সাত খুনের জন্য র‌্যাবকে দায়ী করা অন্যায়: বেনজীর

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সঙ্গে স্থানীয় র‌্যাবের সেই সময়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা আদালতে প্রমাণ হলেও বাহিনীটির প্রধান বেনজীর আহমেদ দাবি করেছেন, এই খুনের দায় তার বাহিনীর নয়। তিনি বলেন, অভিযোগ উঠার পরই সন্দেহভাজনদেরকে র‌্যাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাবই। এই অবস্থায় র‌্যাবকে দায়ী করা হলে অন্যায় করা হবে।

শুক্রবার দুপুরে রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে র‌্যাব-১৩ এর প্রধান কার্যালয়ে দুঃস্থদের মধ্যে কম্বল বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন র‌্যাব মহাপরিচালক।

সাত খুনের আড়াই বছরেরও বেশি সময় পর গত সোমবার ঘটনায় এই মামলায় ৩৬ জনের সাজা হয়েছে তাদের ২৫ জনই র‌্যাবের কর্মকর্তা বা সদস্য। ফাঁসি হওয়া ২৬ জনের মধ্যে র‌্যাবের কর্মকর্তা ও সদস্য আছেন ১২ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক ও আরও দুই শীর্ষ কর্মকর্তাও। এ নিয়ে গোটা বাহিনীটিই সমালোচনার মুখে রয়েছে। এর মধ্যেই র‌্যাব প্রধান এমন বক্তব্য দিলেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে প্রধান সড়ক থেকে সিটি করপোরেশনের সে সময়ের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল এবং ১ মে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।

পরে তদন্তে দেখা যায়, র‌্যাব-১১ এর সে সময়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রধান আসামি নুর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সাত জনকে অপহরণ করে। এরপর সবাইকে খুন করে পেট কেটে ইটের বস্তা বেঁধে শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে মরদেহগুলো ভেসে উঠে।

সাত খুনের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই র‌্যাবের সংস্কারের দাবি উঠে। রায়ের পর আবারও সামনে আসে সে দাবি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আদালতের আদেশের পর বলেছেন, এই রায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের জন্য একটি বার্তা।

সাত খুন মামলার রায়ের পর শুক্রবারই প্রথম এ নিয়ে কথা বললেন বাহিনীটির মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই দায় র‌্যাবের নয়। এর দায় দায়িত্ব তাদের, যারা অপরাধ করেছেন। কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় কখনই র‌্যাব গ্রহণ করতে পাওে না। তিনি বলেন কিছু র‌্যাব সদস্য অন্যায় করেছে এ দায় তাদের। তবে এতে র‌্যাবের ভবিমুর্তি নষ্ট হয়েছে বলে ধরে মনে করা র‌্যাবের প্রতি অবিচার করা হবে।

বেনজীর বলেন, ‘ওই ঘটনার পর প্রত্যেককে র‌্যাব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। র‌্যাবই ঘটনার পর পরেই তদন্ত করে তাদের দায়ী করেছে দোষি সাব্যস্ত করেছে। শুধু তাই নয়, এর পরেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে কিন্তু র‌্যাব কোন অন্যায়কারীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়নি।’

র‌্যাব প্রধান বলেন, ‘র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর গত ১৩ বছরে যে সব র‌্যাব সদস্য অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত শত শত সদস্যকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মাতৃবাহিনীতে পাঠানো হয়েছে। অনেককে লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছে।’

বেনজীর বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যদের কোন অন্যায় সহ্য করা হবে না। যে কোন মূল্যে র‌্যাবের ক্লিন ইমেজ রক্ষার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘র‌্যাব যেভাবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছে তাতে ইতিমধ্যে দেশের জনগণের অকুন্ঠ ভালবাসা অর্জন করেছে।’

র‌্যাব মহাপরিচালক জানান, জঙ্গি তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে র‌্যাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের ১৪টি জেলায় গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে অনুষ্ঠানে মোট সাত হাজার দুঃস্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরন করা হয়। এ সময় র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই