সাগরের হত্যাকারীদের বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা

তিন বছরেও শেষ হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যার বিচারকাজ। এ নিয়ে সাগরের জন্মস্থান পাবনা বেড়া উপজেলার ছোট নওগাঁ গ্রামে তার স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে।

সাংবাদিক সাগর সারোয়ারের জন্মস্থান পাবনার বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের ছোট নওগাঁ গ্রামের বাড়িতে আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানা গেছে।

২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজা বাজারে নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী।

সাগরের ফুফু সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘বেঁচে থাকতে সাগর যখন বাড়িতে এসে আমাদের সামনে দাঁড়াতো তখন খুশিতে বুকটা ভরে যেত। কিন্তু গত তিন বছর ধরে তার কোনো দেখা পাই না। তাকে হারিয়ে যে কী কষ্টে আমরা আছি তা বলে বোঝাতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘সাগর ও তার স্ত্রী রুনীর হত্যাকারী কারা, কি কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। তা জানতে পারলে মরেও শান্তি পেতাম।’

সাগর সারোয়ারের বড় চাচা হারুন অর রশিদ মণ্ডল বলেন, ‘ভাতিজার সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারাটা ভুলতে পারি না। আর কোনো দিনই তার দেখা পাব না। তাকে এখনো খুব মনে পড়ে।’

সাগরের চাচাতো ভাই জমশেদ আলম ও চাচাতো বোন রাহেলা খাতুনও এই প্রতিবেদকের কাছে তাদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানান।
জমশেদ আলম বলেন, ‘তিন বছর পার হয়ে গেলো ভাই-ভাবীকে হারিয়েছি। কোনো বিচার পাইনি। কখনো পাব কিনা, তাও জানি না। তাদের হারিয়ে আমাদের মাঝে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা হয়তো আর পূরণ হবে না।

চাচাতো বোন রাহেলা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ছোট্ট ভাতিজাকে একা করে যারা এভাবে আমার ভাই ও ভাবীকে হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার চাই।’এলাকাবাসীর কাছে খুবই ভদ্র ও ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাংবাদিক সাগর সারোয়ার। তাকে হারিয়ে গ্রামবাসীও ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন।

নওগাঁ গ্রামের আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘খুবই ভাল ছেলে ছিল সাগর। সে যখন বাড়িতে আসতো তখন গ্রামের মুরুব্বীদের খুব সম্মান করে কথা বলতো। মনে কোনো অহঙ্কার ছিল না। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। আমরা তার হত্যার বিচার দেখতে চাই।’
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা মামলার ধীরগতিতে হতাশ পাবনা জেলার গণমাধ্যমকর্মীরাও।

পাবনা টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির আহ্বায়ক রাজিউর রহমান রুমী বলেন, ‘শুধু সাগর-রুনী নয়, বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। প্রশাসন পারে না এমন কোনো কাজ নাই, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে দেশের উন্নয়নে সাহসী সাংবাদিকতা ধরে রাখতে সাগর-রুনী হত্যার বিচার হওয়া প্রয়োজন। হত্যাকারীদের দ্রুত খুঁজে বের করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

স্থানীয় সাংবাদিক ও গবেষক নরশে মধু বলেন, ‘সাগর-রুনী হত্যা সাধারণ হত্যা নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা। অপরাধীদের শাস্তির নিশ্চিত করা না গেলে আগামীতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিতে পড়বে।’



মন্তব্য চালু নেই