‘সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে, তবু ২ কন্যাকে নিয়ে আমি গর্বিত’

আমার মেয়েরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত হয়েছে। তাতে আমার দুঃখ নেই। আমার দুই কন্যাকে নিয়ে আমি গর্বিত। আজ ওদের নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আমি শুনেছি দেশের অন্যান্য স্থানেও মেয়েরা এর প্রতিবাদ করেছে। মেয়েরা নিজেরাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে সমাজে একটা প্রতিরোধ তৈরি হবে। একটা সময়ের পরে বখাটেরা আর কটুক্তি বা অন্যায় করার সাহস পাবে না।’ কথাগুলো বলছিলেন সম্প্রতি রাজধানীর চিড়িয়াখানা সড়কে বখাটেদের কটুক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত কলেজছাত্রী মীম ও জীমের বাবা আহসান হাবিব।

বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এমন অনুভূতির কথা জানান জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) কর্মরত আহত কলেজছাত্রীদের বাবা। ১৯ অক্টোবর বুধবার চিড়িয়াখানা সড়কে বিসিআইসি কলেজ ছুটির পর বাসায় ফিরছিলেন দুই বোন ফারিহা হাবিব মীম ও আসওয়াদ হাবিব জীম। এ সময় কলেজের কাছেই জীবন করিম বাবু নামে এক বখাটে তাদের কটুক্তি করে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেন তারা। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বখাটে জীবন করিম। দুই বোনকে সে কিল-ঘুষির পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে পেটায় । বাঁশের আঘাতে পা ভেঙে যায় জীমের। আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান মীম। এ ঘটনায় মূল হোতা জীবনসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে শাহ আলী থানার পুলিশ ।

আহত মীম ও জীমের বাবা বলেন, ‘এই ঘটনায় ওরা আহত দু’জনের রাতে ভালো ঘুম হয় না। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়ে গেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা আজ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।’

বাবা হিসেবে নিজেকে সফল দাবি করে তিনি বলেন,‘আমার মেয়েরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। অন্যায়কে মেনে নিয়ে মাথা নিচু করে বাসায় ফিরে আসেনি। ওরা রুখে দাঁড়িয়েছে।সেটা করতে গিয়ে আশেপাশের লোকজনের সহায়তা পায়নি। লোকজন এগিয়ে আসলে হয়তো এই বখাটে গায়ে হাত তোলার সাহস পেতো না।’

জীমের ভাঙা পায়ে প্লাস্টার লাগানো থাকলেও তিনি এখন কিছুটা সুস্থ। কিন্তু বাঁশ দিয়ে পেটানোয় আঘাতপ্রাপ্ত মীম এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। শরীরে এখনও ব্যথা আছে। ব্যথার কারণে রাতে মীমের ভালো ঘুম হয় না বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা আহসান হাবিব।

তিনি বলেন, ‘জীমের পায়ের প্লাস্টার আরও এক সপ্তাহ পরে খোলা হবে।ওর তেমন কোনও সমস্যা নেই। যদিও প্লাস্টারের কারণে চলাফেরা করতে পারছে না। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে মীমের। ওর শরীরে ব্যথা রয়ে গেছে। শরীরের সর্বত্র বাঁশের আঘাতের চিহ্ন। মীম এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি।’

সুস্থ হয়ে কলেজে ফিরতে আরও অন্তত দুসপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন আহসান হাবিব। তবে বাইরে বের হওয়াসহ মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে মোটেও শঙ্কিত নন তিনি।

অন্যায় হলে মাথা নিচু করে বাসায় না ফিরে সকল মেয়েদের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান আহসান হাবিব। তিনি বলেন, ‘মীম ও জীমকে দিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। অন্যরাও করছে। সবাইকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। রুখে দিতে হবে এসব বখাটেদের।’

মীম ও জীমের ওপর হামলা মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মূল হোতা জীবন করিম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে লুৎফর রহমান নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরও কেউ সংশ্লিষ্ট ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন।



মন্তব্য চালু নেই