সাতক্ষীরায় উপাআনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের নামে চলছে হরিলুট

মোঃ বদরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলার ৭টি উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্পের ৪র্থ ফেজের (সাইকেল)’র মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও ফলাফল কাগজে-কলমে শতভাগ বাস্তবে শুনের কোঠায়। কথিত রিসোর্স পার্সন (অডিটর), টইনার (প্রশিক্ষক), কর্মকর্তা নিয়োগ ও সাসের অন্য প্রকল্পের স্টাফদের দিয়ে মাস্টার রোলে ভুয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। ফলে সরকারের ২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শিক্ষা প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যে ভেস্তে যেতে বসেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের এডিপি’র অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ১১ থেকে ৪৫ বছরের মহিলা ও পুরুষের জন্য ‘মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-৪ কার্যক্রম’ বাস্তবায়নে সাস সংস্থা অনুমতি পায়। ৪ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

প্রকল্পের শুরুতেই ২৩৮টি কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের জন্য বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও অখ্যাত একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নিম্নমানের ঘর নির্মাণ ও উপকরণ সামগ্রী অফিস রেজুরেশনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন সাসের কর্তা ব্যক্তিরা।

সরকারের মহাতী এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া মহিলা ও পুরুষের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি তাদের কারিগরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া। এতে প্রতিদিন বিকেল ও সন্ধ্যায় দুটি শিফটে ৩০ জন করে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা রয়েছে। এতে প্রতি বছর ১৪ হাজার ২৮০ শিক্ষার্থী হিসেবে ৪ বছরে ৫৭ হাজার ১২০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে। প্রত্যেক সাইকেল শিক্ষার্থীকে ৯ মাসের কোর্স সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে না।

প্রতিটি কেন্দ্রে সপ্তাহে ৪ দিন প্রশিক্ষণ ও ২ দিন মৌলিক শিক্ষার ক্লাস হওয়ার কথা। এজন্যে প্রতি কেন্দ্রে দু’জন করে প্রশিক্ষক ও দু’জন করে সহায়ক-সহায়িকা রয়েছে। এদের মধ্যে প্রশিক্ষকরা ক্লাসপ্রতি ২শ’ টাকা এবং সহায়ক-সহায়িকারা পাবেন প্রায় ১৭৫ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে একেকজন প্রশিক্ষক ৩ হাজার ২শ’ এবং সহায়ক-সহায়িকারা পাবেন ১৩ থেকে ১৪শ’ টাকা।

অথচ প্রশিক্ষকদের প্রতি মাসে দেয়া হচ্ছে ১৬শ’ টাকা এবং সহায়ক-সহায়িকাদের ১১ থেকে ১৩শ’ টাকা। এতে প্রশিক্ষক ও সহায়ক-সহায়িকাদের দেখিয়ে প্রতি মাসে লুটপাট করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতি শিফটে প্রশিক্ষণ উপকরণ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭শ’ টাকা। যা দিয়ে নামমাত্র উপকরণ কিনে সর্বস্ব লুটপাট করা হয়েছে। আবার অনেক কেন্দ্রে আদৌ উপকরণ দেয়া হয়নি। আর দেয়া হলেও তা এক শিফটের জন্য।

এ বিষয়ে তালার ভায়ড়া, বারুইহাটি, আটারই, নলতা, ধুলান্ডা গ্রামের কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোন শিক্ষার্থী নেই, নেই কোন প্রশিক্ষক ও সয়ায়ক-সহায়িকা, পড়ে আছে পরিত্যক্ত ঘর। স্থানীয় কয়েক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানায়, কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে স্যারেরা। তারা আরও জানায়, আসলে কাগজে-কলমে ছাত্রছাত্রী দেখালেও কোনদিন কেন্দ্রে ১০-১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী আসে না।



মন্তব্য চালু নেই