সাত দিনে মাটিবিহীন ঘাস উৎপাদন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রতিদিনই নানা অসম্ভব বিষয়কে সম্ভব করে তুলছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠছে সহজ থেকে সহজতর। তেমনি চমকপ্রদ একটি প্রযুক্তি মাটিবিহীন ঘাস উৎপাদন।

গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য উন্নত দেশগুলোতে আগে থেকেই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদিত হয়ে আসলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ এই পদ্ধতিতে মাটিবিহীন ঘাস উৎপাদন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মাটির সংস্পর্শ ছাড়াই উৎপাদিত হচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবুজ ঘাস। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে গম, ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন দানাদার বীজ। এক কেজি বীজ থেকে মাত্র সাত অথবা আট দিনে সাত কেজি তাজা ঘাস উৎপাদন সম্ভব।

কোনো দুগ্ধ খামারিরা বাণিজ্যিকভাবে এই উৎপাদন ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাইলে তাদেরকে কারিগরি বিষয়ে সহযোগিতা করবে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ।

আগ্রহী খামারিদের মাটিবিহীন ঘাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবে জাতীয় বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) আয়োজন করা হয় মাটিবিহীন ঘাস উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিশেষ প্রদর্শনীর। এখানে মাটি ছাড়া (হাইড্রোপনিক) ঘাস উৎপাদন প্রযুক্তির আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়।

বিসিএসআইআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও হাইড্রোপনিক প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, সীমিত জমিতে বড় বাণিজ্যিক খামারের ঘাসের চাহিদা পূরণ কঠিন হয়ে পড়ে। সে হিসাবে স্বল্প জমিতে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খামারের জন্য ঘাস উৎপাদন অনেক বেশি লাভজনক। তিনি বলেন, খামারিদের কেউ যদি এই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে চান, তবে বিসিএসআইআর কারিগরি সহযোগিতা দেবে।

কেমন খরচ পড়বে
৬০টি গরুর ফোডার সিস্টেমে ত্রিশ বছরের জন্য এককালীন মেশিন খরচ পড়বে আট লাখ টাকা। মেশিন বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। প্রতিদিন ৫৮ কেজি বীজ ব্যবহার করে ৪০৬ কেজি ঘাস উৎপাদন করা যাবে। যা ৬০টি গরুর প্রতিদিনের খাবার। প্রতি গরুর জন্য ৭ কেজি ঘাস বরাদ্দ। সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করলে ৬০টি গরু দৈনিক ৭৮০ লিটার দুধ দিবে। অর্ধেক হিসেবে খরচ পড়বে ৪ লাখ টাকা।

মাটিবিহীন ঘাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির মাটিবিহীন ঘাস উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ, কেমিক্যাল মুক্ত, মোল্ড ও ছত্রাক মুক্ত, কৃমি ও অন্যান্য পরজীবী মুক্ত। এই ঘাস গরুর মাংসের জন্য- বডি ওয়েটের ২% ঘাস খাওয়াতে হবে। তিন কেজি ঘাস খাওয়ালে দুধের পরিমান এক কেজি বাড়ে। বছরে ৩৬৫ দিনই ঘাস উৎপাদন করা যাবে।



মন্তব্য চালু নেই