`সিটিং সার্ভিস’ বন্ধে নতুন বাংলা বছরে নারীদের নতুন উদ্বেগ

নতুন বাংলা বছরে যার যার প্রথম কর্মদিবসেই নতুন উদ্বেগ নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে কর্মজীবী নারীদের। গণপরিবহনের অভাবে নানা ধরনের ভোগান্তিতে নাকাল নারীদের জন্য নতুন উদ্বেগ হয়ে আসছে রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’-এর বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা।

রাজধানীর পরিবহন খাতে অনেক অনিয়মের একটি ‘সিটিং সার্ভিস’-এর নামে প্রতারণা। এ কারণে মজা করে কেউ কেউ একে ‘চিটিং সার্ভিস’-ও বলে থাকেন। প্রতারণা বন্ধে ১৫ এপ্রিল থেকে গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দিচ্ছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

কর্মজীবী নারীরা বলছেন, কিছু সমস্যা থাকলেও ‘সিটিং সার্ভিস’ তাদেরকে অনেক সুবিধা দিতো। এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেলে তারা নতুন আরেক সমস্যায় পড়বেন। কেউ কেউ বলেছেন, কারো জন্য এটা পৌষ মাস হলেও তাদের অনেকের জন্য সর্বনাশ।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হুর-এ জান্নাত বলেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হচ্ছে খবরটি শুনে খুব খারাপ লাগছে। সিটিং সার্ভিস থাকার পরও নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হতো, এখন সেই ভোগান্তি আরো বাড়বে।

তিনি বলেন: দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হলেও সিটিং সার্ভিস থাকায় এতোদিন খানিকটা সুবিধা নিয়ে বাড়ি ফেরা হলেও এখন একরকম লড়াই করে বাড়ি ফিরতে হবে। গণপরিবহণে উঠতে প্রতিদিন লড়াই করতে হবে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন: লোকাল হওয়ার কারণে সব স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠবে। বাসগুলোতে স্বাভাবিকভাবে ভিড় বেড়ে যাবে।

‘এতে নতুন লড়াইয়ের পাশাপাশি নারীদের শারীরিক হয়রানি আরো বাড়বে,’ বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

নারীরা বলছেন, প্রতিকার পেতে গণপরিবহনের সংখ্যা যেমন বাড়ানো উচিত তেমনি প্রত্যেক স্টপেজে বাসে উঠা ও নামার জন্য লাইন ধরার নিয়মেও কড়াকড়ি থ‍াক‍া উচিত।

‘এতে নারীরা কিছুটা ঝামেলা ছাড়া বাসে উঠতে ও নামতে পারবে,’ বলে মনে করেন আরেকজন কর্মজীবী নারী রাফিয়া আক্তার।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সিটিং সার্ভিস’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মের অভিযোগ ও ভাড়া নৈরাজ্যের কারণেই বন্ধ হচ্ছে ‘সিটিং সার্ভিস’।

তবে এটি বন্ধ হলে যাত্রীদের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না, বরং আগের চেয়ে যাত্রীরা আরও ভালো সার্ভিস পাবেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পরিচালক (অ্যাডমিন, ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার।

তিনি বলেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি দীর্ঘদিন ‘সিটিং’-এর নামে বেশি ভাড়া নেয়া, অল্প দূরে বেশি ভাড়া, ‘সিটিং’ বাস হওয়ার পরও বেশি যাত্রী নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম শুনে আসছিলে‍া। সেই অভিযোগে যাত্রীদের সুবিধা দিতেই ঢাকা শহরে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধ হচ্ছে।

‘এতে যাত্রীরা প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবেন,’ বলে মনে করছেন তিনি।

তার মতে: সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন কর্মজীবীরা। যারা এতোদিন অফিস সময়ে বাসে উঠতে পারতেন না তাদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমে অাসবে। নারী যাত্রীদেরও তেমন কোন ভাগান্তি সহ্য করতে হবে না।

নারীরা অবশ্য তেমনটা মনে করছেন না।

দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহন ব্যবহার করা সংবাদকর্মী সিরাজুম মুনিরা নীরা বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস’ আর লোকাল যাই বলেন– নারীদের গণপরিবহন ব্যবহারে অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটবে না।

‘তবে হ্যাঁ, সিটিং সার্ভিসে শুধু পাশের পুরুষটির কাছ থেকে হয়রানির শিকার হতাম, আর এখন পুরো বাসেই হয়রানির শিকার হবো। নিত্যদিন বাসে ঝগড়া করেই বাসায় ফিরতে হবে।’

নারীরা বলেন, কর্মজীবী নারীদের ভোগান্তি কমাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি নারীর জন্য আলাদা গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় তাহলে সমস্যা কিছুটা কমবে। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে যদি প্রশাসন কঠোর হয় আর পুরুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হয় তাহলে নারীদের গণপরিবহনে ভোগান্তি কমবে।

বাসে নিয়মিত যাতায়াত করা তাসলিমা অনেকটা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন: সংরক্ষিত আসন থাকার পরও নারীরা সেই আসনগুলো ফাঁকা পায় না। দাঁড়িয়ে থাকলেও নানা রকমের হয়রানির শিকার হতে হয়, প্রতিবাদ করলে সমস্বরে অনেকে বলে উঠেন, বাসে উঠলে অনেক কিছুই সহ্য করতে হবে।

‘এই যদি হয় গণপরিবহনের অবস্থা তাহলে নারীরা কীভাবে যাতায়ত করবে!,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন: আসলে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার আগে নারীদের কথা সরকারের একটু ভাবার দরকার ছিল।

গত ৫ এপ্রিল গণপরিবহনের ভাড়া সাধারণের সাধ্যের মধ্যে রেখে রাজধানীবাসীর পরিবহন সংকট নিরসনে ১৫ এপ্রিল থেকে মহানগরীতে ‘সিটিং বাস সার্ভিস’ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তখন থেকেই এ নিয়ে নানামুখি প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে নগরবাসী।



মন্তব্য চালু নেই