সিআইএ’র সঙ্গে দ্বন্দ্বের আভাস ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র দ্বন্দ্বের আভাস মিলেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে, ফ্লিনের শীর্ষস্থানীয় একজন সহযোগীকে বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়পত্র ননা দেওয়ার কারণে নতুন করে এই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। বিশ্বস্ত এক সূত্র পলিটিকোকে বলেছেন, সিআইএ ছাড়পত্র না দেওয়ার কারণ নিয়েও কিছুই বলেনি। অপর এক সূত্র একে ফ্লিনবিরোধী পদক্ষেপ আকারে দেখছে।

পলিটিকো বলছে, ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে এর মধ্য দিয়ে কার্যত ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনএসসি)-এর ওপর ফ্লিনের যে খুব বেশি প্রভাব নেই, তা নিশ্চিত হওয়া গেল। । গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা বাড়লো ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই উপদেষ্টার।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে মাইকেল ফ্লিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী রবিন টাউনলে। সংস্থাটির আফ্রিকা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রবিন। সম্প্রতি এনএসসি-র কাজের জন্য ‘অভিজাত নিরাপত্তা ছাড়পত্র’ চেয়েছিলেন রবিন টাউনলে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংবেদনশীলতার প্রসঙ্গ । তবে শুক্রবার তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, সিআইএ তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সংক্রান্ত পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত দুইজন ব্যক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, রবিন টাউনলে-র ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমোদন দিয়েছেন সিআইএ-র পরিচালক মাইক পম্পে। সিআইএ-র এমন সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত মাইকেল ফ্লিন ও তার সহযোগীরা।

দুটি সূত্র জানিয়েছে, রবিন টাউনলে-র অনুরোধ কেন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এ ব্যাপারে সিআইএ বিশদ কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি টাউনলে ও তার সহযোগীদের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাসের ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, “তারা মনে করছেন এটা সিআইএ-এর ভেতর থেকে মাইকেল ফ্লিন এবং তার সহযোগীদের প্রতি একটা ধাক্কা। ” সূত্রটি বলছে, ফ্লিন ও তার সহযোগীদের দ্বারা নিজেরা হুমকির মুখে বলে মনে করছে কিছু গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ, টাউনলে-র বিশ্বাস সিআইএ দুনিয়াজুড়ে চষে বেড়াতে পারছে না।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এনএসসি এবং সিআইএ-র মুখপাত্র। টাউনলে এবং হোয়াইট হাউসের প্রেস অফিস থেকেও এখনও পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।

ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সির সাবেক প্রধান মাইকেল ফ্লিন নির্বাচনি প্রচারণার সময় নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। যখন অন্য জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের প্রার্থিতার সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন তখন তাকে সঙ্গ দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী ফ্লিন। দুঃসময়ে পাশে থাকার পাশাপাশি ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি ইস্যুতেও তাকে বেশ সাহায্য করেছেন ফ্লিন। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, মুসলিমবিদ্বেষসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি বিতর্কিতও। বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে দেখা গেছে ফ্লিনকে।

২০১৬ সালে ‘দ্য ফিল্ড অব ফাইট: হাউ উই ক্যান উইন দ্য গ্লোবাল ওয়্যার এগেইন্সট র্যা ডিকেল ইসলাম অ্যান্ড ইটস অ্যালিজ’ নামের বইটি লেখেন ফ্লিন। তার সহলেখক ছিলেন রিগ্যান প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল লিডিন। বইয়ে ফ্লিন বলেছিলেন, ‘তথাকথিত রাজনৈতিক শুদ্ধতার পূজারী’ নন তিনি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরটিতে নিয়মিত হাজির হওয়ার কারণেও ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে ফ্লিনের বিরুদ্ধে। একবার চ্যানেলটির একটি অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দুই সিট পড়েই বসে থাকতে দেখা গেছে তাকে। পরে অবশ্য ফ্লিন বলেছিলেন, তিনি সিএনএন কিংবা অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর থেকে আরটিকে আলাদা করে দেখেন না।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুসলিমবিদ্বেষী টুইট করেন ফ্লিন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মুসলিমদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়াটা যৌক্তিক’। ওই অবস্থান থেকে কখনও সরে আসারা ঘোষণাও দেননি ট্রাম্পের এই উপদেষ্টা।

সূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স



মন্তব্য চালু নেই