সারিয়াকান্দির চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন গ্রামে বাল্য বিয়ের হিড়িক

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাল্য বিয়ের হিড়িক পড়েছে। চরাঞ্চল থেকে শুরু করে বিল এলাকার প্রতিটি গ্রামেই বাল্য বিয়ের আয়োজন চলছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের গ্রামে নিযুক্ত কাজী ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলেমিশে বাল্য বিয়ে প্রদানে সহায়তা করছেন। তারা সরকারের দেয়া কোন রীতিনীতি তোয়াক্কা করছে না। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেয়েও সময়মত যেতে পারছেন না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। ফলে ধুমধামের সঙ্গেই সম্পাদন হয়ে যাচ্ছে বাল্য বিয়ে। এ বিয়ে বন্ধ ব্যাপারে বিভিন্ন এনজিও কাগজে কলমে ব্যাপক তৎপরতা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তার কোন প্রভাব পড়ছেনা। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১২ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা গঠিত। দুই লক্ষাধিক লোকের বসবাস এ উপজেলায়। বেশিরভাগ এলাকা যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চর গ্রামে অধিকাংশ মানুষের বসবাস। প্রধানত কৃষি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা। তবে অধিকাংশ মানুষেরাই অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে নেই তাদের তেমন কোন জ্ঞান । আর এ কারণে অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন পারিবারিক সহিংসতা তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে অকালে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার। সংবাদ নিয়ে জানা গেছে, বাল্য বিয়ে আয়োজনের ক্ষেত্রে কেবল বাবা-মা’ই সহযোগীতা করছেন না। এক্ষেত্রে সমাজের অনেক সচেতন মহলের সহযোগীতায় প্রায় প্রতিদিনই সু-সম্পাদন হচ্ছে বাল্য বিয়ের অনুষ্ঠান। বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য আমেরিকার জনগনের পক্ষ থেকে (ইউএসএআইডি) প্লান বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগীতায় গ্রাম বিকাশ সংস্থা নামে এনজিও বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালিত করলেও তা কেবলমাত্র কাগজে কলমে সিমাবদ্ধ। তাদের নামমাত্র কর্মকান্ড এলাকায় বাল্য বিয়ে বন্ধের কোন প্রভাব পড়ছে না। স্থানীয় সুত্র গুলো জানিয়েছেন, বাল্য বিয়ে হওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসম্পর্কে সংবাদ। স্থানীয় সূত্র গুলো জানিয়েছেন এরইমধ্য উপজেলার কেবলমাত্র ৪টি ইউনিয়ন থেকে বহু বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্য ফুলবাড়ী ইউনিয়নের মাঝবাড়ি গ্রামে গত তিন মাসেই ৫টি বিয়ে হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। ওই গ্রামের তোতা প্রামানিকের মেয়ে ফুলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী লিমা আকতার, শ্রী মিঠু বর্মনের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রীমতি মিতা রানী, শহিদুল ইসলামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে শহিদা আকতার, আব্দুল মান্নানের মেয়ে ৮ম শ্রেণির পড়–য়া ছাত্রী সুবর্ণা আক্তার , ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে শাবনুর, একই গ্রামের ডাবলুর মেয়ে সাথী খাতুন, ওই গ্রামের মমেদআলী মন্ডলের ৫ম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে শান্তনা, আমতলী গ্রামের তুজু প্রামানিকের মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া, আজিজুল প্রামানিকের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আখি আক্তার, সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়–য়া ছাত্রী তাছলিমা আক্তার, সদর ইউনিয়নের পার তিতপরল গ্রামের রনজু আকন্দের ৮ম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে চামেলি আকতার, একই গ্রামের ছবরুলের ৯ম শ্রেণির পড়–য়া মেয়ে ছাবিনা আকতার, কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলারতাইড় গ্রামের মহাতাব আকন্দের ৯ম শ্রেণির পড়–য়া মেয়ে মনিকা আকতার, কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের উল্যাডাঙ্গা গ্রামের শাহিন কাজীর ৭ম শ্রেণির পড়–য়া মেয়ে রেহেনা আকতার, চর শোনপচা গ্রামের কিনু মিয়ার ৭ম শ্রেণির পড়–য়া ছাত্রী চায়না আকতার। এছাড়াও সর্বশেষ বোহাইল ইউনিয়নের ধারাবর্ষা চর গ্রামের কালাম মিয়া ৫ম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে কাজলী আকতারের বিয়ে হয়েছে একই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আশারাফ আলী (১৫) সঙ্গে। ধারাবর্ষা চরের রশিদ আহম্মেদ খান, কালাম উদ্দিন খান জানান, চরগ্রামের এ বাল্য বিয়েটি সম্পাদন হয়েছে ভূঁয়া জন্মনিবন্ধন ও ভূঁয়া সাক্ষী বানিয়ে। বিয়ের রেজিষ্টিতে উল্লেখিত সাক্ষী হাবিজার খান, মিন্টু, আশকর আকন্দ ও হরমুজ আকন্দ জানান, সাক্ষীর ঘরে আমাদের নাম উল্লেখ করার বিষয়টি আমরা পরে জানতে পারলে হতভাগ ও বিষ্মিত হয়েছি। এ বাল্য বিয়েটি সম্পাদন করেছে স্থানীয় বিবাহ নিবন্ধক মোঃ আবুল কালাম মুন্সি। অন্যদিকে কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য উদ্দ্যোক্তা শাহিন আলম সুজন মিয়া মোটা অংকের টাকা যৌতুকের লোভে পাশ্ববর্তী ধুনট উপজেলার গুলারতাইর গ্রামের ভুলু মিয়ার ৯ম শ্রেণির পড়–য়া মেয়ে শাবানা আকতার ইতিকে বাল্য বিয়ে করেছে। উক্ত সুজন কাশাহার গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলের এ বাল্য বিয়ের বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, উপজেলায় বাল্য বিয়ের হিড়িক পরার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা বাল্য বিয়ে সম্পর্কে কোন সংবাদ যে কোন সময় পাওয়া মাত্রই তরিৎ ব্যবস্থা নিয়ে তা বন্ধের ব্যবস্থা করছি। এ ক্ষেত্রে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ সহ সকলের সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই