সারদা কেলেঙ্কারি: প্রথম দফার জেরা শেষ, ডেলো বৈঠক নিয়ে মুকুলকে প্রশ্ন সিবিআইয়ের

দু-দফায় সময় নেওয়ার পরে অবশেষে আজ সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সল্টলেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দফতরে যান তিনি। তার আগে সকালে তিনি যান নিজাম প্যালেসে। সেখান থেকে বেরোনর সময় তাঁকে ঘিরে ছিলেন অনুগামীরা। মুকুল রায় বেরোনর সময় শ্লোগানও দেন তাঁরা। সারদাকাণ্ডে সিবিআইয়ের তলব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে তিনি বলেন, সিবিআইকে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে সহযোগিতা করবেন তিনি।

মুকুল রায়কে প্রথমেই সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর রাজীব সিংহের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে জেরা শুরু হয়েছে। প্রথম দফার জেরা শেষ। এরপর তাঁকে দ্বিতীয় দফায় জেরা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। আরও জানা গিয়েছে, বেশ কিছু তথ্য মুকুল রায় দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে নতুন একটি প্রশ্ন তালিকা তৈরি করে তাঁকে দ্বিতীয় দফায় জেরা করা হবে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, এই প্রথম ডেলো-তে সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন ও রোজভ্যালির মালিক গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে মুকুলকে জিজ্ঞাসা করা হয়।

সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে মুকুলের হাজিরা নিয়ে যদিও জলঘোলা কম হয়নি। সারদা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চলতি মাসের ১২ তারিখে তাঁকে ডেকে পাঠায় সিবিআই। তিনি তখন দিল্লিতে ছিলেন। ডাক পেয়ে তিনি জানিয়ে দেন, দু’-এক দিন পর কলকাতা ফিরে তদন্তকারী সংস্থার দফতরে হাজিরা দেবেন। কথা মতো তিনি দু’দিন পর অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি কলকাতা ফিরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে তৃণমূল ভবন হয়ে সোজা চলে যান নবান্নে। সেখানে কিছু ক্ষণের বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসেন। আর তার পরেই আইনজীবীর মাধ্যমে সিবিআই-এর কাছে ১৫ দিনের সময় চেয়ে পাঠান। সিবিআই যদিও তাঁকে সাত দিনের মধ্যে দেখা করতে বলে। সেই মতো মুকুলবাবুর ২১ তারিখের মধ্যে সিজিও কমপ্লেক্সে যাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু, ১৯ জানুয়ারি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের তরফে একটি মামলা দায়ের হয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি চেয়ে আবেদন করে। সরকারের হয়ে মামলাটি করেন কংগ্রেস নেতা তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বল। পাশাপাশি, অন্য একটি মামলায় শীর্ষ আদালতে একই আবেদন করেন তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মহুয়া মৈত্র। বিজেপি-র বিরুদ্ধে সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার অভিযোগও আদালতে জানায় তৃণমূল। দু’টি মামলার শুনানির দিন ঠিক হয় ২২ জানুয়ারি। কিন্তু, বিচারপতি টি এস ঠাকুর ও বিচারপতি সি নাগাপ্পনের যে বেঞ্চে ওই শুনানি হওয়ার কথা ছিল বিচারপতিদের এক জন অসুস্থ থাকায় তা হয়নি। ২৭ তারিখ ওই শুনানি হতে পারে বলে জানা যায়। এর পরই সিবিআইকে ই-মেলে মুকুলবাবু জানিয়ে দেন, প্রজাতন্ত্র দিবস পর্যন্ত তাঁর ব্যস্ততা রয়েছে। ২৭ তারিখ ফিরবেন কলকাতায়। এর পরে উভয় পক্ষের সুবিধে অনুযায়ী ২৮ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে কোনও এক দিন তিনি সিবিআই দফতরে যাবেন। সিবিআই-ও ২৭ তারিখের পরই আসতে বলে মুকুলবাবুকে।

মুকুলবাবু সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার আগে যাতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দু’টির শুনানি হয় সেই আশায় ছিল তৃণমূল। কিন্তু, ২৭ তারিখ শেষ মুহূর্তে শীর্ষ আদালতের আধিকারিকরা জানিয়ে দেন বিচারপতিরা কলেজিয়াম বৈঠকে ব্যস্ত থাকার কারণে শুনানি হবে না। কবে শুনানি হবে সে বিষয়েও কিছু জানানো হয় না নিশ্চিত করে। এর পরই ২৮ জানুয়ারি কলকাতা ফিরে আসেন মুকুলবাবু। ওই দিন বিমানবন্দরে নেমেই তিনি জানিয়ে দেন, সারদা-কাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের দায়ের করা মামলার শুনানি যবেই হোক না কেন, সিবিআই-এর কাছে তিনি নির্ধারিত দিনেই হাজিরা দেবেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি ৩০ তারিখ নির্ধারিত সময়ে তদন্তকারী সংস্থার দফতরে যাব।”

এর আগে এই মামলায় বেশ কয়েক জন ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী-সাংসদকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। গত ১২ ডিসেম্বর রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে প্রথম দিনেই গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ফৌজদারি কার্যবিধির যে ১৬০ ধারায় নোটিস জারি করে মন্ত্রী মদনবাবুকে ডেকে পাঠানা হয়েছিল, মুকুলবাবুকেও ওই একই ধারায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কে রয়েছে শাসক দল।

 



মন্তব্য চালু নেই