সাধারণ জবা ফুল দিয়েই করুন রোগ নিরাময় ও সৌন্দর্যচর্চা

ফুলের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায় এবং আপনি সুখ অনুভব করেন। স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য কিছু ফুল খেতেও পারেন! কিছু ফুল আছে ভক্ষণযোগ্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এমনই একটি ফুল হচ্ছে জবা ফুল। বিভিন্ন রোগের প্রতিকারক হিসেবে এবং চুলের যত্নে জবা ফুল চমৎকার কাজ করে। জবা একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় ফুল। গোলাপী, সাদা, লাল, হলুদ ইত্যাদি নানা বর্ণের জবা ফুল পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল জবা আয়ুর্বেদ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে জবা ফুলের কিছু ব্যবহার জেনে নেই আসুন।

১। ডায়াবেটিস নিরাময়ে কাজ করে
বায়ো কেমিক্যাল ও বায়ো ফিজিক্যাল রিসার্চ কমিউনিকেশনস এ প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, জবা ফুল থেকে তৈরি উপাদান ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জবা ফুলে থাকে ফেরুলিক এসিড যা এক ধরণের পলিফেনল এবং এটি ডায়াবেটিসের জন্য চিকিৎসা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

২। মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI) প্রতিরোধ করে
এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিন এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, জবা ফুলের জীবাণুনাশক ও ছত্রাকনাশক উপাদান কেন্ডিডা অ্যাল্বিকান্স এর বিরুদ্ধে কাজ করে। জবা ফুলের পুষ্টি উপাদান মূত্রনালীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং ইউটিআই থেকে মুক্তি দেয়। জবাফুলের চায়ে ফ্লাভনয়েড থাকে যা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে।

৩। জ্বর নিয়ন্ত্রণ করে
ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হলে কিছু জবা ফুলের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চা তৈরি করে পান করুন। দ্যা ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মাসিউটিক্যাল এন্ড বায়ো মেডিক্যাল সাইন্স এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা যায় যে, জ্বরের সময় জবাফুলের চা শীতলীকারক হিসেবে কাজ করে। জবার প্রদাহ রোধী উপাদান মিউকাস পর্দার প্রদাহ কমতে সাহায্য করে।

৪। চুল পড়ে যাওয়া কমায়
চুল পড়া রোধে জবা ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করা খুবই প্রাচীন প্রতিকার। জবা ফুলের তেল চুলের গোড়া শক্ত করে কারণ এতে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। এই তেল আস্তে আস্তে মাথার তালুতে মালিশ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ও মাথার ত্বক পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে।

৫। অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে
এশিয়ান জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজিক্যাল সাইন্স এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, জবা চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে ধীর করতে পারে। কিছু জবা ফুল পানিতে দিয়ে ২০ মিনিট ফুটানোর পর ঠাণ্ডা করে নিন। জবাফুলকে পেস্ট করে নিয়ে মাথার তালুতে ও চুলে লাগান এবং ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করুন এবং জবার তেল অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে।

৬। ব্যথা কমায়
শরীরের ব্যথা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে জবা ফুল। এজন্য ৫টি লাল জবার পাতা ও ৫টি পাপড়ি নিয়ে পানিতে দিয়ে ৩-৫ মিনিট ফুটানোর পর মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। আধা ঘন্টা পরে এটি পান করুন। ২১ দিন পর্যন্ত এই মিশ্রণটি পান করলে শরীরের ব্যথা কমবে।

৭। ফেসপ্যাক হিসেবে
লাল জবার পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। প্রতিদিন পানি বা দুধ বা ফলের রসের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মুখ পরিষ্কার হয়, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখার আবির্ভাব রোধ করে।

৮। শুষ্ক ত্বকের নিরাময়ে
নারিকেল তেল বা তিলের তেলের সাথে জবার পাপড়ি দিয়ে তাপ দিন। তারপর এটি ঠান্ডা হলে শুষ্ক ত্বকে লাগান। এটি শুষ্ক ত্বককে নিরাময় করবে এবং যেকোন ধরণের ফাটাও ভালো করবে।

আরো কিছু উপকারিতা :
· খুশকির বিরুদ্ধে জবা ভালো কাজ করে।
· কিছু কিছু দেশে জুতো পালিশের কাজে ব্যবহার করা হয় জবা ফুল।
· শিশুদের শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
· জবা ফুল ও এর পাতা পুড়িয়ে আই শ্যাডো হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
· যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তাদের রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে জবা।
· জবা ফুল ব্যবহারের পূর্বে পরিষ্কার করে নিন এবং ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। কীটনাশক ও সার মুক্ত কিনা জেনে নিন।
· শরীরের লৌহের ঘাটতি কমায় লাল জবার পাপড়ি পানিতে সিদ্ধ করে পান করলে।
· সাদা জবার পাপড়ি সিদ্ধ করে পান করলে বিষণ্ণতা দূর হয়।



মন্তব্য চালু নেই