সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু’র জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত

বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যদিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা কালেক্টর চত্বর থেকে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে এক বর্নাঢ্য র‌্যালী বের হয়। র‌্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সদর ২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, সিভিল সার্জন ডাঃ সালেহ আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বরাদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহসিন আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লস্কার তাজুল ইসলাম, জেলা জজ কোর্টের পিপি এড. ওসমান গণি প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তিনি ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে এ জাতিকে মুক্ত করতে নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে অগ্রসর হন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন, ‘৫৮’র আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও ‘৬২’র শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।

আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন। ‘৬৯’র ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। ‘৭০’র নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। ‘৭১’র মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদে দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ ভাষণে সেদিন ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশভূমিতে ফিরে স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।

১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে উজ্জীবিত করতে হবে। শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা শিশুদের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে না পারলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন তাহলে বাংলাদেশ নামে এদেশটির সৃষ্টি হতো না। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তার সেই চেতনা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। তাই সবাইকে তার চেতনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

এসময় বক্তারা জাতির পিতার যেসব হত্যাকারী বিদেশের মাটিতে পালিয়ে আছে তাদের আইনের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।” এসময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজ, এনডিসি রবিউল হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ আব্দুল সাদী, জেলা শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মুহসীন আলী, ছফুরননেসা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুন্নাহার, সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল হক, জেলা তথ্য অফিসার সিরাজুল ইসলাম মল্লিক, জেলা সমবায় অফিসার মাসুদা পারভীন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তারাময়ী মুখার্জী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আবু জাফর রানা মোঃ আসিফ ইকবাল, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য সচিব মুশফিকুর রহমান মিল্টন, খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার মোঃ আবু সাঈদ ও শফিউল ইসলাম খান।



মন্তব্য চালু নেই