সারা বাংলাদেশের ন্যায় ভোলার ৭টি উপজেলায় ডিজিটাল রিক্সার ছোঁয়া ॥ রিক্সা চলে বিদ্যুতে

সাধারন রিক্সার আকৃতিতে রিচার্জেবল ব্যাটারী ও মোটর সংযুক্ত করে তৈরি করা হয় ডিজিটাল রিক্সা। এ রিক্সাগুলোর গতি স্বাভাবিক রিক্সার চেয়েও বেশি। আর এই গতি পায়ের নয়, তেলের নয়, গ্যাসের নয়; বিদ্যুতের! অর্থাৎ বাংলাদেশে রিক্সা চলে বিদ্যুতে। রিক্সায় এখন আগের মতো ক্রিং ক্রিং বাজে না স্প্রীং এর ঘন্টা। তার পরিবর্তে বিদ্যুতে বাজে পিপ পিপ হর্ন। পাল্টে গেছে রিক্সার নাম ও প্রকৃতি। নাম হয়েছে ডিজিটাল রিক্সা। চেহারা হয়েছে ফুটফুটে। আকৃতি হয়েছে কিছুটা বড়। প্রকৃতি হয়েছে আরামদায়ক ও গতিময়। কেউ জানে না, কে এদের নাম দিয়েছে ডিজিটাল রিক্সা ।

এসব ডিজিটাল রিক্সাগুলো চলে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিসি ব্যাটারির সাহায্যে। প্রতিটি রিক্সায় থাকে কম বেশি ৪৮ ভোল্টের ব্যাটারি এবং ১ হর্স পাওয়ারের ছোট্ট একটি মোটর। ব্যাটারি গুলোতে ৪/৬ ঘন্টা চার্জ দিয়ে রিক্সা চালানো যায় ১৬/১৮ ঘন্টা। প্রতিদিন আমাদের (অধিকাংশ আবাসিক মিটার যুক্ত) বিদ্যুৎতর লাইন থেকে বৈধ (?) অথবা অবৈধ ভাবে বিপুল বিদ্যুৎ টেনে নিয়ে চার্জ করা হচ্ছে ব্যাটারিগুলো। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি করা হলেও সন্তোষজনকভাবে কমানো যাচ্ছে না লোডসেডিং।

এখনো বৈধতা পায়নি এ রিক্সা :“চলছে আমার রিক্সা গাড়ি হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া”- এ গানের মতো ডিজিটাল রিক্সা এখন উড়ে উড়ে রাস্তায় চলে। এর ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে। দ্রুতগতি সম্পন্ন হওয়ার কারণে এর নিয়ন্ত্রণ অনেক চালকই নিতে পারে না। তাছাড়া এর ব্রেকও সাধারন রিক্সার মতো। অন্যদিকে বিদ্যুতের উপর বিশাল চাপ পড়ায় এ রিক্সাগুলোর এখনো বৈধতা দেয়নি সরকার। তবে ভোলার বিভিন্ন পৌরসভা বাৎসরিক ৫শত টাকা থেকে ৩হাজার টাকার লাইসেন্স ফি নিয়ে এ রিক্সাগুলোকে রাস্তায় চলতে দিয়েছে।

যে হারে বাড়ছে এই ডিজিটাল রিক্সা তাতে এখনই নেওয়া উচিত সঠিক পদক্ষেপ। অতি দ্রুত নেওয়া উচিত সরকারের হাতে এ’টির নিয়ন্ত্রণ। বিপুল পরিমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি সাপেক্ষে একটা নিয়ম-নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে লাইসেন্স ফিস আদায় করে দেওয়া যেতে পারে পরিবেশ, যাত্রী ও চালক বান্ধব এই যানবাহনটির বৈধতা।

অপরদিকে ভোলার ৭টি উপজেলায় ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে রিক্সায়। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় প্যাডেল চাপার রিক্সা এখন কমে যেতে শুরু করেছে ভোলা জেলায়ও। তার পরিবর্তে রিচার্জেবল ব্যাটারী চালিত রিক্সা এখন সকল চালকের হাতে হাতে। দ্রুতগামী এবং চালকের পরিশ্রম কম লাগায় এবং রিক্সার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দে গন্তব্যে পৌছার জন্য সবার আগে ব্যাটারী চালিত রিক্সা খুঁজচ্ছেন। হাতে টানা রিক্সার পরে এসেছিলো প্যাডেল চাপার রিক্সা। আর এখন এসেছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা। রিক্সাচালকদের হাড় ভাঙ্গা খাটুনির দিন শেষ হয়েছে। প্যাডেল ঘুরিয়ে আর চালাতে হয় না রিক্সা। চলছে রিচার্জেবল ব্যাটারিতে ডিজিটাল রিক্সা। নতুন রিক্সা দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যাওয়া রঙিন এই বাহনের আকার-আকৃতি একই আছে। রিক্সাগুলো মোবাইল সেটের মতো। সারারাত চার্জ দিলে দিনভর অনায়াসেই চলছে এটি।

রিক্সা খুব সহজলভ্য একটি বাহন। রাস্তা পাড়ি দেবার জন্য এই বাহনটি আমাদের অত্যন্ত প্রিয়। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে রিক্সা কতটা অপরিহার্য তা ভুক্তভোগিরা জানেন। জরুরি কাজ কিংবা আনন্দ ভ্রমনে রিক্সার বিকল্প নেই। বৃষ্টির দিনে কিংবা বসন্তের বিকেলে কার না ইচ্ছে করে রিক্সায় করে অজানা পথ পাড়ি দিতে ? ডিজিটাল রিক্সাই আমাদের গাড়ি। বিভিন্ন কাজে যোগ দিতে চাই সঠিক সময়ে। দ্রুত রোগী নিয়ে যেতে চাই নিকটবর্তী হাসপাতালে। অথচ এম্বুলেন্সের টাকা ব্যয় করার সাধ্য নেই অনেকের। তাই ডিজিটাল রিক্সাই এসবের সমাধান। এই রিক্সায় কিছুটা হলেও বৃদ্ধি করেছে আমাদের গতি, অগ্রগতি ও জীবনযাত্রার মান। শুধু যে যাত্রীদের সুবিধা বেড়েছে, তা নয়। বৈধ ও অবৈধ সুবিধা বেড়েছে চালক, মালিক এবং আরো অনেকেরই। চালকদের কমেছে শারীরিক কষ্ট আর সময়। আগের তুলনায় এখন অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে যেতে পারে বেশি দূর। রিক্সা চালাতে পারে সারা দিন। আয় করতে পারে বেশি টাকা। মালিকেরও বেড়েছে আয়। তাই শহর, গ্রাম-গঞ্জ সর্বস্থানে এই ডিজিটাল রিক্সার ছুটোছুটি।

তথ্য মতে, ভোলার ৭ উপজেলায় প্রায় ২০/২৫ হাজার রিক্সা রয়েছে। রোদ, বৃষ্টিতে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি হলেও এই ত্রিচক্রযান লাখো মানুষের দুমুঠো খাবার যোগানোর ভরসা। সেই রিক্সায় এসেছে আধুনিকতা। রিক্সা আবিস্কার হয় দুই চাকার। যার পেছন দিকে ২ চাকার উপর যাত্রী বসতো এবং সামনে ঠেলা গাড়ির মতো একজন হাত দিয়ে টেনে নিয়ে যেতো। এরপর যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ৩ চাকার প্যাডেল চালানো রিক্সা আবিস্কার হয়। আর বর্তমানে সেই রিক্সায় এসেছে পুরোপুরি ডিজিটালের ছোঁয়া। এখন রাস্তায় প্যাডেল চাপা রিক্সায় যাত্রী উঠতে চায়না। কারণ তাতে গন্তব্যে পোঁছতে সময় বেশি লাগে। তাই যাত্রীরা রিক্সায় চরার আগে ডিজিটাল রিক্সা খোঁজে। আর প্যাডেল চাপা রিক্সা চালকদের বসে থাকতেও দেখা যায়।

ডিজিটাল রিক্সার দামও হাতের নাগালে। নতুন মডেলের ডিজিটাল রিক্সার দাম প্রায় ৬০/ ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু এই রিক্সার গতি বর্তমানের চেয়ে চার গুণ। তাই রিক্সার দাম সহজেই পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে মন্তব্য এর উদ্ভাবকদের। কারণ এখন দিনে ১২ ঘন্টা শ্রম দিয়ে রিক্সাচালক যে আয় করে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আয় করতে পারে বৈদ্যুতিক রিক্সা চালিয়ে। আর তাতে রিক্সা এবং গ্যারেজ মালিকেরও লাভ হয় বেশি। ভোলার বিভিন্ন উপজেলার পথে ঘাটে রিক্সার মতো এখন কারো কারো বাইসাকেলেও রিচার্জেবল ব্যাটারী লাগাতে দেখা গেছে। ওইসব বাইসাইকেলে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে।

ভোলা বাজারে ডিজিটাল রিক্সার কয়েকটি দোকানে আলাপ কালে তার জানান, প্রতিটি রিক্সা ৬০/ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পূর্বে যারা প্যাডেল চাপা রিক্সা চালাতেন, তারা সেই রিক্সা বিক্রি করে ডিজিটাল রিক্সা ক্রয় করে চালাচ্ছে। এতে তাদের সময় ও শ্রম অনেক কম লাগছে।তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে এ রিক্সাগুলো আনেন। ঢাকা গাজিপুর, কমলাপুর ও চট্টগ্রামে ডিজিটাল রিক্সার কারখানা রয়েছে। তবে রিক্সাগুলো এসব স্থানে কেবল ফিটিং করা হয়। এর মূল মালামাল মোটর, বডি ইত্যাদি চায়না থেকে আসে। এতে সরকার বিশাল অংকের ট্র্যাক্স পাচ্ছে।

এদিকে ডিজিটাল রিক্সা চালক নুরে আলম জানান, আমি আগে প্যাডেল চাপা রিক্সায় যাত্রী টানতাম। ডিজিটাল রিক্সা আসার সাথে সাথে দেখা যায় আমার রিক্সায় যাত্রী উঠে না। তাই কি আর করবো, পুরনো রিক্সা বিক্রি করে কিনলাম ডিজিটাল রিক্সা। এখন যাত্রী পাই ভালো।

ভোলা ওয়ের্ষ্টাপাড়ার এলাকার রিক্সা চালক আলাউদ্দিন জানান, প্যাডেল চাপা রিক্সায় অনেক কষ্ট হয়। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি করে অনেক ক্লান্ত লাগে। তাই একটি ডিজিটাল রিক্সা কিনলাম। এতে সময় ও কষ্ট দুইটাই কম লাগে।

 

ঐতিহ্যবাহী রিক্সার সেকাল-একাল :রিক্সা প্রথম আবিস্কার হয় জাপানে প্রায় দেড়শ বছর আগে। ঠিক কে প্রথম রিক্সা বানাল আজও জানা যায়নি। মার্কিনিরা এই দাবী করে যে অ্যালবার্ট টোলম্যান নামে এক মার্কিন কামার নাকি মিশনারীদের জন্য ১৮৪৮ সালে প্রথম রিক্সা তৈরি করে। কোথায়? ম্যাসাচুসেটস-এ। জায়গাটা আমেরিকার বোস্টনে।

অন্যরা বলে জোনাথন স্কোবি নামে একজন মার্কিন মিশনারী ১৮৬৯ খ্রিস্টাবের দিকে রিক্সার উদ্ভাবন করেন জাপানে। স্কোবি থাকতেন জাপানের ইয়াকোহামায়। স্কোবির স্ত্রী ছিলেন চলৎশক্তিহীন, মানে ইনভ্যালিড। ইয়াকোহামায় রাস্তায় স্ত্রীর চলাচলের সুবিধার্থেই নাকি স্কোবি রিক্সা বানিয়ে ফেলেন! অন্যরা আবার বলে যে ইজুমি ইয়োসুকি রিক্সার আবিস্কারক। সালটা ১৮৬৯। ইজুমি ইয়োসুকি নাকি রেস্তোঁরা মালিক ছিলেন। বোঝা গেল ত্রিচক্রযান তৈরির ক্রেডিট সবাই নিতে চায়। তবে জাপানেই রিক্সার প্রথম উদ্ভাবন হয়েছে তা মানছেন অনেকেই। জাপানিরা অবশ্য তিনজন ব্যাক্তিকে রিক্সা আবিস্কারের কৃতিত্ব দেয়।

এরা হলেন- ইজুমি ইয়োসুকি, সুজুকি টোকুজিরো এবং তাকায়ামা কোসুকি। বলা হয় যে এরা সেই ১৮৬৮ সালেই রিক্সা আবিস্কার করেছেন। এর কিছুকাল আগে জাপানের টোকিয়ো শহরের রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চলতে শুরু করে। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে টোকিও সরকার এই তিনজনকে রিক্সা তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দেয়। রিক্সা চালানোর লাইসেন্স হিসেবে এই তিনজনের একজনের সীল লাগত অনুমতিপত্রে। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে টোকিয়ো শহরে সর্বমোট রিক্সার সংখ্যা ছিল ৪০,০০০। তখন থেকেই এটি জাপানি জনগনের গমনাগমনের প্রধান বাহন হয়ে ওঠে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে রিক্সার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায় জাপানে। যদিও জাপানে এখন রিক্সার প্রচলন নেই, সময়ের বহমানতায় জাপান থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে এ বাহন।

১৮৮০ সালের দিকে রিক্সা পৌঁছায় ইন্ডিয়া। প্রথমে সিমলায়; এরপর কুড়ি বছর পর কলকাতায়। অর্থাৎ, ১৯০০ সালের দিকে রিক্সা পৌঁছায় কলকাতায়। কলকাতায় সে সময় প্রচুর সংখ্যক চিনের মানুষ বাস করত চায়নাটাউনে। চিনেরাই প্রধানত রিক্সা ব্যবহার করত। তবে মালামাল টানার জন্য, যাত্রী বাওয়ার জন্য না।

এর ১৪ বছর পর তারা কলকাতার পৌরসভায় রিক্সায় প্যাসেঞ্জার নেওয়ার জন্য অনুমতি চাইল। অনুমতি মিলল। কেননা, শীঘ্রই ভূমি থেকে উৎখাত হয়ে শহরে আসা কৃষকের প্রথম পেশা হয়ে উঠছিল রিক্সা বাওয়া।

আমাদের দেশে রিক্সা কিভাবে এলো :

উনিশ ,ত্রিরিশ ও চল্লিশের দশকে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে রিক্সা হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। ১৯১৯। বার্মা থেকে রিক্সা প্রথম ঢোকে চট্টগ্রামে। মজার কথা হল- ঢাকায় কিন্তু রিক্সা চট্টগ্রাম থেকে আসেনি। এসেছে কলকাতা থেকে। নারায়নগঞ্জের ও ময়মনসিংহের নেত্রকোনার ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে সাইকেল রিক্সা আনে। ঢাকায় চলত ঘোড়ার গাড়ি, পালকি। আর ধোলাই খালসহ অন্যান্য খালে নৌকা। কাজেই নতুন ত্রিচক্রযানটি ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। প্রথম প্রথম ঢাকাবাসীরা সাইকেল রিক্সা চাপতে চায়নি।

সূত্রমতে ১৯৪১ সালে ঢাকায় রিক্সা ছিল মাত্র ৩৭ টি। আর ১৯৪৭ সালে ১৮১টি। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় রেজিঃ রিক্সার সংখ্যা ১,১২,৫৭২ টিতে দাঁড়ায়। পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ির মত ঐতিহ্যবাহী বাহনকে হটিয়ে দিয়ে জায়গা করে নেয় এই রিক্সা।

এ কথা সত্যি যে রিক্সা কেবল বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। কিন্তু এখন রিক্সার ব্যবহার সবচয়ে বেশি বাংলাদেশেই। বিশেষ করে ঢাকা এখন রিক্সার শহর হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে। গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকার ঐতিহ্য হিসেবে রিক্সাকে তুলে ধরা হয়।

নাগরিক জীবনের এই রিক্সাকে কখনো কখনো অভিশাপ বলে মনে হয়। কিন্তু আমাদের চলাচল কিংবা অল্পের দুরত্ব অতিক্রমের জন্য রিক্সার বিকল্প আর কোন যানবাহন নেই। এই কারণেই রিক্সার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আবার বাঙালি জীবনে রিক্সা বিনোদনের মাধ্যমও বটে।

বিদ্যুতের উপর চাপ পড়ায় বিকল্প চিন্তা :বাংলাদেশে রিক্সা একটি জনপ্রিয় বাহন। ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোটর সংযুক্ত হয়ে আধুনিকরূপ নিয়েছে চির পরিচিত রিক্সা, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় এবং শ্রম।

তবে আধুনিক হলেও কেউ কেউ এ রিক্সাকে মোটেই পরিবেশবান্ধব নয় বলে মন্তব্য করেছেন। কেননা ব্যাটারি চালিত হওয়ায় বিপুল পরিমাণ রিক্সা চার্জ করতে চাপ পড়ছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার ওপর। যার ফলশ্রুতিতে বেড়ে যাচ্ছে লোডশেডিং। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় তৈরি রিক্সা আরও একটু এগিয়ে নিতে চিন্তা করেছে ইউআইইউ’র একদল গবেষক।

আধুনিক এই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় তারা চিন্তা করেন রিক্সা কি ভাবে পরিবেশবান্ধব এবং ডিজিটালাইজড করা যায়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোলার পাওয়ারের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর আমাদের দেশেও সূর্যের আলো পাওয়া খুবই সহজ। তাই রিক্সায় সোলার প্যানেল ব্যাবহার করা একেবারেই সহজ। আর এ কথা মাথায় রেখেই তারা রিক্সাটিতে সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারিকে সংযুক্ত করেছে একটি মাইক্রো কন্ট্রোলার দিয়ে। যা ব্যাটারি কী পরিমাণ চার্জ হবে এবং কখন হবে তা নিয়ন্ত্রণ করবে। আবাসিক ব্যবহারের জন্য সোলার প্যানেল ২৩ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দক্ষিণমুখী রাখা হয়। রিক্সা সোজা করে রাখায় ২০০ ওয়াটের সোলার প্যানেলটি যাত্রী এবং চালকের মাথায় ছাদ হিসেবেও কাজ করবে। ৪৮ ভোল্টের চারটি ব্যাটারি একবার পুরোপুরি চার্জ করলে টানা ছয় ঘন্টা চলতে সক্ষম। চালক রিক্সা চালানোর ফাঁকে ফাঁকে ছয় ঘন্টা সূর্যের আলোতে থাকলেই ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হয়ে যাবে।
এছাড়াও রিক্সার দুর্ঘটনা কথা চিন্তা করে এই রিক্সার পেছনের চাকায় হাইড্রোলিক ব্রেক রাখার চিন্তা করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই