সিদ্ধান্ত দেননি এরশাদ, নির্বাচনের মাঠে বিরোধীদল

কেন্দ্র দখল করে সিল মারা, পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটারদের ভোট দিতে বাধা, ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুললেও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দেননি প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় তার দলের ক্ষুব্ধ মেয়র ও কাউন্সিলরপ্রার্থীরা আবারো নির্বাচনের মাঠে ফিরে গেছেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উত্তর-দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন বর্জনের কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে পার্টি চেয়ারম্যানের কাছে ছুটে যান। দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রপ্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুলসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। এ সময় দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ঢাকা মহানগর জাপার আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, উত্তর আহ্বায়ক এস এম ফয়সল চিশতী, দক্ষিণের সেক্রেটারি জহিরুল আলম রুবেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করতে যাচ্ছে, এমন সময়ে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে সরকার প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়বে। নির্বাচন বিতর্কিত হয়ে পড়তে পারে, এ কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান দলের প্রার্থীদের জোরালো দাবির মুখেও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং দক্ষিণ ও উত্তরের ৮/১০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জিতিয়ে আনার ব্যাপারে নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়। পার্টির চেয়ারম্যানের আশ্বাস পেয়ে মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা আবারও নির্বাচনী মাঠে ফিরে যান।

জানা গেছে, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করতে যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে দলটির চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ জানান। এর পরই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

এদিকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় দলের অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতাকর্মী পার্টির চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সকাল থেকেই আমাদের সবকটি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। আমাদের অনেক পোলিং এজেন্ট ও নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারপরও পার্টি চেয়ারম্যান মামলার ভয়ে নির্বাচন বর্জন না করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ’

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে এরশাদের ‘বিশেষ সমঝোতা’র শর্তে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় উত্তর সিটির জাতীয় পার্টি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল জানান, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সকাল ১০টার মধ্যেই সরকার-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুগতরা কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। আমাদের সব পোলিং এজেন্টকে বের কওে দিয়ে ওপেন সিল মারা হচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার। এ অবস্থায় আমরা নির্বাচন বর্জন করে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে যাচ্ছি। তিনি সিদ্ধান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেব।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগরীর আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি অভিযোগ করেন, ভোটে জালিয়াতি হচ্ছে। সকালেই সরকার সমর্থিতরা দক্ষিণের সব কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। আমাদের পোলিং এজেন্ট বের করে তারা সিল মারছে। আমাদের সব প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করে চলে আসছে। সবাইকে কাকরাইল কার্যালয়ে আসতে বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে সকাল সোয়া ১০টায় দক্ষিণের সংরক্ষিত (৪৮.৫০,৫১) ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী শাহনাজ পারভিন অভিযোগ করেন, নির্বাচন বর্জন করে প্রতিকার চাইতে এখন যাত্রাবাড়ি থানায় এসেছি। আমি জবরদখলকারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করব।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা শহীদ জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সব কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের মেরে বের করে দিয়েছে। সরকারি ক্যাডারদের হাতে আমার কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই