সাতক্ষীরার আম যাবে ইউরোপে, বাগানে চলছে নিবিড় পরিচর্যা

মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগান। কোথাও কোথাও মুকুল থেকে বেড়িয়েছে গুটি। চলছে নিবিড় পরিচর্যা। সবকিছু ঠিক থাকলে এবারও সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়া, মল্লিকা যাবে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

তাই কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিকরা।

বিগত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমের মুকুল। তবে তাতে রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে না বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমের একাধিক বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাগানেই পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন একাধিক কর্মচারী। কেউ স্প্রে করছেন, কেউ বা ব্যস্ত গাছের দুর্বল ডাল ছেঁটে দিতে। শুধু বাগান মালিক বা কর্মচারী নন, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে সার্বক্ষণিক তদারকিতে ব্যস্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম বেশ সুস্বাদু। একই কারণে অন্যান্য জেলার তুলনায় এ জেলার আম পাকে অনেক আগে। তাই এর কদর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও বেড়েছে। গত মৌসুমে জেলার তিন হাজার ৬২১ হেক্টর জমিতে ৫০ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাতক্ষীরা থেকে ২৩ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৮২৫ হেক্টর জমি আম উৎপাদনের আওতায় এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি না হলে এ মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানির পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ব্যাপক কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তিন শতাধিক আম চাষিকে। আমকে কোয়ারেন্টাইন পেস্ট মাছি পোকার (ফ্রুট ফ্লাই) উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে কৃষক পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ফেরোমন ফাঁদ।

সাতক্ষীরা পৌরসভার আলিয়া মাদ্রাসা এলাকার বাগান মালিক আবু জাফর সিদ্দিকী জানান, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে আমের মুকুলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এখন চলছে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা। যে পরিমাণ গুটি হয়েছে, তা থাকলেও ভালো উৎপাদন হবে। আম রপ্তানি করতে পারবো।

সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার বাগান মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে সব সময় বাগানের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। বাগানে যেন গরু-ছাগল না ঢোকে, কোনো দুর্গন্ধ না থাকে- এসব বিষয় বিদেশিরা খুব খেয়াল করে। কয়েকদিন পর গুটি একটু বড় হলে পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ঝুলানো হবে।

আম উৎপাদনে লাভ বেশি। এবার আট বিঘা জমির বাগান পরিপর্যায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। উৎপাদন ভালো হলে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রঘুজিৎ গুহ বলেন, এ বছর সাতক্ষীরায় আমের মুকুল ভালো হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে কিছু মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এ বছর কয়েকগুণ বেশি আম রপ্তানি হবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, প্রকৃতির আশীর্বাদে সাতক্ষীরায় আম পাকে সবার আগে। এ বিষয়টিকে কাজে লাগাতে রপ্তানিমুখি আম উৎপাদনে সাতক্ষীরার আম বাগানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। দেশি-বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়মিত সাতক্ষীরার বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করছেন। কৃষক পর্যায়ে ফেরোমন ফাঁদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আম রপ্তানির জন্য হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, আধুনিক আম সংগ্রহ সরঞ্জাম, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, ক্রেট, ওজন করার যন্ত্র ইত্যাদি এরই মধ্যে কৃষি কার্যালয়ে চলে এসেছে। আম পাকার পর রপ্তানি করার সময় এসব ব্যবহৃত হবে।



মন্তব্য চালু নেই