সিটি কলেজের ছাত্রী-শিক্ষকের সেক্স ভিডিও ফাঁস

চলচিত্রের নায়িকাদের মত কুমিল্লা কোটবাড়ির সিটি স্কুল এন্ড কলেজের স্কুলের ইনচার্জ (শিক্ষক) ‘আবদুল কাইয়ুম’ নবম শ্রেণীর ছাত্রীর সাথে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ও ভিডিও ফাঁস হয়ে গেছে। কুমিল্লা সিটি কলেজের শিক্ষক ভিডিও কেলেঙ্কারির নিয়ে কুমিল্লা জুড়ে টক অব সিটিতে পরিনত হয়েছে। এ শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীর সাথে অবাধে যৌন মেলামেশা করছেন।

ওই ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামী স্ত্রীর মত বসবাসও করছেন। এ ঘটনা জানাজানির পর কুমিল্লা সিটি স্কুল এন্ড কলেজসহ অভিভাবকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কোচিংয়ের কথা বলে ছাত্রীদেরকে’মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে এবং প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্কের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে তাদের ব্ল্যাক মেইল করে অবাধে অনৈতিক কাজে মিলিত হতে বাধ্য করতো।

ছাত্রীকে বিয়ের প্রতিশ্র“তি দিয়ে লিভ টুগেদারের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় নগরীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে কুমিল্লা জেলা জুড়ে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠ ও তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছেন। সম্প্রতি সিটি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী লিজা আক্তার ও আফরোজা আক্তারসহ ওই শিক্ষকের লালসার শিকার একাধিক ভুক্তভোগী কর্তৃপক্ষসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এর আগেও গত ১ অক্টোবর ২০১৫ সালে এক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে করারও অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনা ও গতকালের ঘটনাসহ সকল অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিক ও পুলিশদের অর্থের মাধ্যমে ম্যানেজ করে আসার কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এর কারণে দিন ওই ধর্ষক আইবদুল কাইয়ুমের সাহস বেড়েই চলেছে এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের লালসার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোচিং সেন্টার ছাড়াও তাদেরকে নিয়ে বাসা বাড়ি ও হোটেলে পর্যন্ত গেছেন তেমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার সিটি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ওই ভন্ড প্রতারক, নারী লোভী শিক্ষক আবদুল কাইয়ুমের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। এ ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। মানববন্ধনেও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়।

এদিকে ছাত্রী নির্যাতনকারী লম্পট শিক্ষককের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সামাজিক আন্দোলন। একাধিক স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধারণ করা নগ্ন ভিডিও চিত্র ও ছবির মাধ্যমে তৈরী পর্ণগ্রাফীর মুলহোতা লম্পট শিক্ষক এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে কুমিল্লা সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানব বন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। গতকাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে ঘন্টাব্যাপী মানব বন্ধন ও সড়ক অবরোধ থেকে লম্পট শিক্ষক গং’র গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান মানববন্ধনকারীরা। ওই আবদুল কাইয়ুমের সন্ত্রাসী বাহিনীরা গতকাল শনিবার মানববন্ধনেও বাঁধা প্রদান করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটবাড়ি সিটি কলেজটি জামায়াতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। তবে আবদুল কাইয়ুমের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষকের এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে অভিভাবকরা উৎকণ্ঠসহ তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। আবদুল কাইয়ুম কোচিং পড়ানোর সুবাদের স্কুলের একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে এসব শিক্ষার্থীদের গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে মেলামেশা করতো এবং নগ্ন ভিডিও ধারণ করতো।

পরে নগ্ন ভিডিও দেখিয়ে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে মেলামেশা করতে বাধ্য করা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওই স্কুলের এক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে তার সাথে আবদুল কাইয়ুম মেলামেশার ভিডিও প্রকাশ্যে আসলে ছাত্রীর অভিভাবকসহ সহপাঠীদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আবদুল কাইয়ুমের মোবাইল ফোনে ধারন করা বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে মেলামেশার শতশত ছবি ও গোপন ক্যামেরায় ধারন করে ব্লেকমেইল করা চেষ্টা চালায়। পরে শিক্ষকের এ অনৈতিক কর্মকান্ড ফাঁস হওয়া ভিডিও ছবি ছড়িয়ে পড়লে কোটবাড়িতথা জেলা জুড়ে শুরু হয় আলোচনা।

কলেজ শিক্ষক আসাদ সত্যতা স্বীকার করে বলেন-আমার সহকারী শিক্ষক আবদুল কাইয়ুবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তা আমার বোধগম্য নয়।

ফারজান হোসেন ভূইয়া ও অভি ইসলামসহ দশম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের জাপটে ধরা, শ্লীলতাহানী করাসহ মারধরের অভিযোগ করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ করলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের লালসার শিকার লিজা আক্তার ও আফরোজা আক্তার একাধিক অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তারা কোন কণ্যপাত করেনি। এক ছাত্রী জানায়, স্যারের কাছে পড়তে গেলে তার মোবাইলে রক্ষিত বিভিন্ন নগ্ন ছবি আমাদেরকে দেখায়। আমরা এসব ছবি না দেখতে চাইলে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে তারিয়ে দেয়াসহ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ারও হুমকি দেন। পরে আমরা বাধ্য হয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ি।

একটি সূত্র জানায়, সুসজ্জিত স্কুলের কক্ষে ছুটির পর কোচিং ক্লাস করাতো প্রতিনিয়ত। আবদুল কাইয়ুম শিক্ষকতার অন্তরালে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য ওই কক্ষটি ভাড়া নিয়েছিল। স্কুলের অসংখ্য ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ করেছিল। একাধিক ছাত্রীর নগ্ন ছবিও আছে তাতে। স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় একাধিক ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর ছবি তুলেছে সে। এছাড়াও ওই শিক্ষক বেঞ্চে বসে থাকা কালীন সময়ে বিভিন্ন ছাত্রীর খুব কাছ থেকে বুকের ছবি তুলেছে। এছাড়াও তার মেমোরি কার্ডে দেশী বিদেশী পর্নো মুভি দিয়ে তাদেরকে ব্লেকমেইল করা হতো।

সুত্রের দাবী, শিক্ষকের বাসায় মেয়েদের ব্লাক মেইল করার সময় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে মনো ভয় দেখাতো। এছাড়াও মেয়েদের ঐ ভাড়া করা বাসায় নির্যাতন করার কাজগুলো মনো করতো বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছে।

১ অক্টোবর ২০১৫ইং তারিখে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ব্লেবমেইল করে তার সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। তার গোপনে ভিডিও করে তাকে দেখিয়ে প্রতিনিয়ত তার সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বাসা বাড়িসহ হোটেলে নিয়ে যেতো ও ই শিক্ষক আবদুল কাইয়ুম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোটবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের আর কিছু বলার নেই। ওই শিক্ষক খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে তাকে আমরা সম্মান করতাম শিক্ষিত মানুষ হিসাবে। কিন্তু এদের আসল চরিত্র এখন বের হয়ে এসেছে। এরা আসলেই নোংরা মানুষ। আবদুল কাইয়ুম সর্ম্পকে তিনি আরও বলেন, এরা সমাজের কীট। এদের বিচার হওয়া উচিত।

কুমিল্লার একাধিক নারী নেত্রী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান- সমাজের অবক্ষয় শেষ পর্যন্ত যখন শিক্ষক নামের এসব নরপশুদের গ্রাস করেছে তখন আর আশ্রয়স্থল থাকল কোথায়? শিক্ষকের পোষাকধারী এজাতীয় নরপশুদের যারা স্কুলগামী কোমলমতি মেয়ে শিশুদের ট্রাপে ফেলে ধর্ষণসহ তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সমাজ থেকে শুধু বহিস্কারই নয় গণধোলাই দিয়ে আইনের হাতে তুলে দেয়া উচিত।

এসব হায়েনাদের ছেড়ে দিলে কোন নারী বা শিশুই নিরাপদ থাকতে পারে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে এই ধর্ষক আবদুল কাইয়ুমকে গ্রেফতার সহ তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কর্তৃপক্ষের প্রতি।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ট্রাস্টে’র এক কর্মকর্তা বলেন, এ জাতীয় অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীর বিরুদ্ধে ফৌজাদারী দন্ডবিধি ছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের ধারায় মামলা হবে। তদন্ত শেষে আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল শেষে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে পারেন। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ভুক্তভোগী বা সংক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় একটি মামলা দায়ের করা।

সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আবদুল কাইয়ুম বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ড ও ছাত্রদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও মারধর করতো। এ অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। গত ১ অক্টোবর ২০১৫ সালে অন্য আরেক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে।



মন্তব্য চালু নেই