একটি অন্ধকে গর্থে পরে যাওয়া থেকে তো আপনি আপনি অবশ্যই আটকাবেন। যে ভাইটি জাহান্নামের দিকে যাচ্ছে তাকে ফেরানো সঠিক মনে করলে আল্লাহ রাছুল সা. এর দোহাই দিয়ে এই ফরিয়াদ জানাচ্ছি তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করুন।



মন্তব্য চালু নেই