সিঁড়িঘরের ভাড়া ৫৭ হাজার টাকা!

সম্প্রতি লন্ডনের উপকণ্ঠে ক্লাপহ্যাম এলাকায় বাসা ভাড়ার জন্য গিয়েছিলেন ২৩ বছরের অ্যালেক্স লোম্যাক্স। কিন্তু বাসা দেখে তো তার চোখ ছানাবড়া। সিড়ির নিচে ছোট্ট একখানা ঘর (যদি থাকে ঘর বলা যায়) যার মাসিক ভাড়া ৫শ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৭ হাজার ৬২৭ টাকা। সঙ্গে বিল বাট্টা তো আছেই। বাড়ি বলতে কেবল একটা খাট আটানো যাবে এতে। অথচ অনলাইনে এর বাহারি বিজ্ঞাপন দেখেই বাসা দেখতে ছুটে আসা অ্যালেক্সের।

এটি দেখার পর অ্যালেক্স তার টুইটারে ওই ঘরের ছবিসমেত পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সিড়ির নিচে একটা বিছানা পাতা। এটাই নাকি বাসা। দেখার পর আমি তো পুরাই ফিট।’

বাসা দেখার জন্য নটিংহ্যাম শহর থেকে ক্লাপহ্যামে ছুটে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। সেখানে গিয়ে তিনি যা দেখলেন তার ভাষাতেই শোনা যাক সে বর্ণনা। ‘বাড়িওয়ালা আমাকে বাসা দেখাতে নিয়ে গেলেন। প্রথমে দেখালেন কিচেন। এরপর সিড়ির নিচে নিয়ে গেলেন যেখানে একটি কাপবোর্ড রাখা আছে। তিনি বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন, ‘আপনাকে কিন্তু আরো তিনজনের সঙ্গে মিলেমিশে এখানে থাকতে হবে। ভাড়া মাসে ৫শ পাউণ্ড, সঙ্গে বিল।’

অ্যালেক্স তো তখন কেবল বেরিয়ে আসার ছুতো খুঁজছেন। শেষে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। তবে এ নিয়ে বিরক্ত অ্যালেক্স বলেন, ‘এটা তো পুরাই ধাপ্পাবাজি। জানেন, তখন আমার নিজের ওপরই রাগ হচ্ছিল।’ হ্যা, রাগ তো হতেই পারে সিড়ির নিচের একখানা সরু প্যাসেজকে ঘর বানিয়ে যদি কেউ ভাড়া দিতে চায় তাহলে কার না রাগ হয় বলুন। কেবল বাংলাদেশের বাড়িওয়ালারাই ভাড়াটিয়াদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার জন্য বসে থাকেন না-লন্ডনের বাড়িওয়ারা তো দেখি আরো এক কাঠি সরেস।

অথচ ‘london2let.com’ ওয়েবসাইটে কত বাহারি ভাষাতেই না বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞাপনের শেষে আবার কায়দা করে লেখা ছিল ‘কেবল বন্ধুবাৎসল এবং খোলামনের ব্যক্তিরা এ বাড়ির জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।’ আরও কি লেখা ছিল জানেন? ‘আমরা একজন ভালো সাবলেট সঙ্গী খুঁজছি যিনি তার ঘরে অবস্থান করতেই বেশি থাকতে পছন্দ করবেন।’ সেখানে আবার মুফতে একখানা খাট দেয়ার কথাও উল্লেখ ছিল। বাসা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করলে সেখানকার এক বাসিন্দা অ্যালেক্সকে বলেন, ‘এটি দেখে আপনি অবাক হচ্ছেন। কিন্তু এখানে এটাই শেষ ঘর যা এখনো অবশিষ্ট আছে। এটা ভাড়া হয়ে গেলে আপনি এখানে আর কোনো রুম পাবেন না।’

এ নিয়ে বিবিসি প্রতিবেদক ওই বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার দেখা পাননি। তবে স্পেয়াররুমডটকমইউকে ওয়েবসাইটের পরিচালক ম্যাট হাটচিনসন বিবিসি’কে বলেছেন, লন্ডনে বাড়ির বাজার কতটা মূল্যবান এই বিজ্ঞাপনটি তারই প্রমাণ। ক্লাপহ্যাম জংশনে এখন একটি গড়পড়তা রুমের জন্য মাসে ভাড়া গুণতে হয় ৭৪৮ পাউন্ড। সিড়ির নিচে হওয়ার কারণেই এটি ৫শ পাউন্ডে ভাড়া দেয়া হচ্ছে।

ম্যাট হ্যাটচিনসন বলেন, ‘আমরা এর আগে রান্নাঘর আর লিভিংরুম ভাড়া ‍দিতে দেখেছি। এখন সিড়ির নিচে ম্যাট্রেস পেতে সেটিও ভাড়া দেয়া হচ্ছে। কালে কালে আর কত কি যে দেখব!’



মন্তব্য চালু নেই