সাড়ে ৩ বছরেও মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মেলেনি তথ্য

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে লবিস্ট নিয়োগের জন্য প্রায় আড়াইশ কোটি পাচারের অভিযোগ উঠেছিল মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মীর কাসেম আলীর ‍বিরুদ্ধে। অভিযোগটি যাচাই করে প্রায় সাড়ে তিনবছর আগে অনুসন্ধানে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনো মামলাযোগ্য কোনো তথ্য-প্রমাণ যোগার করতে পারেনি সংস্থাটি।

সাড়ে তিনবছরের মধ্যে কয়েকবার চেষ্ঠা করে শুধুমাত্র মিউচুয়াল লিগ্যাল আন্ডারস্ট্যানডিং রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পাঠানো সেই এমএলএআর’র মাধ্যমে কোনো তথ্য না আসা পর্যন্ত অনুসন্ধান কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আসা টাকা পাচারের বিষয়টি এখনো অনুসন্ধানাধীন। তবে এই ক’বছরে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা সঠিক জানা নেই। তবে আপনি বলতে পারেন এই পর্যন্ত দুদক এই অভিযোগের ব্যাপারে কোনো তথ্য পায়নি।’

দুদক সূত্র জানায়, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে প্রায় আড়াই’শ কোটি টাকা (২৫ মিলিয়ন ডলার) চুক্তিতে ‘মার্কিন লবিস্ট ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’কে নিযুক্ত করার অভিযোগ উঠে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আসা এ অভিযোগ যাচাই করে ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য উপ-পরিচালক নূর হোসেন খানকে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে নূর হোসেন খান দুদকের বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ে বদলি হয়ে গেলে, ২০১৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব দেয়া হয় আরেক উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে। তিনি এই অনুসন্ধান কাজের ধারবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে এমএলএআর পাঠান।

দুদকে আসা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১০ মে ৬ মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে চুক্তি করেন মীর কাসেম আলী। পরে সিটি ব্যাংক এনএ’র মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার করে চুক্তির অর্থ সেই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নথি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ৭০০/১৩ স্ট্রিট, ১১ ডব্লিউ, সুইট-৪০০ ওয়াশিংটন ডিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ ও লবিং করাসহ মীর কাসেমের আলীর উদ্দেশ্য সফলের জন্য এ চুক্তিপত্র করা হয়েছিল। এ চুক্তিতে মীর কাসেম আলী এবং লবিস্ট ফার্মের পক্ষে জেনারেল কাউন্সেল জে ক্যামেরুজ স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর থেকে গত ৫ এপ্রিল ২০১১ সাল পর্যন্ত এ ৬ মাস মীর কাসেম আলীর উদ্দেশ্য সফল করতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং করার কথা। প্রয়োজনে ৬ মাসের জন্য চুক্তির মেয়াদ আরো ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাড়ানো যাবে বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী ফার্মটির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দুদক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগে উল্লেখিত সিটি ব্যাংক এনএ’র মাধ্যমে টাকা পাচারের বিষয় সম্পর্কে দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্চ করে এ সম্পর্কে কোনো তথ্য পায়নি। তাই ওই টাকা সৌদি আরব অথবা অন্য কোনো দেশ থেকে লবিস্ট ফার্মে পাঠানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোন দেশ থেকে, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে ওই লবিস্ট ফার্মের কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে, তাও এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি দুদকের কাছে। তাই এখনো পর্যন্ত মামলা করার মতো কোনো আমলযোগ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করতে পারেনি অনুসন্ধানী কর্মকর্তা।

তাই যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যাপারে কোনো টাকা পাঠানো হয়েছে কি না তা জানতে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে এমএলএআর পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি এখনো অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়েই আছে। আর এসব তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার অনুসন্ধান কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৭ জুন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীকে। পরে তার বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জতিক ট্রাইব্যুনাল-২। আজ মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই