সাফল্য না আসলেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চায় আওয়ামী লীগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দফা পিছিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সফরসূচি সামনে চলে আসায়, দলে এবং দলের বাইরে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে কী পাবে বাংলাদেশ, মূলত দলের বাইরে এটাই আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে এই সফরকে পাওয়া না পাওয়া, বা সফলতা-ব্যর্থতা দিয়ে বিচার করতে চায় না আওয়ামী লীগ। বরং নানা কারণে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার ভারত সফরকে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। সাফল্য না আসলেও এ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চায় আ.লীগ। দলটির নীতি-নির্ধারকরা এমন আভাস দিয়েছেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

তারা বলছেন,ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সাফল্য আর ব্যর্থতার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর আটকে থাকবে-এটা তারা মনে করেন না। সফর নিশ্চয়ই হবে, এর মধ্যদিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়ে ওঠবে। নীতি-নির্ধারণী মহলটি আরও মনে করেন, দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আরেক দেশের সরকার প্রধানের বৈঠকে অর্জন থাকেই। কোনও না কোনও দিক থেকে অর্জন থাকে।আর কাঙ্ক্ষিত বড় অর্জন পেতে হলে এই সফর জরুরি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুই দেশের জন্যেই এ সফর গুরুত্বপূর্ণ। তাই সফরের দিনক্ষণ পরিবর্তন হলেও ভারতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ তিনি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ একে অপরের অকৃত্রিম বন্ধু। আবার উভয়ে উভয়ের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সেদিক থেকে ভারত সফরের গুরুত্ব দুই দেশের কাছে আলাদা।’

অপর সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসাবে ভারত সফর করবেন। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব,কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। ফলে এ সফরে আওয়ামী লীগও আগ্রহী।’

জানতে চাইলে কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘আমার জানা মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাবেন । সঙ্গত কারণে দুই দেশের সদিচ্ছায় এই সফর দুই দফা পিছিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, সফর হবে না।এ সফর উভয় দেশের জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ।’

দেখা গেছে,স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর। এ সফর হবে কি হবে না, এই নিয়েও সংশয় কাটেনি এখনও পর্যন্ত। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শংকর দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন গত বৃহস্পতিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। জানাগেছে, সফর নিয়েই শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জয়শংকর। এদিকে উভয়ের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এপ্রিলে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর করার কথা ছিল ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর। অনিবার্য কারণে ওই সফর স্থগিত হয়।এরপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর এক সৌজন্য বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভারত সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু এবারও অনিবার্য কারণে এই সফর স্থগিত করা হয়।

ভারত সফরে বাংলাদেশের লক্ষ্য তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা।আর দিল্লির চাওয়া নিরাপত্তা চুক্তি। এজন্য তারা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত বছর ঢাকা সফরের সময় এই চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কী পেতে চায় সরকার, এমন এক প্রশ্নে সভাপতি মণ্ডলীর দুই সদস্য বলেন,এবারের সফরে পানি বন্টন ও অভিন্ন অববাহিকা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হবে। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সফরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশের চাওয়া একটাই, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য সময় চেয়েছিলেন। পানি বন্টনের মধ্যে তিস্তা চুক্তি ও পানি সংরক্ষণের জন্য গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পের পক্ষে বাংলাদেশ এরইমধ্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ভারতকে সরবরাহ করেছে। জানাগেছে, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি যৌথ টেকনিক্যাল টিম গঠন করার বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। ঢাকা চায় শিগগিরই তারা কাজ শুরু করুক।



মন্তব্য চালু নেই